রোহিঙ্গারা কেন সীমানা পেরিয়ে এলো এবং তার জন্য মানবাধিকার বিষয়ে জবাবদিহির মুখোমুখি করতে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার কথাটি বিশ্ব মহলের কখনই ভুলে যাওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো।
গত বছরের ২৫ অগাস্ট শুরু হওয়া রোহিঙ্গা সংকটের বর্ষপূর্তিতে বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এই সংকটকে ভুলে না যাওয়া নিশ্চিত করতে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে সব ধরনের সুযোগের সদ্ব্যবহার করা জরুরি।
কক্সবাজারে ঘনবসতিপূর্ণ শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা বাংলাদেশের কাঁধের ভার ভাগাভাগি করতে শরণার্থীদের আশ্রয়দাতা দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জীবিকা নির্বাহমূলক কর্মকাণ্ডে রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ত করতে রেড ক্রসের মধ্যবর্তী পরিকল্পনার আহ্বানের সঙ্গে একমত পোষণ করে তিনি বলেন, মানবিক সহায়তার মুখাপেক্ষী ১০ লাখ মানুষের চাহিদা অব্যাহতভাবে মিটিয়ে যাওয়া কঠিন।
তবে এই মধ্যবর্তী পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গে সংকটের সমাধান খুঁজতে এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নজরদারি কার্যক্রম জারি রাখতে মিয়ানমারের উপর চাপ অব্যাহত রাখার উপর জোর দেন তিনি।
“রোহিঙ্গাদের যে ঘরে ফেরার অধিকার রয়েছে, সেটা ভুলে যাওয়া চলবে না। কক্সবাজারে ১০ লাখ রোহিঙ্গা নতুন একটি স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারে না।”
২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট রাখাইনে শুরু হওয়া ব্যাপক সহিংসতা শুরু হয়, যাকে ‘জাতিগত নিধন অভিযান’ বলছে জাতিসংঘ। হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে সাত লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে। রোববার ছিল ওই ঘটনার প্রথম বর্ষপূর্তি।
ওই সংকট শুরুর দুই মাস পরে অক্টোবরে জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয়ে যোগদানকারী নতুন সমন্বয়ক বলেন, সরকারের নেতৃত্বে জাতিসংঘ সংস্থাগুলো, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এবং স্থানীয় সংস্থাগুলোর সহায়তায় ‘ব্যাপক’ মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চলতে দেখেছেন তিনি।
“যা অর্জিত হয়েছে তা যুগান্তকারী। শিবিরে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রাণহানি ঘটেনি; কোনো বড় মহামারী ছড়িয়ে পড়েনি। এখন পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমে বড় ধরনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমরা সফল হয়েছি। এটা আসলেই প্রশংসাযোগ্য।“
শরণার্থী শিবিরগুলো এখন অনেকটা সুসংগঠিত মন্তব্য করে জাতিসংঘ সমন্বয়ক বলেন, “সরকার বাস্তবেই শিবিরগুলোর ব্যবস্থাপনা কব্জায় আনতে শুরু করেছে।”
তবে এই শিবিরগুলো এখনো আন্তর্জাতিক মানবিক মানদণ্ডে পিছিয়ে আছে বলে মনে করেন তিনি। তরুণ ও বয়স্কদের শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নের উপরও জোর দেন তিনি যাতে তারা যেখানেই থাকুক একটা সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে পারে।
তিনি বলেন, শিবিরগুলোতে অনেক গাদাগাদি করে মানুষ বাস করায় পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও সড়ক- সবক্ষেত্রে সমস্যার সমাধান করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
“বাংলাদেশের এখন খুব দরকার বিশ্বমহলের অধিক সমর্থন। শরণার্থীর বোঝা ভাগাভাগি করার বিষয়ে আলোচনা এখনই দরকার।”
তবে সবার আগে সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে মিয়ানমারে, যেটাতে অব্যাহত নজর দিতে হবে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তারপর শরণার্থীর বোঝা ভাগাভাগি করার বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে পারি।
“তবে তার বদলে কোনোভাবেই মিয়ানমারের উপর চাপপ্রয়োগ থেকে সরা যাবে না। কারণ সমস্যার গোড়া সেখানে, সমাধান সেখানেই খুঁজতে হবে।”
কিছু রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পুনর্বাসনের সরকারের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে মিয়া সেপ্পো বলেন, তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছেন, কীভাবে স্বেচ্ছায় এসব পুনর্বাসন নিশ্চিত করা হবে এবং চরে তাদের জীবনযাত্রার সুবিধা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
তবে গাদাগাদি করে থাকার সমস্যার ক্ষেত্রে এই পুনর্বাসন সব সমস্যার সমাধান নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
“এটা অন্যতম বিকল্প হতে পারে। তবে এটা পর্যাপ্ত সমাধান নয়।”