স্বার্থপরতা একটি বড় সমস্যা। আপনার আশপাশের মানুষ যদি প্রতিনিয়ত আত্মকেন্দ্রিক আচরণ করতে থাকেন তাহলে সেটি অবশ্যই আপনার বিরক্তির কারণ হবে। আর হয়ত তা অনেক ক্ষেত্রেই আপনার কাজেও ব্যাঘাত ঘটাবে। তবে এমনও হতে পারে আপনাকেই স্বার্থপর আখ্যা পেতে হল। আর হয়ত দেখা গেল, আপনি দোষীও। সেক্ষেত্রে কি করবেন?
প্রথমেই বোঝার চেষ্টা করি ‘স্বার্থপরতা’ টার্মটির মানে। স্বার্থপরতার দুইটি বৈশিষ্ট্য হল-
১। নিজেকে নিয়ে অতিমাত্রায় ব্যস্ত থাকা।
২। অন্যের ভাবনা বা অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে না পারা।
যদি কেউ পুরোপুরি আত্মকেন্দ্রিক হয় আর অন্যের প্রতি রূঢ় আচরণ করে তাহলে নিশ্চই তাদের দায়িত্বজ্ঞানও কম। এধরণের মানুষের সাথে কিভাবে আচরণ করবেন, আসুন জেনে নিই এই বিষয়ে মনোবিজ্ঞানী এফ. ডায়ান বার্থ এর ৪টি উপদেশ। তিনি নিউইয়র্কে অনুশীলনরত একজন সাইকোথেরাপিস্ট এবং মনোরোগবিশেষজ্ঞ।
১। প্রথমে তাকে বোঝার চেষ্টা করুন-
একজন স্বার্থপর মানুষকে বোঝার চেষ্টা করবেন মানে এই নয় যে, সে যা করছে তাকে তাই করে যেতে দেবেন। তার আচরণের উৎস বুঝতে পারলে আপনি সহজেই তার সাথে মানিয়ে চলতে পারবেন। মানুষটির পরিবার, বেড়ে ওঠার পরিবেশ সব কিছুতেই থাকতে পারে তার এই ভুল আচরণের উৎস। আবার বয়সভেদেও কারণ আলাদা হতে পারে। একজন বৃদ্ধ প্রতিবেশী যে কারণে আপনার ক্ষতি করতে দ্বিধা করবেন, তার কিশোর নাতিটি হয়ত সেটা চিন্তা না করে সহজেই সেটা করে ফেলবেন। তাই আচরণের উৎস বোঝা জরুরী।
২। ব্যাক্তিগতভাবে নেবেন না-
শুধু স্বার্থপরতা নয় আরও অনেক মানসিক ক্রিয়াপ্রসুত আচরণের সবচেয়ে সহজ প্রতিউত্তর সেই আচরণকে ব্যক্তিগতভাবে না নেওয়া। আপনি যখন জানেন, তার এই আচরণের জন্য আপনি দায়ী নন, তখন কেন সেজন্য মানসিক চাপ নেবেন? অথবা আপনাকেও যদি কেউ ‘স্বার্থপর’ আখ্যা দেয়, এর মানে কিন্তু এটা নয় যে, আপনি অন্যায় কিছু করেছেন। বরং এর মানে হতে পারে, তারা যা চাইছিল তা হয়ত আপনি করেন নি। হয়ত, তাদের আচরণটাই আসলে স্বার্থপরতা। তাই কষ্ট না পেয়ে আগে ভাবুন, বুঝে দেখুন।
৩। নিজে নিজে বুঝে নেবেন না-
আমরা প্রায়ই ঘটনার বিচারক হয়ে যাই। নিজে নিজেই বুঝে নিই কার্যকারণ। জাজমেন্টাল বা বিচারক হওয়া ঠিক নয়। মানুষের প্রত্যেকটি আচরণের অর্থ স্বার্থপরতা নাও হতে পারে। শারীরিক, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েও একটা মানুষ খারাপ আচরণ করতে পারে। সে হয়ত এতটাই বিপর্যস্ত যে আপনার কেমন লাগবে তা ভাবার অবকাশ পাচ্ছে না।
আবার আপনাকে কেউ স্বার্থপর বললে, তাতেও রেগে যাবার কোন কারণ নেই। বরং যে বা যারা এই প্রশ্ন করছে তাদের শান্ত এবং যৌক্তিক উপায়ে জিজ্ঞেস করুন, কেন তারা এমনটা বলছেন বা আপনার কোন আচরণে তাদের এমন মনে হচ্ছে! অন্য কি করলে তারা খুশী হতেন বা আপনাকে স্বার্থপর ভাবতেন না। এভাবে কারণ বের করুন, বিমর্ষ হবেন না।
৪। কিছুটা স্বার্থপরতা কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য ভাল-
নিজের জন্য চিন্তা করা দোষের কিছু নয়। আপনি নিজে নিজের জন্য না ভাবলে আর কেউ তো ভাববে না। তাই কিছু মাত্রার স্বার্থপরতা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। যতক্ষণ না আপনি অন্যের ক্ষতির কারণ হচ্ছেন ততোক্ষণ স্বার্থপরতা আসলে কোন সমস্যা নয়। মনোবিজ্ঞানে স্বাস্থ্যকর স্বার্থপরতা একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। তাই স্বল্প মাত্রায় অন্যকে ছাড় দিন, ছাড় দিন নিজেকেও।
আরও কিছু টিপস-
১। স্বার্থপর মানুষের প্রতি বেশী মনোযোগী হবেন না।
২। নিজের ব্যক্তিগত বিষয়ে বেশী অন্তরঙ্গ হতে দেবেন না।
৩। আপনার ব্যক্তিত্বে আত্মবিশ্বাস ফুটিয়ে তুলুন।
৪। স্বার্থপর ব্যাক্তিদের কাছ থেকে ভুলেও কোন সুবিধা নেবেন না।