মুন্সিগঞ্জ, ২৮ জুন ২০২৪, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় নিজের গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা রেখেই কনকসার-নাগেরহাট খাল খননের অভিযোগ পাওয়া গেছে সাব ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। সরকারি খালের জমিতে নিজের একাধিক অবৈধ স্থাপনা টেকাতে এমন আচরণ বলে দাবি খালপাড়ের বাসিন্দাদের।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কনকসার ইউনিয়নের নাগেরহাট খালের পশ্চিম পাশের সরকারি সড়ক কেটে খাল খনন কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু পূর্ব পাশে খালের জমিতে একাধিক অবৈধ স্থাপনা থাকলেও তা উচ্ছেদ করা হয়নি।
এসময় খালের জমি পুনরুদ্ধার না করায় ক্ষোভ জানান খালের পশ্চিমপাড়ের বাসিন্দারা। তারা বলছেন, পূর্ব পাশে খাল খনন কাজের সাব ঠিকাদার শামিম মোড়লের একাধিক অবৈধ স্থাপনা থাকায় তিনি ইচ্ছেকরেই সেগুলো উচ্ছেদ করেননি। এর পরিবর্তে পশ্চিম পাশের সরকারি সড়ক কেটে বেকায়দায় ফেলেছেন চলাচলকারীদের।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ৮৪ লাখ টাকা ব্যায়ে কনকসার-নাগেরহাট খালের সাড়ে ৩ কিলোমিটার অংশ খনন ও সংস্কার কাজ পান লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মিজানুর রহমান মোল্লা। বর্তমানে প্রকল্পটি শেষের পথে। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘খালের দুই পাড়েই সরকারি জমি রয়েছে। পশ্চিমপাড়ে যে সরকারি রাস্তার কথা বলা হচ্ছে সেখানেও খালের জমি রয়েছে। আর পূর্ব পাশে যে অবৈধ স্থাপনা রয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া প্রশাসনের কাজ। যার বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে সেই শামিম মোড়ল আমার কাজের অংশীদার। তার অবৈধ স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিতে আমিও বলেছি। অবশ্যই সেগুলো সরাতে হবে।’
সাব-ঠিকাদার শামিম মোড়ল এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে বক্তব্য না দিয়ে দেখা করতে বলেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জিল্লুর রহমান মিঠু বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের টাকায় সিংহেরহাটি মাঠ থেকে কনকসার বাজার পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মাণ করা হয়। কিছুদিন আগে সড়কটি সংস্কারে জেলা পরিষদ থেকে ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দও আসে। কিন্তু এরমধ্যেই খাল খননের কাজে ব্যবহৃত ভেকু চলাচলের সুবিধার্থে সড়কটি কেটে ফেলা হয়েছে। অথচ পূর্ব পাশে খালের জায়গায় একাধিক অবৈধ স্থাপনা থাকলেও সেগুলো উচ্ছেদ করা হয়নি। আমি বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারা বুধবার সার্ভেয়ার পাঠিয়ে পূর্ব পাশের খালের জমিতে লাল নিশানা টানিয়েছে।’
স্থানীয় লালু ফকির (৯৫) বলেন, ‘সরকারি খালের জমি দখল করে ৪টি অবৈধ দোকানপাট তুলেছেন শামিম মোড়ল। সেগুলো উচ্ছেদ না করেই তিনি খাল খনন কাজ শেষ করেছেন। কেন তার স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে না। তার খুটির জোর কোথায়?’
আব্দুস সালাম মৃধা (৫৫) বলেন, ‘পূর্ব পাশে শামিম মোড়লের একাধিক অবৈধ স্থাপনার মধ্যে একটি প্রায় ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের দোকানঘর রয়েছে। সেটি বাচাতে তিনি পশ্চিম পাশে আমার রেকর্ডীয় জমি কেটে ফেলেছেন। আমি এ নিয়ে প্রতিবাদ করলেও তারা ভ্রুক্ষেপ করেনি।’
স্থানীয় আতাউর রহমান (৬৩) বলেন, ‘১৯৭০-৭২ সালে এই খালে ভরা পানি ছিলো। কনকসার ব্রিজের মুখ থেকে ঢাকার সদরঘাট অভিমুখে প্রতিদিন লঞ্চ চলাচল করতো। ধীরেধীরে খালটি ভরাট হয়ে গেছে। অনেকে এখনও খালের জমি দখলে নিতে মরিয়া। এদের কোন ধরনের ছাড় দেয়া উচিৎ নয়। প্রশাসনের উচিৎ অবৈধ দখলদারদের দ্রুত উচ্ছেদ করে খালের জমি পুনরুদ্ধার করা।
লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘পূর্ব পাশে যেসকল অবৈধ স্থাপনা রয়েছে সেগুলোকে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে। শীঘ্রই সেগুলো উচ্ছেদ করা হবে।’