মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার আড়িয়াল বিলের প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে বছরের প্রায় ৬ থেকে ৭ মাস মাছ ধরা হয়। মাছের মৌসুমে (নভেম্বর-ডিসেম্বর) মাছ কিনে খায় এমন পরিবার শ্রীনগর উপজেলায় নেই বললেই চলে। বিশেষ করে শ্রীনগর উপজেলা পশ্চিমের লোকজন। কিন্তু দিন দিন আড়িয়াল বিলে মাছের জাত সংখ্যা ও মাছের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে।
প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে জেলেরা নানান কৌশলে নানা প্রকার জাল দিয়ে মাছ শিকার করে থাকেন। ধরণ অনুযায়ী মাছ ধরার কৌশলে যেমন আছে ভিন্নতা তেমনি মাছ ধরায় ব্যবহার করা হয় বৈচিত্র্যময় সব উপকরণ।আড়িয়াল বিলে ব্যবহৃত মাছ ধরার উপকরণের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হল- কুচ, পুটি বর্শি, বোয়াল বর্শি, ঝাকি জাল, টুনি জাল, বের জাল, বিভিন্ন ধরনের উন্না, বাইর, পলো ইত্যাদি।
সংগৃহীত মাছ নিজের পরিবারের চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত মাছগুলো তারা পরবর্তীতে (মাছের অমৌসুমে) খাওয়ার জন্য শুকিয়ে শুটকি করে সংরক্ষণ করে। বর্তমান সময়টি আড়িয়াল বিলে মাছের ভরা মৌসুম। বিলের পানি ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাওয়ায় মাছগুলো গভীর পানির দিকে নামছে। অনেক জেলেরা খালের পারে নিচু জমি হওয়ায় অনান্য জমি থেকে পানির স্রোতে মাছ এসে জমা হয়। ফলে মাছ ধরা সহজ হচ্ছে। তাই এই সময়টিতে আড়িয়াল বিলের জনগোষ্ঠী বিশেষভাবে সকল জেলে জনগোষ্ঠী নদী, বিল ও হাওর থেকে মাছ সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছে।
শ্রীনগর আরধীপাড়া দিঘীরপাড়ের গৃহিণীরা ব্যস্ত সময় পার করছে মাছ কাটা, ছোট বড় মাছ বাছাই করে রোদে শুকানোতে।
গৃহিনী লাখি আক্তার বলেন, গ্রামের বাজার থেকে ১০কেজি পুটি মাছ কিনেছি শুটকি দিবো তাই। সারা বছর রেখে খাওয়ার ব্যাবস্থা করছি। শুটকীর আবার ধরণ রয়েছে। সাধারণত পুটিমাছ, কইলশা মাছ শুটকী ও চেপা শুটকী এই দু’ধরনের শুটকী তৈরি করা হয়।
যেসব জাতের মাছ বেশিক্ষণ সংরক্ষণ করা যায়না সেসব জাতের মাছই বেশি শুটকী করা হয়। তাছাড়া আড়িয়াল বিলে টাকি, মলা, টেংড়া, চিকড়া, পুটি, শোল, চিংড়ি, চান্দা, বৈচা মাছের শুটকী বেশি তৈরি হয়। তবে চেপা শুটকী শুধুমাত্র পুটি ও চাপিলা মাছ দিয়ে তৈরি করা হয়। অন্য কোন মাছ দিয়ে চেপা শুটকি ভালো হয় না।
আড়িয়াল বিলের জনগোষ্ঠীর নিকট শুটকী ও চেপা শুটকী খুবই জনপ্রিয়। এই শুটকীকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে অনেকের কর্মসংস্থান।