৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রবিবার | দুপুর ১২:৪৩
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
৫ বোনের এক ভাই, ঋণে জর্জরিত আন্দোলনে প্রাণ যাওয়া মুন্সিগঞ্জের ফরিদের পরিবার
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ফয়সাল হোসেন (আমার বিক্রমপুর)

প্রতিদিন বাড়িতে মা-বাবার কাছে অন্তত দুবার ফোন দিয়ে কথা বলতেন মুন্সিগঞ্জের মো. ফরিদ শেখ (৩০)। পেশায় শ্রমিক ফরিদ রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি ফলের আড়তে কাজ করতেন। একসময় ছাত্রদলের রাজনীতি করা ফরিদ ৪ আগস্ট মাকে চারবার ফোন দিয়েছেন। প্রতিবার ফোনে মাকে দেশের অবস্থা জানিয়ে সতর্ক করেছেন। বাবা ও ছোট ভাইকে বাড়ি থেকে বাইরে যেতে নিষেধও করেন। কিন্তু ওই দিন নিজে আন্দোলনে গিয়ে নিহত হন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ফরিদ শেখের (৩০) মা আলেয়া বেগম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘আমাগো সাবধানে থাকতে কইয়া নিজে আন্দোলনে গিয়ে জীবন দিল। পোলাডার পেটে গু.ল্লি কইরা না.ড়ি.ভুঁড়ি ছিঁ.ড়া দিল। দুই দিন হুঁশ ছাড়া বাইচ্চা আছিল। ৬ আগস্ট কিছু না কইয়াই মইরা গেল।’

ফরিদ মুন্সিগঞ্জের সদর উপজেলার সুখবাসপুর এলাকার সুলতান শেখের ছেলে। সাত ভাই-বোনের মধ্যে ফরিদ ভাইদের মধ্যে বড় ছিলেন। আলেয়া বেগম বলেন, ‘ফরিদ ৫ মেয়ের পর হইছে। আমার খুব আদরের পোলা। পোলাডাও আমারে ছাড়া কিছু বুঝত না। দেশের লাইগা আন্দোলনে গেল। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের মাইনষেরা মাইরা ফালাইল।’

ফরিদের বাবা সুলতান শেখ বলেন, ‘আমাগো খুব অভাব-অনটনের সংসার। ফরিদ ব্যবসা করার লাইগা ১১ লাখ টাকা ধার করছিল। ব্যবসায় মাইর খাইয়া যাত্রাবাড়ী ওর চাচাতো ভাইগো দোকানে এক বছর আগে কাজ লইছিল। দুই লাখ টাকা ধার শোধ করছিল। এখন আমাগো সংসারই তো ঠিকমতো চলব না। ধারের টাকা কেমনে শোধ করমু?’

ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে সুলতান শেখ বলেন, ‘ফরিদ ৪ আগস্ট সকালে আড়তে কাজ করছিল। দুপুর ১২টার দিকে ওর ফোন থেকে একটি ফোন আসে। ফোন রিসিভ করতেই অচেনা একজন বলল, ফরিদের পেটে গুলি লাগছে। ওরে হাসপাতালে নিতাছে। আমরা যেন তাড়াতাড়ি যাই। ওই দিন ঢাকার অবস্থা অনেক খারাপ আছিল। রোগী আর লাশে ভরা। কয়েকটা হাসপাতালে নিয়াও চিকিৎসা দিতে পারি নাই। শেষে মুগদা হাসপাতালে জ্ঞানহীন অবস্থায় ভর্তি করাই। পরদিন একবার চোখ খুইল্লা তাকাইয়া জিগাইল, দেশের কী অবস্থা। ওই দিনই বেলা ১১টার দিকে মারা যায়।’

সম্প্রতি সকালে ফরিদদের বাড়িতে গেলে জরাজীর্ণ একটি টিনের ঘর দেখিয়ে জানানো হয়, ওই ঘরেই থাকতেন ফরিদ। ফরিদের বিছানায় বসে স্বজনদের সঙ্গে ফরিদের স্মৃতিচারণা করছিলেন তাঁর বাবা-মা। পাশেই বসে ছিলেন ফরিদের চাচাতো ভাই রবিউল ইসলাম। তাঁদের আড়তে কাজ করতেন ফরিদ।

রবিউল ইসলাম বলেন, জুলাই মাসে দেশে যখন আন্দোলন শুরু হলো, তখন থেকে ফরিদ আন্দোলনে যেতেন। ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত আড়তে ব্যস্ত থাকতেন। কাজ শেষ করে তাঁদের না জানিয়ে আন্দোলনে চলে যেতেন। বিষয়টি জানতে পেরে ওকে নিষেধ করতেন। যখন বলতেন, চুপ করে শুনতেন। পরদিন আবার আন্দোলনে চলে যেতেন।

ফরিদ শেখের আড়াই বছরের একটি মেয়ে আছে। স্ত্রী ও সন্তানের কথা জিজ্ঞেস করতেই স্বজনেরা জানালেন, চার বছর আগে ফরিদকে বিয়ে করান। মৃত্যুর পর পাওনাদাররা বাড়িতে আসতে পারেন ভেবে তাঁর স্ত্রী ইতি আক্তারকে বাবার বাড়িতে নিয়ে গেছেন স্বজনেরা। ফরিদের চল্লিশার দিন তাঁর আসার কথা আছে।

ফরিদের বাবা সুলতান শেখ বলেন, ‘যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে, পুরো সংসারটি এলোমেলো করে দিয়েছে, আমি সেই হত্যাকারীদের বিচার চাই।’

এই বিভাগের সর্বশেষ
ফেইসবুকে আমরা
ইউটিউবে আমরা
error: দুঃখিত!