১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শুক্রবার | রাত ৮:৫৬
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
মশা নিয়ন্ত্রণে মুন্সিগঞ্জের দুই পৌরসভা কতটুকু প্রস্তুত?
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ২২ মে, ২০২২, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)

আসছে বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু ঝুঁকি ছাড়াও নানাবিধ মশাবাহিত রোগ মোকাবেলায় এডিস মশা সহ অন্য প্রজাতির মশা নিয়ন্ত্রণে মুন্সিগঞ্জের নাগরিকদের জন্য নানা প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে মুন্সিগঞ্জের দুই ‘ক’ শ্রেণীর পৌরসভা।

মশা তাড়াতে ১০.৮৫ বর্গকিমি আয়তনের প্রায় ৬২ হাজার জনসংখ্যার মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার অবস্থান তুলনামুলক ভালো থাকলেও ১০.৩২ বর্গ কিমি আয়তনের প্রায় ৫৬ হাজার জনসংখ্যার মিরকাদিম পৌরসভার অবস্থা শোচনীয়।

মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা ও মিরকাদিম পৌরসভার মেয়রের সাথে কথা বলে জানা গেছে এমন তথ্য।

তবে মশা নিয়ন্ত্রণে এই কার্যক্রম যথেষ্ট কি না তা নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে রয়েছে নানা প্রশ্ন।

যদিও গেল বছরগুলোতে জেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায়নি। তবু চলতি বছর রাজধানী ঢাকা সহ দেশের শহর এলাকায় পূর্বের তুলনায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে বলে সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় জানিয়েছে খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

অন্যদিকে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বর্তমানে ডেঙ্গু পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক জানিয়ে অদুর ভবিষ্যতে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় প্রস্তুত আছে বলে দাবি করেছে।

নাগরিকরা বলছেন, মশা নিয়ন্ত্রণে শুধুমাত্র ঔষধ ছিটিয়ে দায় এড়িয়ে গেলে হবে না। যেসব স্থানে উন্মুক্তভাবে ময়লা-আবর্জনা ও পানি জমিয়ে রেখে রোগের জীবাণু তথা ডেঙ্গু ঝুঁকি তৈরি করা হচ্ছে সেসব স্থান ও ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণের দাবি তাদের।

এইছাড়া ডেঙ্গু ঝুঁকি মোকাবেলা ও মশাবাহিত রোগ এবং মশার প্রজনন স্থানগুলো ঝুঁকিমুক্ত করা বাস্তবিকভাবে সফল হবে না বলে মনে করছেন তারা।

মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার খালইস্ট এলাকার বাসিন্দা ম. সুমন বলেন, শুধুমাত্র ঔষধ ছিটিয়ে ডেঙ্গু ঝুঁকি মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। মুন্সিগঞ্জ শহরে প্রচুর এসি ব্যবহার হয়। এসি থেকে নির্গত পানি অনেক সময় জমে থাকে। সেগুলো সহসাই অপসারণ করা হয় না। পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিক ড্রাম, বালতি, নির্মানাধীন বাড়ির খোলা ট্যাঙ্ক, ফুলের টব এছাড়াও অনেক পরিত্যক্ত জমি আছে, সেখানে দিনের পর দিন পানি জমে থাকলেও সেগুলো অপসারণে উদাসীন নাগরিকরা। পৌরসভা কতৃপক্ষের উচিৎ এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া ও প্রচারণার মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করা।

মিরকাদিম পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাসেল রহমান বলেন, দায়সারাভাবে ঔষধ ছিটিয়ে দায়িত্ব শেষ করা যাবে না। মিরকাদিম পৌরসভার ময়লা পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা খুবই নাজুক। শেষ কবে ময়লা সরানোর গাড়ি এসেছে তাও মনে করতে পারছি না। পুরো পৌরসভায় যত্রতত্রভাবে ময়লা-আবর্জনা পরে আছে। বর্ষা মৌসুম আসার আগেই পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি-ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। এসবের বিরুদ্ধে জোর ব্যবস্থা নিতে হবে পৌর কতৃপক্ষের।

