মুন্সিগঞ্জ, ১১ জানুয়ারি, ২০২০, বিশেষ প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদীতে নিখোঁজের পাঁচ দিন পর বাংলা ক্যাট কোম্পানির প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জিসানের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান এলাকায় ধলেশ্বরী নদী থেকে লাশটি উদ্ধার করে ডুবুরি দল।
এ ঘটনায় এখনও নিখোঁজ রয়েছেন জিসানের সহকর্মী প্রকৌশলী লিখন সরকার। তবে এ ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করে সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছেন নিহতের স্বজনরা।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বিসিক স্টেশনের সিনিয়র অফিসার মো. কাজল মিয়া বলেন, ‘নিখোঁজ দুই প্রকৌশলীর সন্ধানে শুক্রবার সকাল থেকেই বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে তল্লাশি অভিযান শুরু করে ডুবুরি দল। একপর্যায়ে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান এলাকায় ধলেশ্বরী নদী থেকে জিসানের মরদহে উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে স্বজনরা গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন।
তবে জিসানের স্বজনদের দাবি, নদীতে ডুবে তার মৃত্যু হয়নি। জিসানকে হত্যা করা হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের ক্ষত চিহ্ন পাওয়া গেছে।
জিসানের বড় ভাই মো. শোয়েব আহমেদ বলেন, আমার ভাইয়ের লাশ অক্ষত পাইনি। তার মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়েছে, পেট কাটা রয়েছে এবং সেখান দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।
জিসানের ফুপাতো ভাই মো. সম্রাট বলেন, আমার ভাইয়ের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। অবশ্যই কেউ তাকে হত্যা করেছে। কারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে প্রশাসন তাদের যেন খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে।
ফতুল্লা থানার ওসি মো. আসলাম হোসেন বলেন, জিসানের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সিগঞ্জের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর সেখান থেকে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে নিখোঁজ লিখন সরকারের সন্ধানে ফায়ার সার্ভিসের তল্লাশি অভিযান চলছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের নারায়ণগঞ্জ জেলা উপ-পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, ঘটনার দুই দিন পর খবর পেয়ে আমরা গত তিন দিন ধরে নিখোঁজদের সন্ধানে তল্লাশি চালিয়েছে। একজনের লাশ ইতোমধ্যে উদ্ধার করেছি। অপরজনকে উদ্ধার না করা পর্যন্ত তল্লাশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
গত ৫ জানুয়ারি রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার রাজাপুর এলাকায় বুড়িগঙ্গা এন্টারপ্রাইজের ভেকু মেরামতের কাজ শেষে ফেরার পথে নিখোঁজ হন বাংলা ক্যাট কোম্পানির দুই মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান জিসান ও লিখন সরকার।
এ ঘটনায় জিসানের স্ত্রী রাকিয়া সুলতানা আশুলিয়া থানায় বাদী হয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
তবে জিসানের পরিবার শুরু থেকেই দাবি করে আসছেন, এ ঘটনার সঙ্গে ফতুল্লার রাজাপুর এলাকার বুড়িগঙ্গা এন্টারপ্রাইজের মালিক সজীব ও তার কর্মচারী পায়েল জড়িত।
তাদের দাবি, সজীব ও পায়েল ঘটনার বিষয়ে সবকিছু জানেন। কারণ জিসান ও লিখন নিখোঁজের বিষয়টি সজীব একদিন গোপন রেখেছেন এবং তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে বিভিন্ন সময়ে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করেছেন। এছাড়া সজীবের বড় ভাই ওই এলাকার ইউপি মেম্বার। সেই প্রভাবে সজীব বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
তাদের দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার রহস্য বের হয়ে আসবে বলে মনে করছেন নিহত জিসানের স্বজনরা।