২৫শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
শুক্রবার | রাত ৪:২৪
ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত
খবরটি শেয়ার করুন:

প্রকৃতি আজ দক্ষিণা দুয়ার খুলে দিয়েছে। সে দুয়ারে বইছে ফাগুনের হাওয়া। বসন্তের আগমনে কোকিল গাইছে গান। ভ্রমরও করছে খেলা। গাছে গাছে পলাশ আর শিমুলের মেলা। আজ পহেলা ফাল্গুন।

ফাল্গুনের হাত ধরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতে প্রকৃতির আজ এতো বর্ণিল সাজ। বসন্তের এই আগমনে প্রকৃতির সাথে তরুণ হৃদয়েও লেগেছে দোলা। সকল কুসংস্কারকে পেছনে ফেলে, বিভেদ ভুলে, নতুন কিছুর প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা নিয়ে বসন্তের উপস্থিতি। তাই কবির ভাষায়- ‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত’।

বসন্তের প্রথম সকালে বাসন্তী রং শাড়ি, কপালে টিপ, হাতে চুড়ি, পায়ে নূপুর, খোঁপায় ফুল জড়িয়ে বেরিয়ে পড়বে তরুণীর দল। পাঞ্জাবি, ফতুয়া পরা ছেলেরাও সঙ্গী হবে বসন্তবরণের বিভিন্ন আয়োজনে।

কচি পাতায় আলোর নাচনের মতোই বাঙালির মনেও লাগবে দোলা। হৃদয় হবে উচাটন। পাতার আড়ালে আবডালে লুকিয়ে থাকা বসন্তের দূত কোকিলের মধুর কুহু কুহু ডাক। কবি মনে জেগে উঠবে নতুন নতুন সব পঙক্তি। বসন্ত বাতাস দোলা দিবে সবার মনে; সাজবে বাসন্তি সাজে। বসন্তরাণীর আগমনে মাতাল হবে সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশ। আগুন রাঙা এ ফাগুনে প্রকৃতিতেই শুধু উচ্ছ্বাসের রঙ ছড়ায় না, রঙ ছড়ায় প্রতিটি তরুণ প্রাণে। প্রাণের টানে, আর প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে মন হয়ে ওঠে উত্তাল, বাঁধনহারা। বসন্ত নিয়ে যেন তরুণদের উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। কোকিলের কুহুতান, দখিনা হাওয়া, ঝরা পাতার শুকনো নুপুরের নিক্কন, প্রকৃতির মিলন সবই এ বসন্তেই। বসন্ত মানেই পূর্ণতা। বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব। বসন্ত মানেই একে অপরের হাত ধরে হাঁটা। মিলনের এ ঋতু বাসন্তী রঙে সাজায় মনকে, মানুষকে করে আনমনা।

এমনও মধুর দিনে এমন শঙ্কাও কি জাগে না অধীর প্রতিক্ষায় থাকা কোন মনে- ‘সে কি আমায় নেবে চিনে/ এই নব ফাল্গুনের দিনে- জানিনে…?’ এদিনেই অসংখ্য রমনী বাসন্তী রঙে রাঙিয়ে তোলে রাজধানীর রাজপথ, পার্ক, বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুশোভিত সবুজ চত্বরসহ পুরো নগরী। এ সময়েই শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজে ওঠে প্রকৃতি। গাছে গাছে নতুন পাতা, স্নিগ্ধ সবুজ কচি পাতার ধীর গতিতে বাতাসের সঙ্গে বয়ে চলা জানান দেয় নতুন কিছুর। শীতে খোলসে ঢুকে থাকা বন-বনানী অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠে। পলাশ, শিমুল গাছে লাগে আগুন রঙের খেলা। প্রকৃতিতে চলে মধুর বসন্তে সাজ সাজ রব।

২০ বছর আগে বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়। সেই থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্যাপন পরিষদ বসন্ত উৎসব আয়োজন করে আসছে। এ বছরের বসন্ত উৎসবের অনুষ্ঠানমালায় কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। বসন্তের নাচ, গান ও কবিতার পাশাপাশি প্রতিবাদী নাচ, গান ও আবৃত্তিরও আয়োজন করেছে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ।

আজ ঋতুরাজ বসন্তকে স্বাগত জানাতে রাজধানীতে রয়েছে নানা আয়োজন। কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ বসন্ত উৎসব আয়োজন করেছে এবারও। সকাল ৭টায় চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় যন্ত্রসংগীতের মূর্ছনার মধ্য দিয়ে শুরু হবে বসন্ত আবাহন। চলবে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। সেখানেই আবার বিকাল ৪টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে বসন্তবন্দনার উৎসব।

error: দুঃখিত!