৯ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রবিবার | রাত ৯:১৫
মুন্সিগঞ্জের আইকনিক স্থাপনা ‘ইদ্রাকপুর কেল্লা’, জেনে নিন সময়সূচিসহ বিস্তারিত
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, সীমান্ত হাসান রাকিব (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগঞ্জ জেলার আইকনিক স্থাপনা হচ্ছে ‘ইদ্রাকপুর কেল্লা’ বা Idrakpur Fort। শুধু তাই নয়- এটি বাংলাদেশের অন্যতম মনোহর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি। দেশ ও বিদেশের বহু পর্যটক নিয়মিত আসেন এখানে।

অনেকেই জানতে চান- কিভাবে আসবেন, টিকেট কত, কবে বন্ধ থাকে, পিকনিক করতে চাইলে কার সাথে যোগাযোগ করতে হবে ইত্যাদি।

জেলা ব্র্যান্ডিংয়ে ইদ্রাকপুর কেল্লা:

প্রথমেই জানিয়ে রাখি মুন্সিগঞ্জ জেলা ব্র্যান্ডিং হচ্ছে- ‘প্রত্ননগরী মুন্সিগঞ্জ’ বা `The City of Archaeological Wonders’। এই ব্রান্ডিং এর বিষয় নির্বাচন ও ডিজাইনের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে মাথায় রাখা হয়েছে ইদ্রাকপুর কেল্লাকে।

মুন্সিগঞ্জ জেলা ব্র্যান্ডিং লোগো। ছবি- জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইট।

লোগোর ঠিক মাঝখানে ব্যবহার করা হয়েছে মুন্সিগঞ্জের ইংরেজি বানানের প্রথম অক্ষর ‘এম’। এর আকার এমনভাবে রাখা হয়েছে যা মুন্সিগঞ্জের তিনটি প্রধান নদী পদ্মা, মেঘনা ও ধলেশ্বরীর প্রবাহমানতাকে ফুটিয়ে তুলেছে।

ইদ্রাকপুর কেল্লার গায়ে খোদাইকৃত নামফলক। ছবি: আমার বিক্রমপুর।

মুন্সিগঞ্জের আইকনিক প্রাচীন স্থাপনাগুলোর মাঝে প্রধানতম স্থাপনা হলো মুসলিম শাসন আমলের ‘ইদ্রাকপুর কেল্লা’। এ জেলার মানুষ এই স্থাপনাটিকে বুকে ধারণ করার পাশাপাশি তাদের সভ্যতার পরিচায়ক মনে করে। তাই লোগোর সবচেয়ে উপরে ব্যবহার করা হয়েছে বিখ্যাত ‘ইদ্রাকপুর কেল্লা’ এর উপরি অংশের একটি আকৃতি যা লোগোটিকে দিয়েছে অনন্য মাত্রা। আর সবকিছু মিলিয়ে লোগোটিতে পোড়া মাটির রঙ ব্যবহার করা হয়েছে যা মুন্সিগঞ্জের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহকে নির্দেশ করে।

চলুন সহজভাবে জেনে নেই ইদ্রাকপুর কেল্লার ইতিহাস:

ইটের তৈরি মুন্সিগঞ্জ শহরের বর্তমান কাচারিঘাট এলাকার ঐতিহাসিক মোঘল স্থাপনা ইদ্রাকপুর কেল্লা বা দুর্গ।  তৎকালীন মগ জলদস্যু ও পর্তুগিজ আক্রমণের হাত থেকে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ সমগ্র এলাকাকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে বাংলার সুবাদার ও সেনাপতি মীর জুমলা ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলা সদরের তৎকালীন ইছামতি নদীর তীরে ইদ্রাকপুর নামক স্থানটিতে এটি নির্মাণ করেন।

ধারণা করা হয়, এ দুর্গকে ঘিরেই ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে মুন্সিগঞ্জের বসতি। দুর্গটির এক থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে ধলেশ্বরী, মেঘনা ও শীতলক্ষ্যা নদী এখনো বহমান।

ইদ্রাকপুর কেল্লা নিয়ে আমার বিক্রমপুরের ভিডিও প্রতিবেদন:

দুর্গটি নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জ ও সোনাকান্দা দুর্গের চেয়ে আয়তনে কিছুটা ছোট। সুউচ্চ প্রাচীরবিশিষ্ট এই দুর্গের প্রত্যেক কোনায় রয়েছে একটি বৃত্তাকার বেষ্টনী।

২০১৫ সালে কেল্লাটির কেন্দ্রস্থলের মেঝে পরিষ্কার করার সময় প্রায় এক ফুট ভারি চুন সুড়কির  মেঝের নিচ থেকে ৩৬০ বছর আগের প্রচুর মাটির কলস বেরিয়ে আসে। এর ভেতরে স্বর্ণ-রুপা, টাকা-পয়সা পাওয়া গেছে এরকম গুজব সেসময় সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। মূলত ব্রিটিশ আমলের এই কলসগুলো কেল্লার শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ও ভূমিকম্পে যাতে কোন ক্ষতি না হয় সেজন্য সারিবদ্ধভাবে মেঝের নিচে রাখা হয়েছিল। কেল্লার মেঝের পাশের ডান দিক থেকে একটি সিড়ি নেমে গেছে নিচের দিকে।

