২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সোমবার | বিকাল ৫:২৮
‘প্রশাসন-সরকারি দলের দ্বিমুখী জুলুমে’ সেনা দাবি বিএনপির
খবরটি শেয়ার করুন:

পৌরসভা নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় রাখা ও নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগে কেন্দ্রগুলোতে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। এছাড়া বিএনপির প্রার্থীরা প্রশাসন ও সরকারি দলের দ্বিমুখী জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে দলটি।

নির্বাচন সচিবালয়ে মঙ্গলবার বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দিন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বিএনপিরর স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত দুই সপ্তাহে দেশে হিংসাত্মক কার্যক্রম বেড়েছে। তাই প্রতিটি ভোটার যেন নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন সেজন্য আমরা ভোট কেন্দ্রগুলোতে সেনা মোতায়েনের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছি।’

ড মঈন খান বলেন, ‘বিগত ৮ ডিসেম্বর আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে ইসির সঙ্গে আলোচনা করে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেদিন থেকে আজ (মঙ্গলবার) পর্যন্ত দুই সপ্তাহ পার হয়েছে। এর মধ্যে অনেক কিছু ডেভোলেপমেন্ট হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে যেসব পযবেক্ষণ করেছি- তাতে দেখেছি, সংঘাত, হানাহানি, মারামারি ও দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রার্থীদের ওপর জুলুম-অত্যাচার দুদিক থেকে আসছে। একটি প্রশাসন যন্ত্র থেকে, আরেকটি আসছে সরকারি দল থেকে।’

তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিএনপির প্রার্থীর উপর অত্যাচার, পুলিশি হয়রানী, জোরপূর্বক প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে ইসিতে অভিযোগও করা হয়েছে। এছাড়া বিএনপির একাধিক প্রার্থীও লিখিত অভিযোগ করেছেন।

এছাড়া সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও ইসি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও বিএনপির পক্ষ থেকে একাধিকবার অভিযোগ করা হয়েছে।

মঈন খান বলেন, ‘সব কিছু বিবেচনা করলে, আমরা যে বিষয়টি উদ্বিগ্ন, সেটি হল লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। বিরোধী দল লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে নির্বাচন করতে পারবে কিনা- সেটিই আশঙ্কার বিষয়।’

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে ব্যক্তি পর্যায়ে হত। এবার মেয়র নির্বাচন হচ্ছে দলীয় পদ্ধতিতে। এ নির্বাচন নতুন একটি ডাইমেশন। সেটা হল- ব্যক্তির ইচ্ছা, জনপ্রিয়তা, সফলতা ও ব্যর্থতার বিষয় নয়। ‌এখানে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা রয়েছে, সেগুলোই প্রতিফলিত হচ্ছে। সেই কারণে দ্বন্দ্ব, আক্রোশ ও হিংসাত্মক কাযক্রম দু’সপ্তাহের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে সেনা মোতায়নের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। সেটি হচ্ছে -প্রত্যেকটি ভোটার যেন নির্ভয়ে, নির্শঙ্কায় ভোট দিতে পারেন।’

‘সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকলে ভোটার নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবেন।’ যোগ করেন তিনি।

সিইসি আগেই সাংবাদিকদের জানিছেন সেনাবাহিনী মেতোয়েনের কোনো পরিকল্পনা নেই- সেনাবাহিনী মোতায়েন না করা হলে বিএনপির অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটু আগেই ব্যাখ্যা করেছি, সেদিন থেকে আজকের পরিস্থিতি অনেক পরির্বতন হয়েছে। দলীয় রাজনীতির কারণে স্টেক (ঝুঁকি) অনেক বেশি, অনেক হাই। হাই স্টেকের কারণে পত্রিকায় রিপোর্টও হয়েছে।’

তিনি বলেন, গতকাল ও আজকের দুটি ঘটনা ঘটেছে- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গাড়িতে হামলা করা হয়েছে। এছাড়া সাবেক চিফ হুইফের উপরে হামলা করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতি যে আশঙ্কার উদ্ভব হয়েছে সেটি জানিয়েছি।

সেনা মোতায়েনের দাবির বিষয়ে সিইসি কি বলেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘আইনগত তার করণীয় তিনি করবেন। তবে তিনি কি বলেছেন, তার কাছ থেকে শুনবেন। এখনও এ বিষয়ে ইসির অবস্থান জানি না।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যদি আইনগত সিদ্ধান্ত নেন, সরকার কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত প্রতিপালন করে থাকে। কাজেই বাস্তবতা জানাতে তার ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই।’

তিনি বলেন, “সেনাবাহিনী মোতায়েন করলে মানুষের আস্থা বাড়বে। নির্বাচন কমিশন একটি প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাস ও আস্থা বাড়বে।’ মানুষ চায় না এটা ‘খেলো’ নির্বাচনে পরিনত হোক।”

এর আগে, বিকেল পৌনে ৩টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সিইসি কাজী রকিবউদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যায় বিএনপির প্রতিনিধি দলটি। তারা সাক্ষাৎ শেষে বিকেল ৫টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয় থেকে বের হন।

বিএনপির প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান। তার সঙ্গে ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসেনর উপদেষ্টা আব্দুল হালিম, ক্যাপ্টেন সুজা উদ্দিন, সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন ও যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।

error: দুঃখিত!