ঘুম থেকে উঠে হঠাৎ দেখলেন মাথার কোন কোন জায়গায় চুল নেই। বুঝতে না পেরে বা ঘাবড়ে গিয়ে বাড়ির অন্যদের জিজ্ঞাসা করলে সমস্বরে সবাই বলে উঠলেন তেলাপোকায় চুল খেয়েছে! এরকম ধারণা শিক্ষিত, স্বল্পশিক্ষিত অনেকের মধ্যেই আছে।
এ সম্পর্কে এই ধারণাটিই প্রচলিত। এ জাতীয় টাক শুধু মাথার চুলেই হয় না, দাড়ি, গোঁফ, ভ্রু ইত্যাদি জায়গাতেও হয়ে থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত ১-২টি এবং কয়েক দিনের ভেতর ৫-১০টি জায়গায় হঠাৎ করে গোলাকার অথবা ডিম্বাকৃতির টাকমতন হতে পারে। টাক পড়া জায়গায় কখনো কখনো ১-২টি চুল বিদ্যমান থাকলেও সাধারণত কোন চুলের গোড়াও দেখা যায় না। চকচকে পিচ্ছিল মনে হয়। কখনো কখনো ত্বক একটু ঢালু বা দাবানো থাকতে পারে আবার না-ও থাকতে পারে।
ঠিক একই ধরনের গোলাকার টাক ছত্রাকের আক্রমণেও হতে পারে। তবে ছত্রাক কেবল অল্প বয়সীদেরই হয়ে থাকে। প্রাপ্তবয়স্কদের হয় না। কিন্তু এলোপেসিয়া এরিয়েটা যেকোন বয়সেই হতে পারে, বরং প্রাপ্তবয়স্কদের বেশি হয়। ছত্রাকের কারণে যে টাক পড়ে তাতে চুলের গোড়া দেখা যায় কিন্তু এলোপেসিয়া এরিয়েটাতে চুলের গোড়া দেখা যায় না। তবে যাই হোক, পার্থক্য নির্ণয় শুধু চিকিৎসার ধরন নির্ধারণের জন্য প্রয়োজনীয়। এলোপেসিয়া এরিয়েটা বা হঠাৎ এই গোলাকার টাক কেন হয় তা কিন্তু আবিষ্কৃত নয়। এ জাতীয় সমস্যা কোন জীবাণু দ্বারা সংঘটিত হয় না। তবে বংশগত একটা ব্যাপার থাকতে পারে এবং মানসিক চাপ বৃদ্ধিতে এ জাতীয় সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। তেলাপোকা ঘুমের মধ্যে চুল কেটে নিয়েছে এটা ১০০ ভাগ ভুল ধারণা। একটু সাধারণ বুদ্ধি খাটালেই বোঝা যাবে তেলাপোকা যদি চুল কাটেই তবে অন্তত চুলের গোড়া দেখা যাবে অথবা ধরলে অনুভব করা যাবে। কিন্তু এ জাতীয় সমস্যাতে চুলের গোড়ায়ও দেখা যায় না এবং হাত দিয়ে ধরে অনুভবও করা যায় না। তাই তেলাপোকা সম্পর্কিত ধারণাটি ঠিক না।
চিকিৎসাব্যবস্থা: অল্প বয়সে যদি এ জাতীয় সমস্যা হয় তবে এমনিতেই ভাল হয়ে যেতে পারে। তবে সব ক্ষেত্রে নয়। কখনও কখনও ভাল না হয়ে আকারে এবং সংখ্যায় বেড়ে গিয়ে মাথার সমস্যা চুল, ভ্রু, দাড়ি, গোঁফ ইত্যাদিতে ধরে যেতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে ছোট ছোট টাক পড়া জায়গা অর্থাৎ আক্রান্ত স্থানে স্টেরয়েড জাতীয় ইনজেকশন ত্বকের নিচে ৩-৪ সপ্তাহ পর পর ১ বার দিয়ে রোগের বিস্তার রোধ করা সম্ভব। এতে আক্রান্ত স্থানে নতুন করে চুল গজবে। তবে চিকিৎসা চলাকালীন নতুন জায়গা আক্রান্ত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেখানেও এই ইনজেকশন দিতে হবে। একটা পর্যায়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যাবে আবার কখনও যদি সমস্যা দেখা দেয় তাহলে হতাশ না হয়ে আবার চিকিৎসা নিতে হবে।
এলোপেসিয়া এরিয়েটা: এলোপেসিয়া এরিয়েটা একটি ভিন্ন ধরনের চুল পড়ার অসুখ। এ ক্ষেত্রে এক বা একাধিক স্থানে গোলাকৃতি হয়ে চুল উঠে বা পড়ে যায়। এই চুল ওঠা সাধারণত মাথায়, চোখের ভ্রু, গোঁফ বা দাড়িতে দেখা যেতে পারে।
এই রোগ প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশু সবারই হতে পারে। যেসব পরিবারে এ্যাজমা, থাইরয়েডের অসুখ, শ্বেতি বা ভিটিলিগো, লুপাস ইরাইথমেটাস, রিউমাইয়েড আথ্র্রাইটিস, পারনিসিয়াস এনিমিয়া ইত্যাদি রোগ রয়েছে সেসব পরিবারের লোকজনের এলোপেসিয়া এরিয়েটা দেখা দিতে পারে।
এ ক্ষেত্রে নানা রকম পরীক্ষা করে অন্যান্য রোগের সঙ্গে পার্থক্য করা প্রয়োজন। যেমন, এন্টিনিউক্লিয়ার এন্টিবডি পরীক্ষা লুপাস ইরাইথমেটাসের জন্য, ফাঙ্গাস পরীক্ষা ইত্যাদি।
এলোপেসিয়া এরিয়েটা অনেক সময় এমনিতেই ভাল হয়ে যেতে পারে। তবে ভাল না হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। অবহেলা না করে এই রোগের কারণ ও চিকিৎসা করানো প্রয়োজন।