১৪ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বুধবার | সকাল ৯:৫৪
সরকারি অর্থে নির্মিত ইয়াজউদ্দিন কলেজের সেশন ফি ঢাকার চাইতেও বেশি!
খবরটি শেয়ার করুন:

রুবেল ইসলামঃ
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করে মাত্রাতিরিক্ত সেশন চার্জ নিচ্ছে মুন্সিগঞ্জের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ।

২০০ টাকার বেশী ভর্তি ফরম বিক্রি করার বিধি নিষেধ থাকলেও এই কলেজে তা বিক্রি করা হচ্ছে ৫০০ টাকায়। সেশন চার্জ অাদায় করা হচ্ছে ১৩ হাজার টাকা, যা ঢাকার ইংরেজী ভার্সনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাইতেও বেশী।

এসব বিষয়ে অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও কর্ণপাত করেননি কলেজ কর্তৃপক্ষ।

অতিরিক্ত টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীর জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, এ প্রতিষ্ঠান সরকারী আইনে চলেনা, চলে গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তে।

২০০৭ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রফেসর ড. ইয়াজ উদ্দিন আহমেদ এ অঞ্চলের গরীব অথচ মেধাবী শিক্ষার্থীরা যাতে সুন্দর পরিবেশে মান সম্মত শিক্ষা গ্রহন করতে পারে সে লক্ষ্যে এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। সম্পুর্ন সরকারী অর্থে বিশাল একাডেমিক ভবন, দুইটি হোস্টেল, অধ্যক্ষের বাসভবন ও একটি মিলনায়তন নির্মাণ করা হয়।

পাঠদানের অনুমতি ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেলেও এ প্রতিষ্ঠানটি এখনও এমপিওভূক্ত হতে পারেনি।

আর এ সুযোগ নিয়ে কখনো কখনো সরকারী নির্দেশ লঙ্ঘন করে যাচ্ছে কলেজ কমিটি। বিশেষ করে ভর্তি ফরম মূল্য ও সেশন চার্জ নেয়ার ক্ষেত্রে নিজস্ব আইনকেই অনুসরন করছে তারা।

ভর্তির কার্যক্রম অধিকতর স্বচ্ছ ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে বেসরকারী স্কুল/ স্কুল এন্ড কলেজ মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা-২০১৬ এর ১০ নং অনুচ্ছেদে ভর্তির আবেদন ফরমের মূল্য ও ভর্তি ফি সম্পর্কে উল্লেখ আছে- (ক) ভর্তির আবেদন ফরমের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটনসহ এমপিওভূক্ত, আংশিক এমপিওভূক্ত এবং এমপিও বহির্ভূগ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবেদন ফরমের জন্য সর্বোচ্চ ২শত টাকা গ্রহন করা যাবে।

অথচ প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ইয়াজ উদ্দিন আহমেদ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজে প্রতিটি আবেদন ফরম বিক্রি করছে ৫ শত টাকায়।

১০(খ)তে সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি সর্ব সাকুল্যে মফস্বল এলাকায় ৫০০ টাকা, পৌর (উপজেলা) এলাকায় ১০০০ টাকা, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় ২০০০ টাকা, ঢাকা ব্যতিত অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩০০০ টাকার বেশী হবে না। প্রতিষ্ঠানটি মফস্বল এলাকায় হওয়ায় সেশন চার্জ ৫০০ টাকার বেশী নেয়ার কথা না, অথচ এবছর অভিভাবকদের অনুরোধ উপেক্ষা করে শিক্ষার্থী প্রতি ১৩ হাজার টাকা করে সেশন চার্জ গ্রহন করছে।

এ ব্যাপারে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে অধ্যক্ষকে একাধিকবার এবং গভর্নিং বডির সভাপতি জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানানোর পরে আশ্বাস পেলেও কোন সুফল পাওয়া যায়নি।

উপরন্ত ফলাফল ঘোষনার পর দুই দিনের মধ্যে ভর্তি হওয়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।

অভিভাবক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম জানায়, সরকারী টাকায় প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভূক্ত না হওয়ায় নিজস্ব নিয়মে চলে আসছে। তাদের খুশিমত বেতন বাড়াচ্ছে, গত জুলাই মাস থেকে ৩০০ টাকা মাসিক বেতন বাড়িয়েছে। সেশন চার্জ নিচ্ছে গত বছরের তুলনায় ৩ হাজার টাকা বেশী। আমরা বলতে গেলে আমাদের কথার কোন কর্নপাত করেনা কতৃপক্ষ। জিজ্ঞেস করলেই বলে সরকারী টাকা পাওয়া না যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের টাকায় চলে এ প্রতিষ্ঠান।

অথচ অভিবাবকদের কোন প্রতিনিধি নাই গভর্নিং বডিতে। তারা কোথায় কত টাকা খরচ করে তারও স্বচ্ছতা নেই। আমরা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের কাছে অসহায় হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় কি করে? শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাকায় যেসকল প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত সেশন চার্জ নিয়েছিল তাদের কাছ থেকে সে টাকা আবার অভিভাবকদের ফিরিয়ে দিয়েছে। আমাদের টাকাও ফিরিয়ে দেওয়া হউক।

প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ইয়াজ উদ্দিন আহমেদ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মেজর গাজী মো: তওহিদুজ্জামান জানান, আমরা কোন সরকারী নিয়মে চলিনা। আমরা আমাদের নিয়মে চলি, জিবি সভার সিদ্ধান্ত আমাদের নিয়ম।

জেলা প্রসাশক ও গভর্নিং বডির সভাপতি সায়লা ফারজানা জানান, বর্তমান কমিটিতে অভিভাবক প্রতিনিধি নাই। অভিভাবক প্রতিনিধির দুইটি পদের অনুমোদন চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: শরিফুল ইসলাম ইয়াজউদ্দিন আহমেদ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, বেসরকারী স্কুল/স্কুল এন্ড কলেজ মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা-২০১৬ এর ২৪ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে এ নির্দেশনার কোনরূপ ব্যত্যয় ঘটানো হলে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পাঠদানের অনুমতি বা একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিলসহ এমপিওভূক্তি বাতিল করা হবে।

error: দুঃখিত!