মিরকাদিম পৌরসভার মেয়র আব্দুস সালাম জানান, ডেঙ্গু ঝুঁকি মোকাবেলায় ইতিমধ্যে পৌরসভায় দুই ড্রাম ঔষধ এনে মজুদ করা হয়েছে। আগামী এক মাস ঔষধ ছিটানো হবে। ইতিমধ্যে দেয়া শুরুও করেছি। গত ৩ দিন ধরে ঔষধ ছিটানো হচ্ছে। প্রতিদিন বিকাল ৪ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬ জন কর্মী পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ২ টি মেশিনের মাধ্যমে ঔষধ ছিটাবে। ডেঙ্গু ঝুঁকি তৈরি করছে এরকম পরিবেশের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা বা অভিযান পরিচালনা করা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে ঔষধ দেয়া শেষ করি। ঔষধ দিলে কি আর অভিযানের দরকার আছে?

মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম জানান, মশা নিয়ন্ত্রণে এবছর বাড়তি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ৯ টি মেশিনের মাধ্যমে ২৪ জন কর্মী মশা নিয়ন্ত্রণে ঔষধ ছিটাবে। এছাড়াও ড্রেনের মশার লার্ভা মারার জন্য এই টিমকে আরও জোরদার করা হয়েছে। ৬ জন কর্মী বাড়িয়ে সর্বমোট ২৪ জন কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যেসব স্থানে পানি জমে মশার লার্ভা তৈরি হয় সেখানেও আমরা কিটনাশক ছিটাবো। এছাড়া ওয়ার্ড পর্যায়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সভা করা হচ্ছে। শহরব্যাপী একটি কমিটিও রয়েছে। সেই কমিটিগুলোতেও আমরা এ নিয়ে আলোচনা করবো।

মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ফয়সাল বিপ্লব বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে গেল বছরগুলোতেও আমরা ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছিলাম। যার ফলশ্রুতিতে মুন্সিগঞ্জ পৌরসভায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হয়নি। শুধু মশা নিয়ন্ত্রণই নয় আবর্জনা পরিস্কার করা, ঝোপঝাড় পরিস্কার রাখা সেসব বিষয়েও আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। নাগরিকদের পক্ষ থেকে যে দাবিগুলো করা হয়েছে সেটি সম্পর্কে আমি অবগত।

মুন্সিগঞ্জের সিভিল সার্জন মঞ্জুরুল আলম জানান, এই মুহুর্তে জেলার কোথায়ও ডেঙ্গু বা মশাবাহিত কোন রোগে আক্রান্ত রোগী নেই। তবে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে ডেঙ্গু সহ মশাবাহিত অন্যান্য আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায়।

তিনি জানান, আমাদের দেশে মশার মাধ্যমে ৫টি রোগ হয়। সেগুলো হচ্ছে, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এবং জাপানিজ এনসেফালাইটিস। বর্ষা মৌসুমে মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। তাই এই মৌসুমে মশা নিয়ন্ত্রণে বাড়তি সতর্কতা নেয়া হয়।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) মুন্সিগঞ্জের সভাপতি তানভির হাসান বলেন, শুধু যে পৌরসভা কতৃপক্ষের উদ্যোগে ডেঙ্গু ঝুঁকি রোধ করা সম্ভব তা নয়, পৌরবাসীদের জনসচেতনতাই এখানে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। নিজের বাসা, নিজের আঙিনা পরিস্কার না রাখলে শুধু ডেঙ্গু নয় আরও অনেক রোগবালাইয়ে ঝুঁকি তৈরি হয়। অন্যদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পরে রোগীদের চিকিৎসায় স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

জেলা নাগরিক সমন্বয় পরিষদের আহবায়ক সুজন হায়দার জনি বলেন, প্রথমে আমাদের প্রত্যেকের নিজেদের উদ্যোগে সচেতন হতে হবে। আমাদের বাসা-বাড়ি পরিস্কার রাখতে হবে। কোথাও দীর্ঘদিন ধরে পানি জমি আছে কি না সেগুলো খেয়াল রাখতে হবে। এর পাশাপাশি পৌরসভা কতৃপক্ষগুলোরও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। তাহলে ডেঙ্গু ঝুঁকি মোকাবেলা অনেকটা সহজ ও কার্যকর হবে।

error: দুঃখিত!