১০ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রবিবার | রাত ৯:০৫
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
করোনা: মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে পথে বসেছে মৃৎশিল্পীরা
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১৮ এপ্রিল, ২০২০, সালাহ্ উদ্দিন সালমান (আমার বিক্রমপুর)

বিশ্বব্যাপী করোনার সংক্রমণ যেমন ভয়ানক রূপ ধারণ করেছে সে থেকে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলা ও মুক্ত নয়। এখানেও মরণব্যাধি করোনার ভয়াবহতা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে এই উপজেলায় করোনা সনাক্ত হয়েছে ৩ জন।আর এই করোনা সংক্রমণের কারনে নববর্ষ ও চৈত্র সংক্রান্তি মেলা হয়নি। এছাড়া এখানে বৈশাখে মাসব্যাপী বাঙালির উৎসব থাকে। কিন্তু করোনা সব তছনছ করে দিয়েছে। এবার বাঙালি সেই উৎসব হয়নি। বৈশাখী এই উৎসবে দেখা গেছে মৃৎ শিল্পীদের মাথায় হাত। মৃৎ শিল্পীদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। তাই উপজেলার মৃৎ শিল্পীরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মৃৎশিল্পীরা বেঁচে থাকেন বাংলা নববর্ষকে ঘিরে। পহেলা বৈশাখের দিন থেকে শুরু করে পুরো বৈশাখ মাস জুড়েই দেশের বিভিন্ন স্থানের মতন মুন্সিগঞ্জ সিরাজদিখান উপজেলায়ও সমারোহের সঙ্গে বৈশাখী মেলা হয়ে থাকে। কিন্তু করোনার জেরে বিপর্যস্ত হয়েছে গোটা জনজীবন। সারা বিশ্বকে গ্রাস করেছে এই করোনা ভাইরাস। দীর্ঘ দিনের লকডাউনের বন্ধ বাড়ানো হয়েছে। মহামারী থেকে বাঁচতে বাড়ানো হতে পারে আবারও সরকারী বেসরকারি ছুটির মেয়াদ।

আর নববর্ষের মাসে মাথায় হাত পড়েছে সিরাজদিখান উপজেলার মৃৎশিল্পীদের। লকডাউনের মধ্যেই অতিক্রম হয়ে গেছে বৈশাখী উৎসব,উপজেলার কোথাও মেলা হয়নি। আগে থেকে বায়না দিয়ে রাখা ব্যবসায়ীরাও শেষ মুহূর্তে অর্ডার বাতিল করেছে। প্রতিবারের থেকে এবারের চেহারাটা যেন পুরো উল্টো। নববর্ষেও এবার বিক্রি নেই মাটির তৈরি জিনিসপত্রের।

জানা যায়, করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে সিরাজদিখান উপজেলা সহ পুরো মুন্সিগঞ্জ জেলা বর্তমানে লকডাউনে রয়েছে। জনসাধারণের চলাচল নেই। চলছে না কোনো পরিবহনও। বন্ধ রয়েছে বাজার-হাট।

যেখানে পহেলা বৈশাখ ঘিরে বাঙালির উদ্দীপনার শেষ থাকে না। যে পহেলা বৈশাখকে ঘিরেই এখনো টিকে রয়েছে পালপাড়াগুলো, সেই পাল পাড়ার মৃৎশিল্পীদের পরিবারে এবার পহেলা বৈশাখ এসেছে বিষাদের কালো ছায়া নিয়ে। লকডাউনের জেরে চরম সমস্যার মধ্যে পড়েছে মৃৎশিল্পীরা।

এর আগেও লকডাউনের জেরে বাতিল হয়েছে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবার হল নববর্ষ। প্রতিবছর এই দিনটাতে মাটির পুতুল,ঘোড়া, গণেশের মূর্তি, পান্তা ইলিশের মাটির থালার চাহিদা থাকে তুঙ্গে। সমস্ত ব্যবসায়ী এই নববর্ষের দিনটিতে ব্যবসার হাল ফেরাতে সিদ্ধিদাতার আরাধনায় মেতে ওঠে। এবার সেই মৃৎশিল্পের ব্যবসাটার চিত্রটাই যেন পুরো অন্যরকম। হাজার হাজার মাটির তৈরি তৈজস রয়েছে মৃৎশিল্পীদের কারখানায়। মাটির থালাও রয়েছে প্রচুর। কিন্তু করোনা প্রকোপ যেভাবে গ্রাস করেছে তাতে বিক্রি তো দূরস্থ নিজেদের সুস্থ রাখতেই মরিয়া হয়ে পড়েছে সকলেই।

উপজেলার মৃৎশিল্পীদের সকলেরই রুটি রোজগার প্রায় বন্ধের পথে। যে সমস্ত ব্যবসায়ীরা আগে থেকে বায়না দিয়ে রাখে তারাও শেষ মুহূর্তে অর্ডার বাতিল করেছে। বহু মানুষই মাটির জিনিস কিনবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার রশুনিয়া ইউনিয়নের বড় আখড়া পালপাড়া গ্রাম, চোরমর্দ্দন বাসাইল, রাঙ্গামালিয়া, শেখরনগর, আবিরপাড়া ও দানিয়াপাড়া পালপাড়া গ্রামে পাঁচশতাধিক পরিবার রয়েছে যারা এই মৃৎশিল্পকে ধরে রেখেছেন।

দানিয়াপাড়া বড় আখড়াও বাসাইলের কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, গত দুই মাস আগে থেকেই পহেলা বৈশাখের প্রস্তুতি চলছিল পালপাড়ায়। তৈজসপত্র, খেলনা তৈরি করতে শুরু করেছিলেন তারা। তবে যে সময়টায় এই ব্যস্ততায় দিন কাটে তাদের ঠিক তখনই সবকিছু পাল্টে গেছে। করোনা ভাইরাসের কারণে জীবনযাত্রা স্থবির এখন। এই অবস্থায় জীবন নিয়েই মানুষ আতঙ্কে রয়েছে বাসন-কোসন কিনবে কে ? তাছাড়া বৈশাখী মেলাও কোথাও হয়নি এবার। ফলে আর্থিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতিতে পড়েছেন তারা। নিধির পাল বলেন, আমাদের পথে বসার অবস্থা এখন।

দীপক পাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের দিকে না তাকালে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবো না।

অধির পাল ও নূপুর পাল বলেন, মাটি কিনে এনে তৈজসপত্র বানাতে হয়। মাটি কিনে রেখেছিলেন কিছু কিছু তৈজসপত্র ও খেলনা বানানো হলেও তা বিক্রি আর হবে না এবার। অনেকের তৈজসপত্র পোড়ানোর চুলাও জ্বলেনি। কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গেল। ধার দেনা করে এই এগুলো তৈরি করেছিলাম। এখন কি হইবো আমাগো?

error: দুঃখিত!