৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রবিবার | সকাল ১১:৫৯
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
এ যেন রংপুরের আবু সাঈদ! হাসিনার পতন দেখে যেতে পারেননি মুন্সিগঞ্জের সজল
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ২০ আগস্ট ২০২৪, ফয়সাল হোসেন (আমার বিক্রমপুর)

এ যেন রংপুরের আবু সাঈদের অনুকরণ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ-পুলিশের হামলার মুখে বুক পেতে দাড়িয়ে ছিলেন মুন্সিগঞ্জের সজল।

‘খুব সকালে দুই ভাই আন্দোলনে (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) গিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমাদের ঘরের দূরত্ব দুই মিনিটের পথ। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দুজনেই ঘরে ভাত খেতে এসেছিলাম। সজল ভাই খেতে পারছিল না। কয়েক লোকমা খেয়ে আবারও আন্দোলনে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় সে বলেছিল, “এবার শহীদ হব, নয়তো হাসিনার পতন করেই ঘরে ফিরব।” শেষ পর্যন্ত দেশ মুক্ত হয়েছে। কিন্তু আমার ভাই দেখে যেতে পারল না।’

কথাগুলো বলছিলেন শিক্ষার্থী–জনতার অভ্যুত্থানে নিহত সজল মোল্লার (৩০) ভাই সাইফুল ইসলাম। তাঁদের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকায়। তাঁদের বাবার নাম আলী আকবর মোল্লা; মা কয়েক মাস আগে মারা গেছেন।

সজল মোল্লা ও সাইফুল ইসলাম দিনমজুরের কাজ করতেন। সময়–সুযোগ পেলেই তাঁরা ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিতেন। ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংঘর্ষে মুন্সিগঞ্জ শহরের সুপারমার্কেট এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন সজল মোল্লা। হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।

সম্প্রতি মুন্সিগঞ্জ শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকায় নিহত সজল মোল্লার বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ ছোট্ট একটি টিনের ঘর। এ ঘরেই থাকতেন সজল, তাঁর ভাই সাইফুল ও বাবা আলী আকবর মোল্লা।

সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সেদিন (৪ আগস্ট) আমরা সুপারমার্কেট এলাকায় আন্দোলন করছিলাম। শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করতে চেয়েছিলাম। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা পুলিশের উপস্থিতে অস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। সজল ভাই ছিল সামনে। বেলা সোয়া ১১টার দিকে আমরা দৌড়ে উত্তর ইসলামপুর ঢুকতে থাকি। ওই সময় আমাদের দিকে গুলি করা শুরু করে তারা। সজল ভাই এক মিনিট পরে দৌড়ে আমার কাছে আসে। পেট দেখিয়ে বলতে থাকে, “ভাই, গুলি খেয়েছি।” প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো ছররা গুলি লেগেছে; কিচ্ছু হবে না। মুহূর্তেই দেখলাম রক্ত বেরিয়ে আসছে। তখন বুঝলাম বড় গুলি লেগেছে।’

সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘কোনোরকমে একটা গামছা পেঁচিয়ে ভাইকে (সজল) হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করি। সুপারমার্কেট এলাকায় আওয়ামী লীগের লোকজন বাঁধা দেয়। অনেক কষ্টে শহরের ভেতরের গলি দিয়ে ঢাকার দিকে ছুটছিলাম। টংগিবাড়ী উপজেলার বেতকা যখন পৌঁছাই, তখন ভাই মারা যায়।’

৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংঘর্ষে মুন্সিগঞ্জ শহরে তিনজন নিহত হন। ওই দিন সজল মোল্লা ছাড়াও রিয়াজুল ফরাজী (৪৫) ও নুর মোহাম্মদ সরদার ওরফে ডিপজল (১৭) নামের দুজন দিনমজুর গুলিতে মারা যান।

সজল মোল্লার লাশ বাড়িতে আনার পর বিপাকে পড়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা। ওই দিনের (৪ আগস্ট) বর্ণনা দেন নিহত সজলের মামাতো ভাই আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিকেলে সজলের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই বাড়িতে আনা হয়। সেদিন সন্ধ্যায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের লোকজন উত্তর ইসলামপুর আসেন; এলাকা ঘিরে রাখেন।

আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিতে থাকেন তাঁরা। সবাই ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যান। বাড়িতে সজলের লাশ। তাঁরা পাঁচ থেকে ছয়জন পুরুষ বাড়িতে ছিলেন। লাশের সামনে থেকে পুলিশ তাঁদের তুলে নিয়ে যেতে চেয়েছিল।

আশরাফুল আক্ষেপ করে বলেন, ‘সজল ভাইয়ের লাশের খাট তোলার জন্য মানুষ ছিল না। ক্লান্ত শরীরে আমরা ছয়জন গোরস্তানে যাই। রাতের মধ্যেই অনেকটা তড়িঘড়ি করে দাফন করি।’

যুবক ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ আলী আকবর মোল্লা। ছেলের স্মৃতিচারণ করে তিনি ছেলে হত্যার বিচার চান।

এই বিভাগের সর্বশেষ
ফেইসবুকে আমরা
ইউটিউবে আমরা
error: দুঃখিত!