অবশেষে গজারিয়ার জামালদির মেঘনার শাখা নদীর ওপর নতুন সেতু হচ্ছে। সেতুটির ডিপিপি একনেকের সভায় অনুমোদন হয়েছে।
অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে পরিচিত গজারিয়া উপজেলার বৃহৎ এলাকায় এই নিচু সেতুর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছিল। বর্ষায় সেতুর নিচ দিয়ে নৌযান চলাচল করতে পারছে না। মেঘনার শাখা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটির ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স মাত্র ১২ ফুট। তাই লঞ্চ বা জাহাজ যাওয়া তো দূরের কথা, ট্রলারও নিচ দিয়ে যাতায়াত করতে সমস্যা হচ্ছে। এতে নৌপথ থাকা সত্ত্বেও সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষ এবং শিল্পকারখানাগুলো।
উৎপাদিত কৃষিপণ্য এবং শিল্পপণ্য কম খরচে নৌপথের পরিবর্তে বিকল্প পথে পরিবহন করতে হচ্ছে। আর কৃষি উপকরণ এবং কাঁচামালা আনতেও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভাটেরচর এবং আশপাশের এলাকার প্যারাগন গ্রুপের পেপার মিল এবং পোল্ট্রি ফিড, টিকে গ্রুপের নানা শিল্পপ্রতিষ্ঠান, বসুন্ধরা পেপার, সিটি গ্রুপ, খান ব্রাদার্স, আনোয়ার স্টিল মিলসহ বড় আকারের অন্তত ২০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেতুটির কারণে।
এছাড়া এ নিচু সেতুর কারণে অনেকে শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু করতে পারছে না। এছাড়া প্রায় ১৪০ মিটারের এই সেতুটির প্রশস্ত মাত্র সাড়ে ৮ ফুট। এত সুরু সেতুর উপর দিয়ে পাশাপাশি দুটি যান চলাচলও কঠিন।
এই রাস্তাটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক মেঘনা সেতুর পয়েন্ট থেকে জামালদি এবং গজারিয়ার সদর হয়ে কালী বাজারের ফেরিঘাট পর্যন্ত যুক্ত। এই ফেরিঘাটের ওপারের রাস্তাটি উত্তর মতলব হয়ে চাঁদপুর জেলা সদরের সঙ্গে সংযুক্ত। কিন্তু সেতুটি সরু হওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না।
এ নিয়ে আমার বিক্রমপুর ``গজারিয়ায় নিচু সেতুর কারনে দূর্ভোগে অর্থনীতি!’ শিরোনামে ২০১৬ সালের ২৩ আগষ্ট একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
তবে সুখবর হচ্ছে- এখন এসব কিছুরই অবসান ঘটতে যাচ্ছে।
গজারিয়া উপজেলা প্রকৌশলী আরজুরুল হক আরজু জানান, জামালদি-টেঙ্গারচর ইউপি অফিস ভায়া বড় ভাটেরচর সড়কের ১৭৫ মিটার চেইনেজে এ জামালদি বেইলি ব্রিজটি নির্মিত হয়েছিল। সেতুটির ৯ পিলারে ৮টি স্প্যান (এক পিলার থেকে অন্য পিলারের দূরত্বের অংশ)। এর মধ্যে মাঝখানের চারটি স্প্যান স্টিলের বেইলি। আর বাকি অংশ আরসিসি। বর্ষায় সেতুটি পানি থেকে প্রায় ১২ ফুট ফাঁকা থাকে মাত্র। কিন্তু এ পরিমাণ ফাঁকায় বড় ট্রলারও ঢুকতে পারছে না।
তিনি জানান, গুরুত্বপূর্ণ সেতুটির ডিপিপি গত ৪ নভেম্বরের একনেকের সভায় অনুমোদন হয়েছে। পরে ৪ ডিসেম্বর মন্ত্রীর দফতর ঘুরে এই অনুমোদনপত্র সম্প্রতি গজারিয়ায় এসে পৌঁছলে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।
ভুক্তভোগীরা এই সেতুটি পুনর্নির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহণ করায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছে।
প্রকৌশলী আরজুরুল হক আরজু জানান, নতুন সেতুটি ডাবল লেনে ১৮ ফুট প্রশস্ত হবে। এর প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিফতরের মাধ্যমে শীঘ্রই নতুনভাবে সেতুটির কাজ শুরু হবে।
লন্ডন প্রবাসী এএমকে শামীম খান জানান, তিনি ভাটেরচরে শিল্পপ্রতিষ্ঠান করার জন্য প্লট কিনেছেন। কিন্তু শুধু এ সেতুটি নিচু থাকার কারণে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করতে পারছেন না।
শামীম খান জানান, এ সেতুর কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশের প্রতিষ্ঠানগুলোতে মেঘনা নদী থেকে নৌযান যাতায়াত করতে পারছে না। অথচ এ মেঘনা নদী ও মেঘনা শাখানদী খুব কাছে থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানগুলো এর সুফল পাচ্ছে না। সরকারের আসায় অনুমোদন দিয়েছে। তিনি আশা করছেন গজারিয়া উপজেলার প্রধান সড়কের সেতুটির কাজ শীঘ্রই শুরু হবে।