১৯শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বুধবার | সকাল ১০:০৫
জীবন ভিক্ষা চেয়ে আলজেরিয়া থেকে মুন্সিগঞ্জের তরুণদের ভিডিওবার্তা
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ ৮ নভেম্বর, ২০১৯, বিশেষ প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগ‌ঞ্জের ‌ছে‌লে সুমন, দেলওয়ার, মহ‌সিন, হেলাল ও আলমগীর। ভাগ্য বদলা‌তে তারা বি‌দে‌শে যাওয়ার স্বপ্ন দে‌খে‌ছি‌লেন। রিক্রু‌টিং এজে‌ন্সি তা‌দের আল‌জে‌রিয়া পাঠায়। স্বপ্ন দেখায়, প্র‌তি মা‌সে ৪০-৫০ হাজার টাকা বেতন। আলজেরিয়া থেকে মরক্কো হয়ে স্পেন যেতে পারবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। আলজে‌রিয়ায় আটকা প‌ড়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন কর‌ছে। দে‌শে ফেরার জন্য তার‌া আকুল আবেদন জা‌নি‌য়ে‌ছে। প‌রিবারগু‌লোর আবেদ‌নের প্রে‌ক্ষি‌তে তা‌দের উদ্ধারের জন্য ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে আবেদন জানিয়েছে ব্র্যাক। বোর্ড থেকে এ ব্যাপারে দূতাবাসকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। 

উত্তর আফ্রিকার একটি দেশ আলজেরিয়া। আট‌কে পড়া প্রবাসী ও তা‌দের স্বজনরা জা‌নি‌য়ে‌ছেন, উচ্চ বেতন, ভালো কাজের সম্ভাবনা আর সহজ পথে স্পেন প্রবেশের রঙ্গিন স্বপ্ন দেখিয়ে পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশি  যুবকদের। স্বপ্ন দেখানোর জন্য নেওয়া হচ্ছে নানা কৌশল, অফিসগুলোতে রাখা হয়েছে বিশ্ব মানচিত্র, দেখানো হচ্ছে আলজেরিয়া থেকে মরক্কো আর মরক্কো থেকে স্পেনের দূরত্ব। 

অভিযোগ উঠেছে, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষন ব্যুরোর ছাড়পত্র নিয়েই কর্মী প্রেরণ করছে কিছু রিক্রুটিং এজেন্সি। কিন্তু সেখানে গি‌য়ে তারা প্রতা‌রিত হ‌চ্ছেন। সম্প্র‌তি আলজেরিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন নয় বাং‌লা‌দে‌শি। স্পেনের উদ্দেশ্যে মরক্কোতে অবস্থান করছেন চারজন। আর আলজেরিয়াতে অবস্থা করছেন ৪২ বাংলাদেশি।

আল‌জে‌রিয়া থেকে ফেরত আসা কর্মী মোহাম্মদ ফারুক জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়া‌রি মাসে জনপ্রতি তিন লাখ টাকা নিয়ে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষন ব্যুরোর ছাড়পত্র দিয়ে মু‌ন্সিগঞ্জ ও আশপা‌শের এলাকার ৫৬ জন বাংলাদেশিকে আলজেরিয়াতে পাঠায় রিক্রুটিং এজেন্সি বন্যা বিজয় ওভারাসিজ লি. (আর.এল-১৩১৪) ও সিঙ্গাপুর স্কিল ট্রেনিং সেন্টার। আলজেরিয়া যাওয়ার আগেই সিঙ্গাপুর ট্রেনিং সেন্টার থেকে কর্মীদের বলা হয়, ভালো না লাগলে কয়েকদিন কাজ করে চাইলে স্পেন চলে যেতে পারবেন। কিন্তু আলজেরিয়াতে গিয়ে কাজ করালেও ঠিতমতো বেতন পান‌নি। বেতন চাইলে মারধর করা হ‌তো। 

আলজে‌রিয়ায় আট‌কে পড়া ও ফেরত আসারা জা‌নি‌য়ে‌ছেন, এ বিষয়ে রিক্রুটিং এজেন্সি ও সিঙ্গাপুর স্কিল ট্রেনিং সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করলে এজেন্সি বলে বিদেশ পাঠানোর কথা আমরা পাঠিয়েছি। এখন সেখানে সমস্যা থাকলে কী করবো? 

