মুন্সিগঞ্জ, ২২ জুন ২০২৪, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
টানা ৫ম দিনের মত মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে ধরা পড়েছে বিষধর সাপ রাসেল ভাইপার। এ নিয়ে ৫ দিনে ৬ টি সাপ ধরা পড়লো মুন্সিগঞ্জে। স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে এ তথ্য।
জানা গেছে, সারাদেশে রাসেল ভাইপার নিয়ে আতঙ্কের মধ্যেই পদ্মা নদী তীরবর্তী মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় ১৮ জুন কুমারভোগ ইউনিয়নের একটি চরে ১ টি, ১৯ জুন লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের বড় নওপাড়া এলাকায় ১টি, ২০ জুন গাওদিয়া ইউনিয়নের শামুর বাড়ি এলাকায় ১ টি, ২১ জুন মেদেনীমন্ডল ও শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় দুইটি ও সর্বশেষ আজ ২২ জুন হলদিয়া ইউনিয়নে ১টি রাসেল ভাইপার ধরা পড়ে।
উদ্ধারকৃত শাপের মধ্যে বেশিরভাগই স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে মেরে ফেলেছেন। শুধুমাত্র ১৯ জুন লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের বড় নওপাড়া এলাকায় উদ্ধারকৃত সাপটি স্থানীয় তারু বেদের সংগ্রহে রয়েছে বলে আমার বিক্রমপুর কে নিশ্চিত করেছেন।
মুন্সিগঞ্জে সর্বপ্রথম রাসেল ভাইপার ধরা পড়ে ২০১৯ সালে। ওই বছরের ২৮ এপ্রিল পদ্মা তীরবর্তী লৌহজংয়ের ঘোড়দৌড় বাজার এলাকায় গৌতম কুমার সাহার বাড়ি থেকে একটি রাসেল ভাইপার উদ্ধার করেন স্থানীয় সাপুড়েরা। সেবছর নভেম্বর মাসের ২৮ তারিখ পদ্মা তীরবর্তী লৌহজং উপজেলার বেজগাঁও ইউনিয়নের মালিরঅংক এলাকা থেকে ৪ ফুট দৈর্ঘ্যের নারী রাসেল ভাইপার উদ্ধার হয়। পরে সেটি বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট, বন বিভাগের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। একইসময় আরও দুইটি রাসেল ভাইপার স্থানীয়রা দেখতে পেলেও সেগুলো রয়ে যায় ধরাছোয়ার বাইরে।
২০১৮ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে পদ্মার চর থেকে রাসেল ভাইপারকে অজগর ভেবে এক ব্যক্তি বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন। এরপর রাসেল ভাইপারের কামড়ে তিনি মারা যান। মুন্সিগঞ্জে রাসেল ভাইপারের কামড়ে সেটিই প্রথম মৃত্যু বলে ধারণা করা হয়।
২০২০ সালের ৪ জুলাই মেঘনা নদী তীরবর্তী মুন্সিগঞ্জ সদরের বাংলাবাজার ইউনিয়নের সরদারকান্দি গ্রামের জেলে আবুল হোসেন (১৮) এর চাঁইয়ে (মাছ ধরার ফাঁদ) ধরা পড়ে রাসেল ভাইপার সাপ। একইবছর ২৩ আগস্ট পদ্মা নদী তীরবর্তী টংগিবাড়ী উপজেলার পাঁচগাও ইউনিয়নের দশত্তর গ্রামের রাসেল ঢালী রাসেল ভাইপার সাপ আটক করেন। আরও একটি রাসেল ভাইপার ধরা পড়ে ঐ বছরের ২৯ নভেম্বর পদ্মা নদী তীরবর্তী দিঘিরপাড় ইউনিয়নের মিতারাঁ এলাকার একটি পুকুরের কচুরিপানার ভেতর থেকে। স্থানীয় অপু মন্ডল সাপটি উদ্ধার করেন। পরে সেটি চট্টগ্রাম ভেনম রিসার্চ সেন্টারের কর্মকর্তারা নিয়ে যান।
২০২৩ সালের জুলাই মাসে পদ্মা নদী তীরবর্তী লৌহজং উপজেলার কনকসার গ্রামে টিংকু বর্মন (৩২) নামের এক যুবক নিজ ঘরে খাবার খাওয়ার সময় রাসেল ভাইপারের আক্রমণের শিকার হন। তবে দ্রুত চিকিৎসা নেয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
একই বছরের নভেম্বরে একই উপজেলার বেজগাঁও ইউনিয়নের সুন্দিসার এলাকায় পদ্মা নদীতীরের একটি চর থেকে রাসেল ভাইপার সাপ আটক করেন স্থানীয়রা। একই মাসে সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়নের মেঘনা নদী তীরবর্তী কালিরচর এলাকায় রাসেল ভাইপারের কামড়ে একজন আক্রান্ত হন।
যে কোন সাপে কামড়ালে আতঙ্কগ্রস্থ না হয়ে দ্রুত চিকিৎসালয়ে আশার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়ে মুন্সিগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘রাসেল ভাইপার সাপে কামড়ালে সাথে সাথে মৃত্যু হয় এ তথ্য সঠিক নয়। দ্রুত চিকিৎসা করাতে পারলে বেশিরভাগ রোগীই বেঁচে ফিরে।’
তিনি জানান, মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালসহ জেলার সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পর্যাপ্ত এন্টিভেনম (বিষ প্রতিষেধক) সরবরাহ রয়েছে। সেখানে প্রশিক্ষিত কর্মীও আছে। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।