২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রবিবার | রাত ৩:০৩
কম খরচে মুন্সিগঞ্জে উৎপাদন হচ্ছে উন্নতমানের বীজ
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সীগঞ্জে ফুলকপি ও বাঁধাকপির বীজতলা করে কৃষকের মুখে এবার হাসি ফুটতে শুরু করেছে। বর্ষায় জমির ফসল ও গ্রীষ্মকালীন সবজি নষ্ট হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মুন্সীগঞ্জের প্রান্তিক কৃষকেরা শীতকালীন সবজি চাষে জোর দিয়েছেন।
আগাম শীতকালীন সবজি চাষাবাদের জন্য নিচু জমি থেকে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার আগেই জেলার বিভিন্ন স্থানের উঁচু জমিতে শীতকালীন সবজি চাষের পাশাপাশি ফুলকপি ও বাঁধাকপির বীজতলা প্রস্তুত করেন কৃষকেরা। সেই বীজতলায় উৎপাদিত চারা কয়েক দফায় বিক্রি করে অধিক মুনাফা হচ্ছে কৃষকদের। বীজতলা করে অন্যান্য ফসল আবাদের চেয়ে অধিক মুনাফা হওয়ায় বীজতলায় আগ্রহী হচ্ছেন এই অঞ্চলের কৃষকেরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার কয়েক হাজার কৃষক পরিবার এই বীজতলার কাজে জড়িত। বিশেষ করে উঁচু জমিতে বা বাড়ির আঙ্গিনার জমিগুলোতে বীজতলা করা হয়। বীজ বপনের মাত্র ২০ দিনের মধ্যে বীজতলা থেকে চারা বিক্রি করার উপযোগী হয়। এসব বীজতলায় তৈরি ফুলকপি ও বাঁধাকপির চারা মুন্সীগঞ্জ জেলার চাহিদা পূরণ করে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। দেশজুড়ে মুন্সীগঞ্জের বীজতলায় তৈরি ফুলকপি ও বাঁধাকপির চারার কদর বেশি থাকায় চারা বিক্রি করে ভাল দাম পাচ্ছে কৃষক।

সদর উপজেলার বীজতলাগুলোতে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বীজতলার যত্ন নিতে কৃষক এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। কৃষকদের সাথে বীজতলায় নারীদেরও কাজ করতে দেখা গেছে। বিশেষ করে সদর উপজেলার রামপাল, দশকানি, পঞ্চসার, সুখবাসপুর, হাতিমারা, পানাম, রামেরগাও, কেপিপাড়া, বজ্রযোগিনি, রামশিং ও ধলাগাও গ্রামে ব্যাপক পরিমাণে ফুলকপি ও বাঁধাকপির বীজতলা করেছেন কৃষকেরা। এছারা জেলার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার পাইকপাড়া, কান্দাপাড়া, রান্ধনীবাড়ি গ্রামের উঁচু জমিতেও বীজতলা তৈরি করে লাভের মুখ দেখছেন তারা।

প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় উৎপাদন করা চারা ইতোমধ্যে বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। এখন তৃতীয় দফায় উৎপাদিত চারা বিক্রি চলছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। তারা আরও জানান, অনেকে বীজতলায় এসে দরদাম করে কপির চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া স্থানীয় হাটে বাজারেও এসব বীজতলায় উৎপাদিত কপির চারা বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় কৃষক ছাড়াও বিভিন্ন জেলার কৃষক এসব চারা সংগ্রহ করছেন।

সদর উপজেলার সুখবাসপুর গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন মিয়া জানান, ফুলকপি ও বাঁধাকপির আগাম বীজতলা করে লাভবান হয়েছেন তারা। বর্ষার পানিতে ফসল নষ্ট হয়ে তাদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেওয়ার সংগ্রাম করছেন এখন।

সদর উপজেলার বজ্রযোগিনি গ্রামের কৃষক হালিম মুন্সী জানান, বীজতলায় চারা তৈরিতে তাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার কারণে সল্প খরচে কম সার ব্যবহার করে এখানে উন্নত সবল চারা উৎপাদন করছেন তারা।
টঙ্গীবাড়ি উপজেলার রান্ধনীবাড়ি গ্রামের কৃষক মান্নান মিয়া জানান, চারার মান ধরে রাখতে এবং কুয়াশা থেকে রক্ষা করতে বীজতলা ছাউনি দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, এই অঞ্চলের মাটি বীজতলা তৈরির জন্য অধিক উপযোগী। এ কারণে দেশজুড়ে এই অঞ্চলের বীজতলার চারার অনেক কদর।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা মিয়া আল মামুন সাংবাদিকদের জানান, কৃষকদের দক্ষতার কারণে জেলার বীজতলাগুলোতে উন্নতমানের চারা উৎপাদিত হচ্ছে। বীজতলায় কম সার ব্যবহার করে উন্নতমানের বীজ বপনে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

error: দুঃখিত!