২৩শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রবিবার | সকাল ৬:৪৭
৫বছরে অাশানুরুপ উন্নয়ন হয়নি মুন্সিগঞ্জ পৌরসভায়, ক্ষোভে ফুসছে ভোটাররা
খবরটি শেয়ার করুন:

নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। অনেক সড়কই কাঁচা। যেগুলো পাকা, তারও অবস্থা বেহাল। চলাফেরা করাই দায়। খালগুলো মৃতপ্রায়। অনেক বাড়ির সামনেই বাঁশের সাঁকো। কোনো বাড়িতেই পানি সরবরাহ লাইন নেই। নেই পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা। যত্রতত্র পড়ে আছে আবর্জনা।

রাজধানীর খুব কাছের জেলা মুন্সিগঞ্জ জেলার সদর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চিত্র এটি। গতকাল শনিবার পৌরসভার পূর্বশিলমন্দি, চরশিলমন্দি ও যোগিনীঘাট এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য চোখে পড়ল।

মুন্সিগঞ্জের শহরের বিভিন্ন প্রধান সড়ক থেকে যেকোনো ওয়ার্ডের ভেতরে ঢুকলেই মনে হবে এ বুঝি অপরিচ্ছন্ন এক শহর। অথচ মুন্সিগঞ্জ পৌরসভা হয়েছিল ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি। কাগজে-কলমে এটি এখন দেশের ‘ক’ বা প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। কিন্তু ৪৩ বছরে পৌঁছায়নি ন্যূনতম নাগরিক সুবিধাগুলো। ফলে বর্ষায় জলাবদ্ধতা আর বছরজুড়ে নানা ধরনের দুর্ভোগ লেগেই থাকে।

পৌরসভার পরিসংখ্যানও অবশ্য সেই দুরবস্থার কথাই অনেকটা তুলে ধরছে। বর্তমানে পৌরসভায় ৫২ কিলোমিটার বিটুমিনের পাকা রাস্তা থাকলেও কাঁচা রাস্তা আছে ৩১ কিলোমিটার। পৌরবাসীর দৈনিক পানির চাহিদা ২৮ লাখ গ্যালন। কিন্তু পৌরসভা সরবরাহ করতে পারছে মাত্র সাড়ে পাঁচ লাখ গ্যালন। ৫ হাজার ১২৩টি পাকা পায়খানা থাকলেও এখনো অস্বাস্থ্যকর পায়খানা আছে ৩ হাজার ৬৯৯টি। পুরো পৌরসভায় মাত্র তিনটি পাবলিক টয়লেট আছে, যেগুলোর পরিচ্ছন্নতা নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই।

মুন্সিগঞ্জ শহরের ছোট-বড় সব সড়কেই চলছে ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশা। বাসস্ট্যান্ড না থাকায় যেখানে-সেখানে বাস রাখা হচ্ছে। এমনকি পৌর ভবনের সামনেই অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে সিএনজি স্ট্যান্ড।

পৌরভবনের সামনের অবৈধ সিএনজি ষ্ট্যান্ড। ছবিটি পৌর ভবনের ছাদ থেকে তোলা।
পৌরভবনের সামনের অবৈধ সিএনজি ষ্ট্যান্ড। ছবিটি পৌর ভবনের ছাদ থেকে তোলা।

পৌর ভবন থেকে পূর্ব-দক্ষিণে ২ নম্বর ওয়ার্ডের খালইস্ট, জগধাত্রীপাড়া, মালপাড়া, মানিকপুর, জমিদারপাড়া ঘুরে দেখা গেল নোংরা পরিবেশ।

হরগঙ্গা কলেজের পেছন দিকের খালটা প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। সেখানে এখন বাঁশ বা কাঠের সাঁকো কিংবা পাকা সেতু উঠছে।

মূল সড়ক ধরে জেনারেল হাসপাতালের সামনে দিয়ে একটু বাঁয়ে গেলেই মানিকপুর মহল্লা। এখানকার রাস্তাগুলো এতটাই সরু যে রিকশা চলা দায়। এখানকার বাসিন্দা পারভিন আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বৃষ্টিতে পুরো এলাকা কাদা হয়ে যায়।
পয়োনিষ্কাশনের অবস্থাও ভালো নয়।

