নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে পর্যাপ্ত প্রথম শ্রেণির গণশৌচাগার (পাবলিক টয়লেট) নির্মাণের উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন মেয়র আনিসুল হক।
এর অংশ হিসেবে পুরনো-জীর্ণ পাবলিক টয়লেটগুলো ভেঙে ‘এ ক্যাটাগরির টয়লেট’ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে পাবলিক টয়লেট বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় মেয়র বলেন, “পাবলিক টয়লেট এই শহরের বড় সমস্যা। রাস্তায় বেরুলে লোকজন টয়লেটে যাওয়ার জন্য এখানে-ওখানে দাঁড়িয়ে থাকেন। বিশেষ করে নারীরা বেশি সমস্যায় পড়েন।
“এই সমস্যা দূর করা আমাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল। আমরা নগরীতে অন্তত দুইশ ‘ফাইভ স্টার মানের টয়লেট নির্মাণের চিন্তা-ভাবনা করছি। গাবতলী বাস টার্মিনালে নির্মিত পাবলিক টয়লেটটি এর উদাহরণ।”
সিটি করপোরেশন ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়াটার এইড আয়োজিত সভায় উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার সিএনজি স্টেশন ও পেট্রল পাম্প মালিকরাও ছিলেন। ফিলিং স্টেশনের প্রশস্ত স্থানে পাবলিক টয়লেট নির্মাণে নগর কর্তৃপক্ষের চিন্তা-ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে তাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
দুই বছর আগে গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় নির্মিত গণশৌচাগারের ছবি উপস্থাপন করে মেয়র বলেন, এরকম আরও আটটি টয়লেট নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
“দুটির কাজ অলরেডি কমপ্লিট। বাকিগুলো অচিরেই শেষ হবে। সিটি করপোরেশনের ৩৪-৩৫টি পাবলিক টয়লেট রয়েছে বিভিন্ন বাজারে। সেগুলো আমরা প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করার চেষ্টা করছি।”
পরিকল্পনা অনুযায়ী কয়েশ পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করতে হলে সিএনজি ও পেট্রল পাম্পগুলোর উন্মুক্ত স্থানকে কাজে লাগানো দরকার বলে মালিকদের বলেন মেয়র।
তার প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেও সরাসরি সায় না দিয়ে বিভিন্ন সমস্যা ও ঝুঁকির কথা তুলে ধরেন মালিকদের প্রতিনিধিরা।
সিএনজি ফিলিং স্টেশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মাসুদ খান বলেন, সিটি করপোরেশনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তবে এক্ষেত্রে জনসচেতনতা আরও বাড়াতে হবে।
“সরকারি ব্যবস্থাপনায় এখন যেসব পাবলিট টয়লেট আছে দুর্গন্ধে সেগুলোর পাশ দিয়ে হাঁটা দায়। তাহলে সেখানে মানুষ কীভাবে তাদের প্রয়োজন সারবে। আগে সেগুলোকে ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। তাহলেই সমস্যা অনেকাংশে দূর হবে।
“সিএনজি স্টেশনগুলো অনেক স্পর্শকাতর এলাকা। কেউ দুস্কৃতি করে বসলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে যাবে। তাই এ বিষয়ে এগোনোর আগে ভাবতে হবে।”
পেট্রল পাম্প মালিক সমিতির সভাপতি নাজমুল হক বলেন, শহরের সিএনজি ও পেট্রল পাম্প স্টেশনগুলোর জায়গা কমে গেছে রাস্তা চওড়া করার কারণে।
“বাইরে থেকে বড় দেখলে কী হবে? সেখানে তেলের জন্য অপেক্ষমাণ গাড়ি থাকে। তেলের লরি দাঁড়ানোর আলাদা জায়গা থাকে। সবকিছু মিলিয়ে জায়গা খুবই কম।”
তবে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা ও আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব হলে জায়গা দেওয়া হবে বলে আশ্বাস্ত করেন এই দুই নেতা।
এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে দেওয়া বক্তব্যে মেয়র আনিসুল বলেন, “উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় অন্তত ৮৯টি পেট্রল পাম্প ও সিএনজি স্টেশন রয়েছে। এগুলোতে কিছু টয়লেট থাকলেও রুগ্ন। সাধারণ মানুষ সহজে সেখানে যেতে পারেন না।
“স্টেশনগুলোতে ২০০/২৫০ স্কয়ার ফিট জায়গা দিন। ৩/৪টা টয়লেট যাতে বানানো যায়। আপনারা যদি তৈরি করতে না চান আমাদের সুযোগ দিন। এ ক্লাস টাইপের পাবলিক টয়লেট করব। আগামী জুনের মধ্যে ৪৩টি এবং বছরের বাকি সময়ে আরও ৪০টি টয়লেট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।”
অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পাবলিক টয়লেটগুলো নিয়ে একটি মাল্টিমিডিয়া প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন করপোরেশনের প্রকৌশলী তারেক বিন ইউসুফ।
এতে বলা হয়, ঢাকা দক্ষিণে ৮৯টি পেট্রল পাম্প ও সিএনজি ফিলিং স্টেশন রয়েছে; যার ৮৬টিতে শৌচাগার সুবিধা আছে। এর কোনোটিতেই মেয়েদের জন্য সুব্যবস্থা নেই। হাতধোয়ার ব্যবস্থা নেই এবং প্রবেশপথ সংকীর্ণ।
ওয়াটার এইডের পরিচালক খায়রুল ইসলাম বলেন, শুধু সংস্কার ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিলেই সিএনজি স্টেশনগুলোতে সাধারণ মানুষের জন্য শৌচাগার নির্মাণ করা সম্ভব।