সিঙ্গাপুর ট্রেনিং সেন্টারে যোগা‌যোগ কর‌লে তারা বলেন, আলজেরিয়াতে তা‌দের লোক আছে। তারা স্পেন লোক পাঠায়। আপনারা তাদের সাথে যোগাযোগ করে স্পেন চলে যেতে পারেন। এসব কথা শোনার পর তাদের সাথে থাকা চারজন কর্মী আক্তার মিয়া, ইব্রাহিম, রিপোন মোল্লা ও উজ্জল স্পেন যাবার উদ্দেশ্যে আলজেরিয়া থে‌কে মরক্কো গেছে এবং মরক্কো গিয়ে তারাও অনেক বিপদের মধ্যে আছেন। 

ফ‌ারুক জানান, পরি‌স্থি‌তি খার‌াপ হওয়ায় তি‌নিসহ নয়জন দে‌শে চ‌লে আস‌তে বাধ্য হ‌য়ে‌ছেন। এরা হ‌লেন, জসিম, মুহিন আহাম্মেদ, শামীম শেখ, হৃদয় শেখ, রমা সুমন, রুবেল, ইসমাইল ও আল আমিন। তারা জানান, জীবন বাঁচানোর তাগিদে পরিবার থেকে টাকা নিয়ে নিজ থেকে বিমান টিকিট কেটে শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফেরত আসার পর কর্মীরা রিক্রুটিং এজেন্সি বন্যা বিজয় ওভারাসিজ লি. ও সিঙ্গাপুর স্কিল ট্রেনিং সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করলে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কর্মীদেরকে হুমকি ‌দেয়া হ‌চ্ছে।

চলতি বছরের জুলাই মাসে মরক্কো থেকে দেশে ফেরত আসা দুই কর্মী রায়হান ও মো. ওমর ফারুক জানান, ২০১৭ সালে রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স আর.এস লিংকার্স (আর.আল- ৯৬) তাদেরকে জনশক্তি ব্যুরোর ছাড়পত্র দিয়ে আলজেরিয়া পাঠায়। সেখানে কিছুদিন থাকার পর তারা মর ক্কো হয়ে স্পেন যাবার চেষ্টা করেন। আলজেরিয়া থেকে মরক্কো হয়ে স্পেন যাবার উদ্দেশ্যে ব্যর্থ হয়ে মরক্কো থেকে দেশে ফেরত মো. মিজানুর রহমান, মো. মহিউদ্দিন, মো. রায়হানের গল্পটাও একইরকম।

ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান ব‌লেন, আলজেরিয়াতে আট‌কে পড়া সাতজ‌নের প‌রিবার আমা‌দের কা‌ছে সহ‌যো‌গিতা চে‌য়ে‌ছেন। আলজেরিয়াতে অবস্থানরত ওই বাংলাদেশিদের নিরাপদে দ্রুত দেশে ফেরত আনতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডকে গত ৯ অক্টোরর আমরা লিখিতভাবে আবেদন ক‌রে‌ছি। বোর্ড থেকে চি‌ঠি দেওয়া হ‌য়ে‌ছে সেখানকার বাংলা‌দেশ দূতাবা‌সে। ত‌বে সা‌র্বিক ঘটনা শুনে আমা‌দের ম‌নে হ‌চ্ছে, স্পেনের স্বপ্ন দেখিয়ে তাদের পাঠানো হচ্ছে। বিষয়টা উদ্বেগজনক। আশা করছি সেখানকার দূতাবাস থেকে সরকারকে এ ব্যাপারে করণীয় জানানো হবে। দ্রুত এই ধরনের প্রতারণা বন্ধ করতে না পারলে আরো অনেককে বিপদে পড়তে হবে। দেশের ভাবমুর্তিও ক্ষুণ্ণ হবে। আশা করি মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।

error: দুঃখিত!