দেশের বৃহত্তম আলু উৎপাদনকারী অঞ্চল মুন্সিগঞ্জের গোটা জনপদ এখন কর্মচঞ্চল। জেলার ছয় উপজেলার বিস্তৃত মাঠজুড়ে এখন চলছে শুধু আলুর আবাদ। তবে এবার গতবারের চেয়ে প্রায় দুই হাজার টাকা বেশি দরে হল্যান্ডের বীজ আলুর বাক্স কিনতে হচ্ছে কৃষকদের।
গত দুই মৌসুমে আলুর ভালো ফলন ও আলু চাষে লাভবান হওয়ায় মুন্সিগঞ্জের কৃষকরা এবার উদ্দীপনা ও উৎসাহ নিয়ে আলু চাষ করছে। এবার জেলার ছয় উপজেলার ৩৮ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আলু চাষি রহমত উল্লাহ ও জামান বেপারী জানান, অন্যান্য বছর এ সময় মুন্সিগঞ্জে আগাম আলু বাজারে ওঠে। কিন্তু এবার জমি থেকে পানি নামতে দেরি হওয়ায় আগাম আলু চাষ ব্যাহত হয়। আগামী এক মাস এ আলুর আবাদ চলবে। আলু উত্তোলন শুরু হবে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে। আলু রোপণের পর তা পরিপূর্ণ হয়ে উঠতে সময় লাগে তিন মাস।
একাধিক আলু চাষি জানান, বর্তমানে বাজারে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বীজ আলুর তীব্র সংকট রয়েছে। তবে সারের কোনো সংকট নেই। হল্যান্ড থেকে বাক্স আলুর উৎপাদন বেশি হওয়ায় তাঁরা এই বীজের ওপর বেশি নির্ভরশীল। বর্তমানে হল্যান্ডের বীজের বাক্স কিনতে হচ্ছে ছয় হাজার ২০০ টাকা থেকে ছয় হাজার ৫০০ টাকায় যা আগের বছর ছিল চার হাজার ২০০ টাকা থেকে চার হাজার ৫০০ টাকা। হল্যান্ডের লাল আলুর বীজের বাক্স সাত হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বাজারে বিক্রি হচ্ছে। তাই বেশির ভাগ কৃষক হিমাগারে সংরক্ষিত বীজ আলু তৈরি করে ক্ষেতে রোপণ করছে। এতে ফলন বেশি। পুরো মুন্সীগঞ্জে সরকারি বীজ বরাদ্দ রয়েছে এক হাজার ৬০০ টন, যা প্রয়োজনের তুলনায় এই অঞ্চলের জন্য খুবই কম। তাই বেসরকারি বীজ বিক্রেতারা দাম বেশি নিচ্ছে।
শরীয়তপুর থেকে আসা শ্রমিক আমেনা বেগম জানান, প্রতি বছর বীজ আলু রোপণ করতে শরীয়তপুর থেকে মুন্সীগঞ্জ আসেন। এবার মজুরি বেশি পাচ্ছেন। গত বার প্রতিদিন ২০০ টাকা করে পেয়েছিলেন। এবার ৩০০ টাকা করে পাচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর জানান, মুন্সীগঞ্জে ৭৭ হাজার টন বীজ আলুর চাহিদার বিপরীতে সরকারি বিএডিসির বীজ বরাদ্দ রয়েছে মাত্র এক হাজার ৬০০ টন। আর বাকি বীজের চাহিদা বেসরকারি বীজ ব্যবসায়ীরা মেটাচ্ছে। ৪ থেকে ৬ নভেম্বর বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবার আলুর মৌসুম কিছুটা পিছিয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘বিএডিসির বীজ সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি হচ্ছে। বেসরকারিভাবে বীজ আলু আমদানিকারক নির্ধারিত মূল্যের থেকে বেশি বিক্রি করছে আমরা জানি, কিন্তু এখানে আমাদের কিছু করার নেই। মৌসুম পিছিয়ে যাওয়ায় পরে আগাম কোনো বৃষ্টিপাত হলে চাষিদের আলু উঠাতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।’