মুন্সিগঞ্জ, ২৭ এপ্রিল, ২০২০, শ্রীনগর প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেও মুন্সিগঞ্জে আলু বিক্রির ধুম পড়েছে। আলুর দাম ভালো হওয়ায় আনন্দ ও উৎসাহ নিয়ে কৃষকরা আলু বিক্রি করছেন।
অন্যদিকে লকডাউনের ক্রান্তিলগ্নে কর্মহীন পরিবারগুলোকে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীর সাথে আলু দেওয়ায় বাজারে আলুর চাহিদা বেশী।
খাদ্য সহায়তার তালিকায় খাদ্য হিসেবে চালের পরেই আলুকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাইকারীভাবেও আলু প্রচুর বিক্রি হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আলুর বাজার ভালো হওয়ায় কৃষকের চোখে মুখে আনন্দের হাসি ফুটেছে। এতে করে কৃষকদের আলু চাষে উৎসাহ বেড়েছে।
এমনি দৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে জেলার শ্রীনগরসহ বিভিন্ন উপজেলা গুলোতে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এই অঞ্চলের কৃষকের বাড়িতে বাড়িতে আলুর পরিমাপ করছেন শ্রমিকরা। আলুর গোলায় ৮-১০ জনের শ্রমিক গ্রুপ দাড়ি পালায় আলু মেপে বস্তাবন্দি করছেন।
এসময় কৃষক আলম মোল্লা জানান, তারা ২০০ মন আলু বিক্রি করেছেন প্রতি মন ৭০০ টাকা দরে। গত দুই বছরে আলুতে তেমন সুবিধা করতে পারেননি। তার পরেও এবছর প্রায় ৮০০ শতাংশ জমিতে আলুর চাষ করেছেন। এবছর আলুর দাম পাওয়ায় গতবারের লোকসান কিছুটা পুষিয়ে উঠতে পারবেন বলে জানান তিনি।
অন্যান্য কৃষকরাও এমনটাই বলছেন। তারাও ভালো দামে আলু বিক্রি করছেন।
এসময় লক্ষ্য করা যায়, ৫০ কেজি করে আলু দিয়ে প্রতিটি চট বস্তাবন্দি করা হচ্ছে। বস্তাগুলো বাইসাইকেলে করে শ্রমিকরা ৪-৫টি করে বস্তা একত্রে নিয়ে যাচ্ছেন এলাকার প্রধান রাস্তা গুলোতে।
ওখান থেকে পাইকাররা পিকআপ ভ্যান ও বড় ট্রাকে করে পাইকারী বাজার গুলোতে নেয়ার লক্ষ্যে শতশত বস্তা গাড়ীতে লোড করছেন।
লিটন, আরিফ, নাসির মোল্লাসহ কয়েকজন শ্রমিক বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে এলাকায় তারা সম্পূর্ণভাবে বেকার হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় আলুর পাইকারের চাহিদা অনুযায়ী আলু মাপার কাজ করছেন তারা। একাজে ১০-১২ জন শ্রমিক হিসেবে একটি গ্রুপে কাজ করছেন তারা।
এই কাজে মূলত তারা বস্তা প্রতি মজুরী নিয়ে থাকেন। ৫০ কেজি আলু মেপে ভর্তি করে সেলাই পর্যন্ত ১টি বস্তার জন্য তারা মজুরী পাচ্ছেন ২২-২৫ টাকা। দৈনিক তারা ২০০-৪০০ মন আলুর ওজন নির্ধারণ করতে পারেন। তবে দিনের কয়েক ঘন্টায় এই কাজে জনপ্রতি ৫০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত আয় করছেন তারা। এতে করে লকডাউনে কর্মহীনতার কিছুটা অভাব পুরণ করতে পারছেন তারা। আলুর পাইকাররাই তাদের সব মজুরী প্রদান করে থাকেন।
তারা জানান, লকডাউনের এই ক্রান্তিলগ্নে প্রায় দুই সপ্তাহের মত এই কাজ করতে পারবেন।
শ্রীনগর এলাকার পাইকার আমজাদ হোসেন বলেন, এবছর আলুর দাম ভালোই। বিক্রমপুরের আলু বাজারে চাহিদা থাকায় জেলার বিভিন্নস্থান থেকে কৃষকের আলু কিনছি। দাম দর ঠিক হলে শ্রমিক নিয়ে আলু মাপতে কৃষকের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি। তাদের গোলাঘর থেকে শ্রমিক দিয়ে আলু মেপে নিচ্ছি। বাজার দর অনুযায়ী প্রতিমন আলু সর্বনিম্ন ৬৫০-৭৫০ টাকা ক্রয় করছি। আলুর মান অনুসারে।
পাইকার মো. রহিম ও জমির উদ্দিন বলেন, কাঁচা বাজারের কথা বলা যায়না। আলুর দাম বাড়তে ও কমতে পারে। আলুর মান ভাল হলে দামও কম অধিক পাওয়া যায়। তবে আমাদের এই অঞ্চলে রাস্তাঘাট ভাল না থাকায় জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে শ্রমিক মজুরী ও ক্যারিং কষ্ট দিয়ে আড়ৎ পর্যন্ত আলু নিতে খরচ বেশী হচ্ছে। প্রতি কেজি আলুতে আড়ৎ পর্যন্ত সাড়ে ৩ টাকা খরচ হয়ে যায়। তার পরেও এখন বাজারে আলুর চাহিদা থাকায় আড়ৎতে আলু পাঠাচ্ছি।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, চিটাগাং, সিলেট, নোয়াখালী, শ্যামবাজার, কাওরান বাজার, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বড় আড়ৎতে বিক্রমপুরের আলুর চাহিদা বেশী থাকায় এখান থেকে প্রচুর আলু যাচ্ছে। শ্রীনগরসহ প্রায় উপজেলাতেই এখন আলু বিক্রির ধুম পড়েছে। আলু এই অঞ্চলের অর্থকরী ফসল।