মুন্সিগঞ্জ, ২০ নভেম্বর ২০২৪, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জ শহরের মানিকপুর এলাকার বাসিন্দা আয়েশা বেগম (৭৬)। ভিক্ষা করাই তার পেশা। ভিক্ষাবৃত্তি করে যা পান, তাতে দিন আনতে পান্তা ফুরার দশা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩ মাস অতিবাহিত হলেও পায়ে বুলেট নিয়ে তীব্র ব্যাথায় কাতরাচ্ছেন এই নারী ভিক্ষুক। দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন চিকিৎসার আশায়।
জানা যায়, গত ৪ আগষ্ট সকালে মানিকপুর এলাকার নিজ ভাড়া বাসা থেকে বের হন আয়েশা বেগম। ভিক্ষা করার উদ্দেশ্যে ওই এলাকার মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের সামনের সড়কে আসেন। তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে যান। এসময় তিনি বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। তাৎক্ষণিক ছুটে যান হাসপাতালে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেন তাকে। তবে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন-এমনটি তখন বুঝতেই পারেননি আয়েশা বেগম।
সম্প্রতি পায়ে তীব্র ব্যাথা অনুভূত হয় তার। দিনের বেলা ভিক্ষা শেষে রাতে যখন বাসায় ফিরেন পায়ের ব্যাথা হয়ে উঠে অসহনীয়। কাতরাতে থাকেন রাতভর। এ অবস্থায় কিছুদিন আগে শহরের থানারপুল এলাকার বেসরকারি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে এক্সরে করেন। এতে তার বাম পায়ের ভেতর গুলি চিহ্নিত হয়।
এদিকে, আয়েশা বেগমের স্বামী ও সন্তান কেউ-ই নেই। বাড়ি চাঁদপুরে। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে স্বামী লতিফ সরদারের মৃত্যুর পর প্রায় এক যুগ আগে মুন্সিগঞ্জ শহরে চলে আসেন তিনি। বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তি। স্বামী-সন্তান ছাড়া বয়সের ভারে ন্যুব্জ আয়েশা বেগমকে পায়ে বুলেট নিয়েই প্রতিদিন ভিক্ষা করতে বের হতে হচ্ছে। দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চিকিৎসা নিয়ে।
এ অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার ছুটে আসেন মুন্সিগঞ্জ প্রেসক্লাবে। সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন অসহায়ত্বের কথা।
আয়েশা বেগম বলেন, ‘আমি মানুষের কাছ থেকে চেয়ে খাই। একা জীবনে বেঁচে থাকার কিছু নাই। আমার এহন চিকিৎসা করতেন যদি আফনারা।’
পরে আয়েশা বেগমকে নিয়ে সাংবাদিকরা ছুটে যান সিভিল সার্জন কার্যালয়ে।
এসময় সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুরুল আলম বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ছাত্র আন্দোলনে আহত সবার চিকিৎসা করা হবে। এ বৃদ্ধার নামও অর্ন্তভুক্ত করা হচ্ছে। তিনিও চিকিৎসা পাবেন।