মুন্সিগঞ্জ, ২৯ নভেম্বর, ২০২২, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
ধর্ষণের শিকার হয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মাতব্বরদের মাধ্যমে বিচার না পাওয়ায় পদ্মা তীরবর্তী মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার হাসাইল গ্রামে মাদ্রাসা ছাত্রী লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।
এমনকি এ ঘটনায় থানায় মামলা রুজুর পর পুলিশের সহযোগিতা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার।
অন্যদিকে জোরপূর্বক ধর্ষণের ঘটনার দেড় মাস অতিবাহিত হলেও আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ার সুযোগে ধর্ষকের পরিবারের হুমকি-ধমকিতে বর্তমানে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে ভুক্তভোগী পরিবার।
অপরদিকে দরিদ্র পরিবারের নাবালিকা মাদ্রাসা ছাত্রীর বাবা শারীরিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গ্রাম্য মাতব্বররা কয়েকদফা সালিশ বৈঠক করলেও সুষ্ঠ বিচার পেতে সহযোগিতা করছে না। উল্টো মাদ্রাসা ছাত্রীর পরিবারকে ধর্ষকের পরিবারের কাছ থেকে টাকা-পয়সা ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিয়েছে স্থানীয় মাতব্বররা। তাদের এই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় স্থানীয় ইউপি সদস্য ও মাতব্বররা নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে।
সরেজমিন হাসাইল গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বিচারের আশ্বাস দিয়ে গ্রাম্য মাতব্বর এবং আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশের তৎপরতা না থাকায় ধর্ষকের পরিবার ও প্রতিবেশীদের নানা গুঞ্জনে সুষ্ঠ বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় ভুগছে মাদ্রাসা ছাত্রী ও তার পরিবার। তাদের চোখে মুখে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠার ছাপ লক্ষ্য করা গেছে। ধর্ষণের শিকার মাদ্রাসা ছাত্রীর বাড়ীতে গ্রামের মানুষের আনাগোনা থাকলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউই ধর্ষকের বিচারও দাবি করছে না।
মামলার এজাহার সূ্ত্রে জানা যায়, গত ১২ অক্টোবর রাতে উপজেলার হাসাইল বানারী ইউনিয়নের হাসাইল গ্রামে ১৫ বছর বয়সী এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে প্রতিবেশী মোস্তফা প্রামানিকের ছেলে মো. রাব্বি উরফে শাহাদাত প্রামাণিক।
মাদ্রাসা ছাত্রীর মা অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার পর স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবু হালদার, মাতব্বর ফয়সাল হালদার, আফজাল মেলকার, সেলেম মল্লিক, হাসেম মল্লিকসহ স্থানীয় মাতব্বরদের কাছে বিচার দাবী করা হয়। তারা লোক দেখানো সালিশ বৈঠক করে ঘটনার কোনো সুষ্ঠ বিচার না করে উল্টো আমাদের টাকা-পয়সা দিয়ে মিমাংশার প্রস্তাব দিয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে ঘটনার এক সপ্তাহ পর ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠ বিচার পেতে টংগিবাড়ী থানায় মো. রাব্বি উরফে শাহাদাত প্রমানিককে আসামী করে মামলা রুজু করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৭ অক্টোবর হাসাইল বানারী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য বাবু হালদার ও গ্রাম্য মাতব্বর ফয়সাল হালদার, আফজাল মেলকার, সেলেম মল্লিক, হাসেম মল্লিকসহ স্থানীয় মাতব্বররা সালিশ বৈঠক করে। অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হলে ধর্ষকের পরিবার তাতে রাজি হয়নি। ফলে বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি মাতব্বররা।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, স্থানীয় মাতব্বররা ধর্ষকের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে সুষ্ঠ বিচারের পরিবর্তে এখন ছাত্রীর পরিবারকে মিমাংসার প্রস্তাব দিচ্ছে।
মামলার বাদী ও ধর্ষিতার মা আরও বলেন, থানায় মামলা রুজুর পর থেকে ধর্ষক মো. রাব্বি উরফে শাহাদাত প্রামাণিক বাড়িছাড়া। ধর্ষকের পরিবার প্রতিবেশী হওয়ায় প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ আমাদের গ্রামছাড়া করার হুমকি দিচ্ছে।
ধর্ষণের শিকার মাদ্রাসা ছাত্রীর বাবার অভিযোগ, মানসম্মানের কথা ভেবে প্রথমে বিষয়টি পুলিশকে জানাতে চাইনি। স্থানীয় মাতব্বররা সুষ্ঠ বিচারের আশ্বাস দিলে তারা কোনো সুরাহা করতে পারেনি। তাই বাধ্য হয়ে থানায় মামলা রুজু করা হয়।
তিনি আরও বলেন, মামলা রুজুর পর থেকে মাতব্বররা দফায় দফায় বাড়ীতে এসে টাকা-পয়সা দিয়ে মিমাংসা বসতে বলছে। বিপরীতে তাদের বলা হয়েছে, টাকা চাই না, আমার মেয়ের সম্মান ফিরিয়ে দেন।
জানতে চাইলে ইউপি সদস্য বাবু হালদার বলেন, সালিশ বৈঠকে কোনো সুরাহা করা সম্ভব হয়নি। থানায় মামলা রুজু হলেও আসামিকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
মাতব্বর আফজাল মেলকার বলেন, এ ঘটনায় ছেলের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়ার যে গুঞ্জন শুনেছেন, তা সঠিক নয়। ছেলের পক্ষ রাজি না হওয়ায় বিষয়টি সমাধান করতে পারেনি স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ মাতব্বররা।
অন্যদিকে সাংবাদিকদের উপস্থিতির কথা শুনে তারা ঘরে তালা দিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। তাই ধর্ষনের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদের বাড়িতে পাওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও টংগিবাড়ী থানার এস আই জাফর আলী বলেন, মাদ্রাসা ছাত্রীর মেডিক্যাল পরিক্ষা করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর আসামীর বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।