২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সোমবার | রাত ৯:৪৩
আওয়ামী লীগকে বন্ধ করে রাখবেন না, এটা বঙ্গবন্ধুর দল- মুন্সিগঞ্জে অ্যাটর্নী জেনারেল
খবরটি শেয়ার করুন:

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, এই বাংলাদেশ সবার, এখানে হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান সবাই সমান।

শারদীয় দূর্গাপূজা উপলক্ষে শনিবার মুন্সিগঞ্জ-২ আসনের দুটি উপজেলায় পূজা মণ্ডপে আর্থিক সহায়তা ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী দুঃস্থ নারীদের মধ্যে শাড়ি বিতরণকালে একথা বলেন তিনি।

মাহবুবে আলম বলেন, “শাসনতন্ত্রের সবচেয়ে বড় কথাটি হল-এদেশ ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক একটি দেশ। এই ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার জন্য আমরা বিভিন্ন সময় আইনি লড়াইও করেছি, এখনও করে যাচ্ছি।”

দুপুরে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ স্থানীয় পূজা মণ্ডপে আর্থিক সহায়তা গ্রহণ ও শাড়ি বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

বিকালে টঙ্গীবাড়ী উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনেও একই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পূজা উদযাপন পরিষদ।

দুই উপজেলার মধ্যে লৌহজং উপজেলার ৩২টি এবং টঙ্গীবাড়ী ইউনিয়নের ৪৭টি মণ্ডপে আর্থিক সহায়তা এবং প্রায় সাড়ে তিনশ হিন্দু দুঃস্থ নারীদের মধ্যে কাপড় বিতরণ করেন মাহবুবে আলম।

পূজা উদযাপন পরিষদ লৌহজং উপজেলার সভাপতি গোবিন্দ চন্দ্র দাশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “এই দেশে সবাই স্বাধীনভাবে তার ধর্মীয় উৎসব পালন করবে। শারদীয় দুর্গোৎসব হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পালন করে, আর আমরা উৎসব হিসেবে তাতে অংশগ্রহণ করি। ধর্ম যার যার উৎসব সবার। এই উৎসবে আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে সামান্য কিছু আর্থিক সহযোগিতা করার জন্য এখানে এসেছি।”

মাহবুবে আলম নিজের ইউনিয়নে প্রতিবছর দুর্গাপূজায় দুঃস্থ নারীদের মাঝে কাপড় বিতরণ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় এবার কিছুটা বৃহৎ পরিসরে এই বস্ত্র বিতরণ ও আর্থিক সহযোগিতা।

তিনি বলেন, “আমার জীবনের সবচেয়ে বড় গর্ব হল, আমি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের সঙ্গে যুক্ত থেকেছি। জেল হত্যা মামলার সঙ্গে যুক্ত থেকেছি। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সঙ্গে আইনজীবী হিসেবে যুক্ত ছিলাম, আছি। এটাই আমার জীবনের বড় স্বার্থকতা।

“প্রতিটা মুহূর্তে হুমকি, ভয় থাকার পরও এ মামলা থেকে সরে দাঁড়াইনি। আমাকে কাফনের কাপড় পাঠানো হয়েছে, আমাকে হুমকি দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এমনকি আমার পরিবারের সবাইকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। তারপরও যুদ্ধাপরাধের মামলা থেকে আমাকে বিরত রাখতে পারেনি। এখন তারা (স্থানীয় প্রভাবশালীরা) অন্য ভয় দেখিয়ে আমাকে বিরত করবে? আমি সবার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে চাই। এজন্যই আমি এখানে এসেছি।”

আওয়ামী লীগ ‘বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার দল’ মন্তব্য করে এই দলকে কুক্ষিগত না করার আহ্বান জানান মাহবুবে আলম।

তিনি বলেন, “অন্যান্য যারা আছেন ক্ষমতাসীন, যারা আওয়ামী লীগকে কুক্ষিগত করতে চান তাদের প্রতি আমার বক্তব্য হল ‘মুক্ত করো হে বন্ধন’। আওয়ামী লীগকে বন্ধ করে রাখবেন না, এটা বঙ্গবন্ধুর দল, এটা শেখ হাসিনার দল।”

“যে-ই নির্বাচনে আসতে চায় না কেন, সেটা আমিই হই বা অন্য যে কেউ হোক, সবাইকে আসতে দিন। তারা (স্থানীয় জনগণ) বিচার-বিবেচনা করুক কে উপযুক্ত। তাদের বন্ধ করে রাখার ক্ষমতা কারও নেই। কাউকে আবদ্ধ করে রাখা যাবে না। আবদ্ধ করে রাখা উচিৎ না। সবাই যার যার বিবেককে প্রয়োগ করতে শিখুন। ভালো-মন্দ বুঝতে শিখুক। ভালো-মন্দ বুঝে নিজের বিবেকের প্রয়োগই অাসল গণতন্ত্র। কেউ যদি মনে করে আমাকে নানা রকম গিরিঙ্গিবাজি করে বিরত রাখবে, তারা ভুল চিন্তা করছেন।”

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “১৫ আগস্টের গণভোজে অর্থ দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ অফিসে (স্থানীয়) এসেছিলাম। দুই লাখ টাকা দিয়েছিলাম। সেখানে কিছু লোক আমার সে অনুদান গ্রহণ করেননি। তারা ভেবেছিল, আমাকে এভাবে বিদায় করে দেবে। আমি সে গণভোজ করেছিলাম ব্যক্তিগত উদ্যোগে। সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে।”

চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়েও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম। মিয়ানমারে এক সময় গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে খ্যাতি কুড়ানো আং সান সুচির শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

মাহবুবে আলম বলেন, “রোহিঙ্গা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দরকার হলে ভাগাভাগি করে থাকব। এ কথাটি যে বলে তার তো নোবেল পাওয়া একান্ত প্রয়োজন। যখন ড. ইউনূসের মামলা হয় তখন আমি বলেছিলাম, এ দেশে শেখ হাসিনাই নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। কারণ তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তি করেছিলেন।

“এটা আজ প্রমাণিত হয়েছে, অং সান সুচি নোবেলের যোগ্য নয়। তিনি নারী পুরুষদের হত্যা করে দেশ থেকে বের করে দিচ্ছেন। আর যিনি ভাগাভাগি করে থাকার কথা বলেছেন, তারই (শেখ হাসিনার) নোবেল পাওয়া উচিত।”

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে লৌহজং উপজেলার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সিরাজুল আলম, ঢাকা মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ডা. মো. আবু ইউসুফ ফকির, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাকির খান, লৌহজং মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মাহবুবুল আলম, লৌহজং আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

error: দুঃখিত!