ধারণা করা যায় এটি এই কেল্লা থেকে নিরাপদে বের হওয়ার কোন গোপন পথ। মূল কেল্লায় ঢুকতে গেলেই চোখে পড়বে একটি রহস্যেঘেরা সুরঙ্গ। যেটি ঘিরে প্রচলিত রয়েছে নানারকম শ্রুতিকথা।

অনেকেই মনে করেন, ঢাকার লালবাগ কেল্লার সাথে এই সুরঙ্গ দিয়ে যাতায়াত করা যেত। তবে এই তথ্য সঠিক বলে মনে করেন না অনেকেই।

বর্তমানে কেল্লাটিকে সংরক্ষণের অংশ হিসেবে এর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পাল্টেছে ভেতরের পরিবেশ। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে লোকবল নিয়োগ দিয়ে চালু করা হয়েছে টিকেট ব্যবস্থা।

কেল্লার অভ্যন্তরে ‘ইদ্রাকপুর দুর্গ জাদুঘর’। ছবি: আমার বিক্রমপুর।

অন্যদিকে, কেল্লার পাশে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু নিয়ে প্রত্নত্বত্ত অধিদপ্তর নির্মাণ করেছে মনোমুগ্ধকর ইদ্রাকপুর দুর্গ জাদুঘর। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিনই কেল্লা ও যাদুঘরে আসছেন দর্শনার্থীরা।

কেল্লার সামনে সাটানো সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। ছবি: আমার বিক্রমপুর।

ইদ্রাকপুর কেল্লার সময়সূচি:

ইদ্রাকপুর কেল্লা প্রতি সপ্তাহের রোববার পুরোপুরি বন্ধ থাকে। পরদিন সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। দেড়টার পর থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

এছাড়া সপ্তাহের বাকি ৫ দিন, অর্থাৎ শনিবার, মঙ্গলবার, বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে এই দিনগুলিতে দুপুর দেড়টা থেকে দুইটা পর্যন্ত সাময়িক বিরতি থাকে। শুক্রবার দুপুরে বন্ধের সময় দুপুর ১২ টায় শুরু হয়ে শেষ হয় দুপুর ২ টায়।

এছাড়া যেকোন বড় উৎসবের দিন ইদ্রাকপুর কেল্লা দর্শনার্থীদের জন্য রাখা হয়। যেমন- দুই ঈদ, পূজা। তবে এসব দিনের পরদিন কেল্লা বন্ধ থাকে।

কেল্লার ভেতরে কোন খাবার বিক্রি করা হয় না। তাই বাহির থেকে খাবার নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করা যায়। এছাড়া পাশে যে জাদুঘরটি রয়েছে সেখানে ছবি ও ভিডিও ধারণ করা নিষেধ।

ইদ্রাকপুর কেল্লার অভ্যন্তরে প্রবেশের জন্য প্রতিজন প্রাপ্তবয়স্ক বাংলাদেশীর জন্য প্রবেশ টিকেট ফি ২০ টাকা। এক বছর বয়সী থেকে শুরু করে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের প্রবেশ ফ্রি।

ক্লাস ওয়ান থেকে টেন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য টিকেট ফি ১০ টাকা। (তবে অবশ্যই স্কুল ড্রেস অথবা আইডি কার্ড দেখাতে হবে)।

প্রাপ্তবয়স্ক বিদেশী পর্যটকদের জন্য প্রতিজন প্রবেশ টিকেট ফি ৩০০ টাকা। তবে সার্কভুক্ত বিদেশি (ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান) পর্যটকদের জন্য প্রবেশ টিকেট ফি ১০০ টাকা।

উল্লেখিত প্রবেশ ফি দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করার পর ইদ্রাকপুর দুর্গ জাদুঘরে প্রবেশে আলাদা কোন টিকেট নিতে হয় না।

ইদ্রাকপুর কেল্লার নিজস্ব কোন ওয়েবসাইট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পেইজ নেই। তবে কেল্লা সংক্রান্ত যে কোন প্রয়োজনে যোগাযোগ করা যাবে এই নাম্বারে- 01836651162 (ওমর ফারুখ, অফিস প্রধান, ইদ্রাকপুর কেল্লা।)

ঢাকা থেকে যেভাবে আসবেন:

মুন্সিগঞ্জ জেলা শহরের পুরাতন কাচারি এলাকায় এভিজেএম (আলবার্ট ভিক্টোরিয়া যতীন্দ্র মোহন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়) স্কুলের পাশে ইদ্রাকপুর কেল্লার অবস্থান। রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান থেকে সরাসরি মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর সেতু পর্যন্ত নন এসি (দিঘীরপাড় ট্রান্সপোর্ট) ও এসি বাস (বিআরটিসি) চলাচল করে। ভাড়া নেবে ৮০-১২০ টাকা পর্যন্ত।

মুক্তারপুর সেতুর মুন্সিগঞ্জ প্রান্তে নেমে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে সরাসরি আসা যাবে ইদ্রাকপুর কেল্লার সামনে। ভাড়া নেবে ৫০-৬০ টাকা পর্যন্ত।

এছাড়া ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে শ্রীনগর-সিরাজদিখান ঘুরে আসা যায় ইদ্রাকপুর কেল্লায়।

ইদ্রাকপুর কেল্লার প্রধান প্রবেশ গেইট। ছবি: আমার বিক্রমপুর।
error: দুঃখিত!