২২শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
শনিবার | বিকাল ৩:১০
পঞ্চসারের জনপ্রতিনিধির রমরমা অবৈধ ব্যবসা
খবরটি শেয়ার করুন:

একসময়ের চাঁদাবাজ, ত্রাস, সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী ইমরান। চালাতেন বাহিনী। আর সেই বাহিনীর কাছে পঞ্চসারের ৩৩টি গ্রামের অন্তত ৬৮ হাজার জনগোষ্ঠী জিম্মি হয়ে আতংকে দিন কাটাতো।

২০১৪ সালের ৯ ই নভেম্বর মালিরপাথর গ্রামে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুস সাত্তার (৫৬)-কে পিটিয়ে পঙ্গু করে আরও আলোচিত হন ইমরান।

একই বছরের ৭ ই নভেম্বর সদর উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক বাদশা মিয়ার বাড়িতে হামলা চালায় ইমরানের বাহিনী। তখন বাদশা মিয়ার ছোট ভাই মনির হোসেন (৪২) ও মো. সুমন (৩৫) কে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে তারা। এতে মনির হোসেনের দু’টি হাত ভেঙ্গে যায়। এ সময় ইমরান বাহিনী বাড়ির দুই গৃহবধূকে মারধর করে স্বর্ণালঙ্কার ও ঘরে থাকা নগদ টাকাসহ মালামাল লুটে নেয়।

২০১০ সালের ১৯ শে আগস্ট দুপুরে মুক্তারপুর চীনমৈত্রী সেতুর ঢালে টেম্পোস্ট্যান্ড দখলকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে ইমরান বাহিনীর গুলিতে দেলোয়ার (৩৯) গুলিবিদ্ধ হয়। এ সময় আহত হয় আরও ৯ জন।

২০০৯ সালের ১৬ই নভেম্বর বিকাল ৩টায় পঞ্চসার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রহিম মেম্বার ও তার সঙ্গী মোমেন ২টি মোটরসাইকেল দিয়ে মুক্তারপুর বিসিক মাঠে পৌঁছলে ইমরান ও তার বাহিনী হামলা করে রহিম মেম্বারকে কুপিয়ে জখম করে।

২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চাঁদার দাবিতে মালিরপাথরের মোখলেস ফিশিং নেট নামে একটি কারখানা বন্ধ করে দেয় ইমরান-মিরাজ গং। পরে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে কারখানাটি খুলে দেয়া হয়।

২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে পঞ্চসারের ডিঙ্গাভাঙায় অজিত ডাক্তারের কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে ইমরান গং।

তবে ভালো দিন এসেছে ইমরানের জীবনে। সকল অপকর্ম ছেড়ে দিয়ে পঞ্চসার ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড থেকে নির্বাচন করে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে হয়েছেন জনপ্রতিনিধি। কিন্তু ‘জনপ্রতিনিধি’র সেই ক্ষমতা ব্যবহার করে অবৈধ কারেন্ট জাল ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছেন ইমরান।

একসময়ের ‘ইমরান বাহিনীর’ সদস্যরা- হোসেন মাদবর (৩৫), গোলাপরায় দিঘীর পাড় গ্রামের মুকুল হোসেন সরদার (৩৫), সেলিম সরদার (৩৮), মনু মিয়া সরদার (৩৬), জাবেদ মিয়া সরদার (৩৮) ও ডালিম চৌকিদার (৩৮) ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছেন বিভিন্ন জায়গায়।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পঞ্চসার ইউনিয়নের মালিপাথর এলকায় শাহ-আলী রাইস মেইল সংলগ্ন ধানের মাঠে ইউপি সদস্য ইমরান হোসেন গড়ে তুলেছেন অবৈধ কারেন্ট জাল আয়রন কারখানা।

সেখানে বিভিন্ন কারখানায় উৎপাদিত অবৈধ কারেন্ট জাল আয়রন করা হচ্ছে।

কারখানাটির ভিতরে গিয়ে দেখা যায় প্রায় ১ কোটি টাকার অবৈধ (মনোফিলামিন) কারেন্টজাল আয়রন করার জন্য প্রস্তুত করছেন শ্রমিকরা। প্রতিদিন প্রকাশ্যে অবৈধ কারেন্টজাল আয়রন ও বাজারজাত করনের শেষ প্রক্রিয়া চললেও উপজেলা মৎস্য প্রশাসন এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

স্থানীয়রা জানান, ইউপি সদস্য ইমরান এর বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। তারা আরো বলেন, শুধু ইমরান মেম্বারই নয় পুরো পঞ্চসার ইউনিয়নে শতশত অবৈধ কারেন্ট জাল উৎপাদন করছে প্রভাবশালীরা। তবে র‌্যাবের যে কয়েকটা অভিযান হয়েছে তা সফল ভাবে হলেও জেলা প্রশাসনের তেমন কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেই। ফলে প্রভাবশালীরা তাদের সুবিধামত চালিয়ে আসছে কারেন্ট জাল উৎপাদন, আয়রন ও বাজারজাত করার সকল প্রক্রিয়া।

অবৈধ কারেন্ট জাল আয়রনের বিষয়টি স্বীকার করে পঞ্চসার ইউপি সদস্য ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমার এখানে কারেন্ট জাল উৎপাদন করা হয়না। আমি শুধু বিভিন্ন কারখানায় উৎপাদিত কারেন্ট জালসহ সকল ধরণের জাল আয়রন করি । আমি জানি এসব অবৈধ তবুও করি। যারা উৎপাদন করে তাদের বিরুদ্ধে লিখুন কেন তারা উৎপাদন করে।’

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘অবৈধ কারেন্ট জাল ব্যবসায়ীরা যতই প্রভাবশালী হোক তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

error: দুঃখিত!