মুন্সিগঞ্জ পৌর ভবনটি ১ নম্বর ওয়ার্ডে। এখান থেকে পশ্চিম-দক্ষিণ কোণে গেলে কোটগাঁও, পুরোনো হাসপাতালপাড়া ও মাঠপাড়া। এখানকার রাস্তাঘাটগুলো মোটামুটি ভালো হলেও যেখানে-সেখানে আবর্জনা পড়ে আছে। ওয়ার্ডের বাসিন্দা মুন্সিগঞ্জ প্লাজার দোকানদার মোহাম্মদ মামুন বলেন, ‘একনজরে দেখলে মনে হবে একটা নোংরা শহর। আর বর্ষায় জলাবদ্ধতা। নির্বাচন এলে প্রতিশ্রুতি শুনি। নির্বাচন গেলেই সব শেষ।’

পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর ইসলামপুর, নয়াপাড়া ও চরকিশোরগঞ্জ যেন এই পৌরসভার সবচেয়ে অবহেলিত এলাকা। সরেজমিনে দেখা গেল, মেথর পট্টি থেকে উত্তর ইসলামপুরের বিশাল রাস্তাটি পুরোপুরি কাঁচা। উত্তর ইসলামপুরের বাসিন্দা জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা শফিউজ্জামান বলেন, পৌরসভার এত কাছে, তারপরেও রাস্তাটা পাকা হয় না। এখানকার ড্রেনটা খোলা। দুর্গন্ধে টেকা দায়।

এখান থেকে একটু সামনে এগিয়ে দেখা গেল, নৌকায় করে লোকজন উত্তর ইসলামপুর থেকে মোল্লাপাড়ায় যাচ্ছেন।
সরকারি হরগঙ্গা কলেজের পেছনের দিকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বশিলমন্দি, চরশিলমন্দি, যোগিনীঘাট, দক্ষিণ ইসলামপুর। এসব এলাকার অধিকাংশ রাস্তাই কাঁচা। পৌরসভার সব ময়লা চরশিলমন্দি এলাকায় পৌরসভার ভাগাড়ে ফেলা হয়। সেখানে দুর্গন্ধে টেকা দায়। অথচ ওই রাস্তা ধরেই নাক-মুখ চেপে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে হচ্ছে। এখানে একটা গরুর হাট আছে।

যোগিনীঘাটের বাসিন্দা কামালউদ্দিন বলেন, ‘এই ওয়ার্ডে কোনো বাড়িতে পানির লাইন নেই। নেই পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা। কোনো দিন কেউ রাস্তা পরিষ্কার করতে আসে না। অথচ আমরা পৌরকর দিই। এমন পৌরসভার বাসিন্দা হয়ে লাভ কী?’

৯ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচঘড়িয়াকান্দি, চরশিলমন্দি, মুন্সীরহাট ও রমজানবেগ ঘুরেও একই রকম চিত্র দেখা গেল। ৩, ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সমস্যাও ড্রেনেজ। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রনছো হালদারপাড়া, ঋষিপাড়া, পারুলপাড়া ও মধুপুর এলাকার রাস্তাঘাটগুলোর জরাজীর্ণ দশা। কোথাও সড়কবাতি নেই।

মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার এমন দুরবস্থার কারণ জানতে চাইলে পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও আগামী নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী এ কে এম ইরাদত মানু বলেন, ‘আমি যতটুকু পেরেছি চেষ্টা করেছি। ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে অতীতে কাজ হয়নি। আমিই অবহেলিত এই এলাকায় কাজ শুরু করেছি। কিন্তু একটি পৌরসভার যে বাজেট, তা দিয়ে সব কাজ করা যায় না। যেটুকু কাজ হয়েছে, সেটা প্রকল্পের টাকায় হয়েছে। আবার নির্বাচিত হলে বাকি কাজগুলো করব।’

আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী ফয়সাল বিপ্লব বলেছেন, অতীতে ঠিকমতো কাজ হয়নি বলেই এত সমস্যা। তিনি নির্বাচিত হলে পুরোনো সমস্যাগুলো সমাধান করবেন।

error: দুঃখিত!