মুন্সিগঞ্জ, ৩০ মার্চ ২০২৩, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
পদ্মাসেতুর নিচতলায় ৬.৬৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পাথরবিহীন রেললাইন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা’র দিকে ৪৫ মিনিটের প্রচেষ্টায় পদ্মা সেতুর ২৫ নং পিলার বরাবর সেতুর নিচতলায় ১৫ টন ওজনের ৭মিটার দৈর্ঘ্যের স্লিপারে চীন থেকে আনা জিকে ৩০০০ কিউরিং কম্পাউন্ড মিশ্রিত কংক্রিটের ঢালাই কাজ সম্পন্ন হয়। এখন অপেক্ষা পরীক্ষামূলক চলাচলের।
এর আগে বিকাল সোয়া পাঁচটার দিকে এক হাজার ১৫৮ নং স্লিপারের উপর চীন থেকে আনা বিশেষ কম্পাউন্ডিং মিশ্রিত কংক্রিটের ঢালাই শুরু হয়।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক-১ ব্রিগেডিয়ার সাঈদ আহমেদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ৪৭.৯ কিলোমিটার দূরে পদ্মা সেতুতে সর্বশেষ ১০ হাজার ১৫৮ নং স্লিপারে কংক্রিটের ঢালাইয়ের মধ্য দিয়ে সেতুতে রেল সংযোগের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়। ঢালাইয়ের ৪৮ ঘন্টা পর প্রথম দফায় ঢালাই টেষ্ট করা হবে। এরপর আরও ২৪ ঘন্টা অর্থাৎ সর্বমোট ৭২ ঘন্টা পর পরীক্ষা শেষে আগামী ৪ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুতে রেল চলবে।। এদিন রেলমন্ত্রী রেলে চড়ে কার্যক্রম পরিদর্শন করবেন।
তিনি আরও জানান, ২০২২ সালের ২৫ জুন মূল পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ঐবছরের ১৭ জুলাই সেতু কতৃপক্ষ রেল সংযোগ কাজের জন্য সেতুর নিচ তলা সেনাবাহিনীর কন্সট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট (সিএসসি) কে বুঝিয়ে দেয়। এরপর ২০ আগস্ট পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী। কিন্তু কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের নভেম্বরে। এরপর ৪ মাসের মাথায় ২৮ মার্চ পদ্মা সেতুর রেলের সর্বশেষ স্লিপার বসে। আর ঢালাইয়ের মধ্য দিয়ে শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয় গতকাল ২৯ মার্চ।
পদ্মা সেতু রেলওয়ে প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন জানান, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা থেকে মাওয়া ষ্টেশন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি প্রায় ৭৪ শতাংশ, মাওয়া থেকে ভাঙা ষ্টেশন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি প্রায় ৯২ শতাংশ এবং ভাঙা থেকে যশোর পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি প্রায় ৬৮ শতাংশ। সার্বিক প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ।
তিনি বলেন, আমরা এখনো আশাবাদী। যদি প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হয়, সবকিছু যদি স্বাভাবিক গতিতে চলে আমরা আশা করি যে আমাদের প্রকল্পের যে মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন এর মধ্যেই কাজ শেষ হবে।
প্রকৌশল সূত্রে জানা যায়, দেশে প্রথমবারের মতো সর্ববৃহৎ রেলব্রিজ মুভমেন্ট জয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে পদ্মার রেলসেতুতে। এতে দ্রুতগতির রেল চলাচলের সময় এ জয়েন্টে রেললাইন ৮০০ মিলিমিটার পর্যন্ত সম্প্রসারিত হতে পারবে। আর সেতুতে আটটির মধ্যে সবকয়টি জয়েন্টই বসে গেছে। পদ্মা রেলসেতু ৭ খণ্ডে বিভক্ত। আর সেতু টেকসই রাখতে নকশা অনুযায়ী নির্দিষ্ট দূরত্বে বিভাজন রাখা হয়েছে। তাই মূল সেতুর সঙ্গে দুই প্রান্তের ভায়াডাক্টের সংযোগ এবং মাঝে জয়েন্ট আছে ছয়টি। কংক্রিটের পাথরবিহীন রেললাইনের সঙ্গে যুক্ত করতে এ জয়েন্টগুলো স্টিল দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি। চারটি ধাপে ছয় বেয়ারিং প্লেট ছাড়াও সাতটি প্লেটের ওপর স্থাপিত শক্তিশালী এ মুভমেন্ট জয়েন্ট। ব্যতিক্রমী একেকটি জয়েন্টের ওজন প্রায় ১৫ টন।
বুধবার কংক্রিটের ঢালাইয়ের মধ্য দিয়ে শতভাগ কাজ সম্পন্ন হলে রেল প্রকল্পের পরিচালক, প্রকল্পের ব্যবস্থাপকসহ চীনা ও বাংলাদেশী শ্রমিকরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। এসময় চীনা বর্ণ ও ইংরেজিতে লেখা ব্যানার নিয়ে হাত তুলে বিজয় চিহ্ন দেখান তারা।