মিয়ানমারে প্রায় ৫৪ বছর পর গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত দেশটির এমপিরা সোমবার থেকে পার্লামেন্টে যোগ দিতে শুরু করেছেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, গত বছর দেশটিতে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে জয়ী এমপিরা পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন। তারা দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন ও ভোট দেবেন।
খবরে বলা হয়, ওই নির্বাচনে দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ৮০ শতাংশ আসন পেয়ে জয়লাভ করলেও মিয়ানমারের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর প্রভাব অব্যাহত রয়েছে। কারণ দেশটির পার্লামেন্টের এক-চতুর্থাংশ আসন সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত। যার ফলে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু মন্ত্রণালয়ও তাদের দখলে।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট থান সেইন মার্চে পদত্যাগ করবেন। তাই নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হলেও এর আগে কেউই ক্ষমতায় আসতে পারবেন।
মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী, সু চি দেশটির প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। সামরিক শাসকদের দিয়ে রচিত ওই সংবিধানমতে, বিদেশিকে বিয়ে করা কোনো নাগরিক মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। যুক্তরাজ্যের এক নাগরিককে বিয়ে করায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যায় সু চির জন্য।
বিবিসির খবরের বলা হয়েছে, ২০ বছরের বেশি সময় ধরে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে আসছিলেন এনএলডির নেতা-কর্মীরা। এজন্য সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকারের দ্বারা নানা নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে তাদের।
আজ (সোমবার) কয়েক শ এমপি শপথ নেবেন বলে খবরে বলা হয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্যদের ২৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকলেও পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে এনএলডি। তবে সংবিধান সংশোধনের জন্য যে সংখ্যক আসন প্রয়োজন, তার চেয়ে কিছু কম রয়েছে দলটির।
সু চি ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে পারেন- এরকম শোনা যাচ্ছে। তবে তিনি যে পদেই থাকুক না কেন প্রেসিডেন্ট তার কথা মতোই চলবেন বলে মনে করা হচ্ছে। কে দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন সেই বিষয়টি এখনো গোপন রাখা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ছাড়াও পার্লামেন্টের নতুন সদস্যরা উচ্চ ও নিম্নকক্ষের চেয়ারম্যান, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত করবেন।
অবশ্য গত সপ্তাহে সু চি নিশ্চিত করেছেন, নিম্নকক্ষের স্পিকার হিসেবে উন মেইন্তকে ও উচ্চকক্ষের জন্য উন খাইয়িং থানকে মনোনীত করেছে তার দল।
পার্লামেন্টে প্রবেশের সময় বার্তা সংস্থা এএফপিকে এনএলডির এমপি নায়িন থিট বলেন, ‘আমরা মানবাধিকার, গণতন্ত্র পাশাপাশি শান্তির জন্য কাজ করব।’
তবে পার্লামেন্টে প্রবেশের সময় সু চি সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
১৯৬২ সালে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে পার্লামেন্ট ভেঙে দেয় সেনাবাহিনী। এরপর থেকে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণে পার্লামেন্ট পরিচালিত হয়ে আসছিল।