মুন্সিগঞ্জ, ২৪ এপ্রিল, ২০২০, তানজিল হাসান (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জ জেলার পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন মসজিদে গত তিনদিন ধরে রাতের বেলায় ‘ডাকাত পড়েছে’ বলে মাইকিং হচ্ছে।
গত সোমবার দিবাগত রাতে প্রথম লৌহজং এর একটি মসজিদ থেকে ‘এলাকায় ডাকাত পড়েছে। সবাই সতর্ক থাকুন’ বলে প্রথম ঘোষণা আসে। পরে একে একে শ্রীনগর, সিরাজদিখান, টংগিবাড়ী ও মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মসজিদগুলোর মাইকেও অনুরূপ ঘোষণা আসতে থাকে। এতে আতঙ্কে রাতভর জেগে থাকেন এলাকাবাসী।
অনেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন। এরপরে মঙ্গলবার ও বুধবারও একই ঘোষণা আসে বিভিন্ন মসজিদ থেকে।
স্কুল শিক্ষক খালেদ হাসান জানান, আমার বাসা সদর উপজেলার মানিকপুরে। রাত বারোটার দিকে মসজিদ থেকে ‘ডাকাত পড়েছে’ বলে মাইকিং করতে শুনি। একাধারে তৃতীয় রাত এমন মাইকিং শুনতে পাই।
তিনি আরও বলেন, ‘‘মসজিদের মাইকে আরও বলা হচ্ছে, ‘সন্দেহ হলে পিটিয়ে মেরে ফেলবেন, দায় দায়িত্ব আমার।’’ তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারেননি তিনি।
মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে মসজিদের মাইকিংয়ের খবর অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেন। আতঙ্কিত কেউ কেউ ফোন করে খোঁজখবর নেন স্বজনের। অনেকে এই প্রতিবেদককে ফোন করে ডাকাত আসার খবরের সত্যতা জানতে চান।
তবে, গত তিনদিনে জেলার কোথাও ডাকাতি হয়নি বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
এদিকে, মসজিদের মাইকে এমন ঘোষণা দেওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারটি মসজিদের তিন ইমাম ও এক মুয়াজ্জিনকে গত (বুধবার) রাতে পুলিশ আটক করে।
এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটায় বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের থানায় আনা হয়েছে। তবে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন বলেন, আমরা নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি মসজিদ থেকে কেউ যাতে গুজব ছড়াতে না পারে। এখন করোনা পরিস্থিতিতে সকল পুলিশ সদস্য দিনরাত ব্যস্ত থাকছে। তার ওপর এ ধরনের গুজব মোকাবিলা করতে হচ্ছে পুলিশকে। যেহেতু এ ঘটনাতে বেশিরভাগ ইমাম জড়িত তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেও অনেকবার চিন্তাভাবনা করতে হয়। কয়েকটি স্থানে তাদের আটক করতে গেলে স্থানীয়দের বাধার সম্মুখীন হয় পুলিশ। বিষয়টি খুব সেনসিটিভ হওয়ায় শুধু পুলিশ নয়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ ইসলামিক ফাউন্ডেশনকেও ভূমিকা রাখতে হবে।
মুন্সিগঞ্জ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক আবুল কাশেম বলেন, মুন্সিগঞ্জ জেলায় প্রায় ১৫শ’ মসজিদ আছে। এরমধ্যে সাতশ’ মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আমরা সকল মসজিদেই জানিয়ে দিয়েছি যে, ডাকাতের কোনও বিষয়ে যেন মসজিদ থেকে মাইকিং করা না হয়। বরং স্থানীয় ওসি এবং ইউএনওকে যেন অবহিত করে।
এদিকে, এ গুজবের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেজে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়, প্রশাসন এ ধরনের প্রচারণাকে তদন্ত করে দেখেছে। দেখা গেছে, মানুষকে সতর্ক করতে গিয়ে গুজব রটিয়ে বরং মানুষকে ভীত করে তোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন কোনোভাবেই মসজিদের মাধ্যমে এই ধরনের প্রচারণাকে সমর্থন করে না এবং যে সকল মসজিদে এই ধরনের প্রচারণা হচ্ছে সেগুলোকে বিরত থাকার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়েছে।