মুন্সিগঞ্জ, ১১ জুন, ২০২০, নিজস্ব প্রতিবেদক (আমার বিক্রমপুর)
সেকমো কে ভূয়া ডাক্তার বানিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার অপরাধে সম্প্রতি ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে ৫০হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হয়েছিলো মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ী বাজারের সেবা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারকে।
তবে জরিমানা দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি সমালোচিত ক্লিনিকটির কতৃপক্ষ। এবার ক্লিনিকটির বিরুদ্ধে চিকিৎসা না দিয়ে অর্থ আদায়, সেবা প্রার্থীদের সাথে দূর্ব্যবহার, অতিরিক্ত অর্থ আদায়, প্রাণনাশের হুমকি সহ নানা অভিযোগ করেছে ভূক্তভোগীরা।
এমনকি অর্থ নিয়ে পূর্নাঙ্গ চিকিৎসা না করা ও প্রাণনাশের হুমকির বিষয়ে ক্লিনিকটির বিরুদ্ধে গত ৩ই জুন মোঃ শাহ আলম নামের এক ভুক্তভোগী টংগিবাড়ী থানায় লিখিত অভিযোগও করেছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ৩১ই মে বাচ্চা ডেলিভারীর জন্য শাহ আলম তার স্ত্রী মোসাঃ হাসনা বেগমকে সেবা ক্লিনিকে ভর্তি করে। ভর্তির সময় বাচ্চা ডেলিভারীর পর লাইগেশন করার শর্ত থাকে। ডেলিভারী ও লাইগেশন করার টাকা একসাথে নেয়। পরে ২ দিন পর গত ২ই জুন দুপুরে ক্লিনিক থেকে ছাড়পত্র চাইলে লাইগেশন করা হয় নাই বলে জানায় ক্লিনিক মালিক ও ডাক্তার।
কেন হয়নাই কি সমস্যা তা জানতে চাইলে তাদের সাথে দূর্ব্যবহার করে কতৃপক্ষ। আইনের আশ্রয় নিবো বললে ভুক্তভোগীকে বিভিন্ন ভয়-ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেয় কতৃপক্ষ ।
আরেক ভুক্তভোগী সোনারং এলাকার জসিম মিজি মুঠোফোনে অভিযোগ করে বলেন, গত ১ই মে আমার মা জোসনা বেগমের শরীরে রক্ত দেওয়ার জন্য সেবা ক্লিনিকে নিয়ে যাই। আগেই টাকা নিয়ে ক্লিনিকের মালিক কাকলি আমার মায়ের শরীর সুঁচ দিয়ে ৫০বার খোঁচিয়েও রগ পাচ্ছে না বলে জানায়। পরে খোঁজে পেলে একব্যাগ রক্ত ৪৫মিনিট দিয়েছে।
দ্রুত রক্ত দেওয়ার মায়ের শরীরে জ্বর চলে আসে। এ অবস্থায় মা’কে ঢাকা নিয়ে যেতে বলে তারা। আগেই টাকা দিলেও মাকে বাঁচাতে আমাকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
এদিকে ক্লিনিকটিতে চিকিৎসায় অধিক অর্থ নেওয়ার অভিযোগ করেছেন একাধিক ভুক্তভোগী।
শেখ রিজভী নামের এক ভুক্তভোগী জানান, রক্তের গ্রুপিং এবং ক্রস মেচিং এর জন্য অন্যান্য হাসপাতাল ১০০০/১২০০ টাকা নেয়। কিন্তু তারা (সেবা ক্লিনিক) ২০০০টাকা নেয়।
এদিকে জেলা সিভিল সার্জন সূত্রে জানা গেছে, ১বছর মেয়াদের লাইসেন্স নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে সেবা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার। যার মেয়াদ শেষ হয় গত ২বছর পূর্বে। এরপর নতুন করে লাইসেন্স নেয়নি ক্লিনিকটি।
এর মধ্যে গত ২০১৮ সালে অনলাইন নিবন্ধন নির্দেশনা দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত ক্লিনিকটির নিবন্ধনে কোন আবেদনের তথ্য জেলা সিভিল সার্জন অফিসে নেই বলে জানায় সিভিল সার্জন কতৃপক্ষ।
এসব বিষয়ে বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে জানতে চাইলে অভিযোগগুলো মিথ্যা দাবি করে ক্লিনিকটির মালিক কাকলি মল্লিক জানান, হাসনা বেগমের ৩য় সিজার ছিলো। দায়িত্ববোধ থেকে তাকে ভর্তি নেই। কিন্তু তার শাররিক অবস্থায় লাইগেশন করা সম্ভব নয় বলে ডাক্তার জানিয়েছে। রোগীর অবস্থা বিবেচনায় লাইগেশন করা হয়নি। ছাড়পত্রের দিন আমি ঢাকায় ছিলাম কারো সাথে খারাপ ব্যবহার কিংবা প্রাণনাশের হুমকি দেইনি।
তিনি আরও বলেন, রক্তের ক্রস মেচিং এর জন্য ৩-৪ পরিক্ষা করতে হয়। পরিক্ষা গুলোর বিল আসে ১৭শ টাকা। কারো কাছ থেকে বেশি টাকা রাখা হয়নি।
ক্লিনিকের লাইসেন্সের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের লাইসেন্স আছে, আমরা অনলাইনে নিবন্ধন করেছি।
কত তারিখ পর্যন্ত লাইসেন্স আছে? সিভিল সার্জন অফিসে তথ্য নেই কেন? এমন প্রশ্নে তিনি কোন সদুত্তর না দিয়ে বলেন, আগামীকাল কাগজপত্র সিভিল সার্জনের কাছে জমা দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা: আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এ বিষয়ে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’