মুন্সিগঞ্জ, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জ সদরের এভিজেএম স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জেসি মাহমুদ হত্যাকান্ডের ঘটনায় প্রধান আসামি বিজয় রহমানকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
অন্যদিকে হত্যাকান্ডের শিকার এভিজেএম স্কুল ছাত্রী জেসির পরিবার গতকাল শনিবার তাদের কোটগাওয়ের ভাড়া বাসা ছেড়ে চলে গেছেন তাদের পৈত্রিক বাড়ি মহাকালী ইউনিয়নের কেওয়ার গ্রামে।
জেসির পরিবার বাড়িতে যাওয়ার পর স্বজনহারা নিকটাত্মীয়দের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। এ সময় জেসির মা, ভাই ও স্বজনদের আত্মচিৎকারে হৃদয় বিদায়ক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
শনিবার ভোরে প্রবল শীত উপেক্ষা করে কোটগাওয়ের বাসা থেকে ৫টি ভ্যানে করে আববাসপত্র নিয়ে দুই ছেলে জিদান, হান্নান ও জিদানের স্ত্রী সিনথিয়াকে নিয়ে নিজ গ্রাম কেওয়ারে ফিরে যান জেসির মা মিনা বেগম।
আদরের সন্তান জেসি মাহমুদহীন শহর ছেড়ে তাদের ফিরে যাওয়া ছিল অসহনীয় কষ্টের।
জেসির মা মিনা বেগম বলেন, বিশেষ করে জেসির লেখাপড়ার জন্য আমারা মুন্সিগঞ্জে বসবাস করেছি। জেসিসহ ৩ সন্তানকে নিয়ে ছেলে মেয়ের উচ্চ শিক্ষার জন্য এখানে এসেছিলাম। কিন্ত আজ নিজের ভিতর অনেক ক্ষত-কষ্ট নিয়ে জেসিকে হারিয়ে দুই ছেলেকে নিয়ে ঘাতক এই অঞ্চল থেকে বুক ভরা কষ্ট নিয়ে চলে যাচ্ছি।
জেসির বাবা সেলিম মাহমুদ সৌদি আরব থেকে বলেন, মেয়ের লেখাপড়ার জন্য শহরে এসেছিলাম। সেই শহর যখন জেসিকে বাচতে দিলোনা সেখানে আর থেকে কি হবে। ঘাতক খুনীদের প্রভাবশালী স্বজনরা বীরদর্পে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে এলাকায়। তাই স্ত্রীসহ অন্য সন্তানদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ঘাতকদের আশপাশ থেকে নিজের বাড়ি কেওয়ার গ্রামে নিজ স্বজনদের মাঝে পরিবারকে পাঠিয়ে দিলাম।
জেসি হত্যাকান্ডের প্রধান আসামি বিজয় রহমান ওরফে বিজু এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ ও কষ্ট নিয়ে জেসির বাবা সেলিম মাহমুদ আরও বলেন, নিজের পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবেই নিজের রাজনৈতিক আদর্শ আওয়ামী লীগ অঞ্চল খ্যাত কোটগাও এলাকায় স্ত্রী সন্তানদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কোর্টগাও এলাকায় বসবাস উপযোগী মনে করে এখানে বসবাস করার জন্য স্থান নির্ধারন করে পরিবারটিকে রেখেছিলাম।
কিন্ত নিরাপদ মনে করা এই কোটগাওযেরই ঘাতক খুনী নির্মমভাবে অমানবিক নির্যাতন করে আমার আদরের মেয়েটিকে হত্যা করেছে। প্রধান খুনি বিজুকে গ্রেপ্তার করে তার দ্রুত ফাঁসি দাবি করেন সেলিম মাহমুদ।
এ প্রসঙ্গে মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ওসি তারিকুজ্জামান বলেন, জেসি হত্যা মামলার প্রধান আসামি বিজয়কে গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযান ও নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। আসামিকে গ্রেপ্তার করতে ঢাকার একাধিক স্থানে টংগিবাড়ী থানার আওতাধীন এলাকায় ও তার কোটগাওয়ের বাড়িতে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। তাকে ধরার জন্য জাল পাতা হয়েছে। শিঘ্রই সে পুলিশের হাতে ধরা পরবে।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ৩ জানুয়ারি মুন্সিগঞ্জ শহরের কোটগাও এলাকায় শহর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আরিফুর রহমানের বাসার ৫ম তলার ছাদে তার ছেলে বিজয় রহমান ও কথিত গার্লফ্রেন্ড আদিবা ইসলামের হাতে নির্যাতনের শিকার হন সৌদি আরব প্রবাসী সেলিম মাহমুদের মেয়ে আলবার্ট ভিক্টোরিয়া যতীন্দ্র মোহন গভ. গার্লস হাই স্কুলের (এভিজেএম) দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জেসি মাহমুদ (১৭)। পরে হাসপাতালে মারা যান জেসি।
পরদিন সন্ধ্যায় মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় নিহতের বড় ভাই শাহরিয়ার জিদান বাদী হয়ে মুন্সিগঞ্জ শহর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও সাবেক শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আরিফুর রহমানের ছেলে বিজয় রহমান (২২) ও পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জাহিদ হাসানের মেয়ে নয়াগাও এলাকার আদিবা আক্তার (১৯) কে আসামি ও অজ্ঞাতনামা আরও ১-২ জন উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঐদিন দুপুরে পুলিশ আদিবাকে গ্রেপ্তার করলে সন্ধ্যায় সে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে আদিবা হত্যাকান্ডের বিস্তারিত তুলে ধরে আদালতকে জানান, সে ও তার কথিত বয়ফ্রেন্ড বিজয় মিলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে জেসিকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে বিজয়দের বাড়ির ছাদে নিয়ে দুজন মিলে এলোপাতাড়ি মারধর ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।