মুন্সিগঞ্জ, ৭ আগস্ট ২০২৩, নিজস্ব প্রতিবেদক (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মার শাখা নদীতে বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় ৪৬ যাত্রী নিয়ে পিকনিকের ট্রলার ডুবির ঘটনায় নিখোঁজ আরেক শিশুর মরদেহ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা আট। নিখোঁজ রয়েছে আরও দুই শিশু। নিখোঁজ দুইজন হলেন, নাভা (৫) ও মাহির (৭)।
সোমবার সকাল আটটার দিকে ঘটনাস্থল থেকে ২ কিলোমিটার দূরে টংগিবাড়ী উপজেলার সুবচনী বাজার সংলগ্ন নদী তীরে শিশু তুরান আহম্মেদ (৮) এর মরদেহ ভেসে উঠলে স্থানীয়রা উদ্ধার কার্যক্রমে থাকা কোস্টগার্ড ও বিআইডব্লিউটিএর সদস্যদের খবর দেয়। তারা মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারকে জানালে শনাক্ত হয়।
গেল শনিবার রাত ৮টার দিকে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার খিদিরপাড়া ইউনিয়নের রসকাটি এলাকায় নদীতে বালুবাহি বাল্কহেড ও পিকনিকের ট্রলারটি পাশাপাশি চলার সময় ধাক্কা লেগে ট্রলারটি ডুবে যায়। ট্রলারটিতে ৪৬ জন যাত্রী ছিলো। সেদিন রাতেই ঘটনাস্থল থেকে সাত জনের মরদেহ উদ্ধার হয়। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে দশটার দিকে ডুবে যাওয়ার ১৫ ঘন্টা পর ট্রলারটি নদীর তলদেশ থেকে ক্রেন দিয়ে টেনে উদ্ধার করে বিআইডব্লিউটিএ, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশের সদস্যরা। বিকালে বাল্কহেডটি জব্দ করে নৌ পুলিশ। এসময় অজ্ঞাত মালিক-চালকসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে লৌহজং থানায় বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন ভাই-ভাগ্নে হারানো ভুক্তভোগী স্বজন রুবেল শেখ।
ট্রলারডুুবিতে নিহতরা হলেন- সিরাজদিখানের লতব্দী ইউনিয়নের খিদিরপুর এলাকার জাহাঙ্গীরের স্ত্রী এপি বেগম (২৮) ও তার দুই ছেলে সাকিবুল (১০) এবং সাজিবুল (৭)। একই এলাকার ফিরোজ সরকারের পুত্র ফারিয়ান (৮), শাহাদাত হোসেনের ৫ মাসের পুত্র হুমায়রা, শাহজাহানের স্ত্রী মোকসেদা বেগম (৩৮), ও আব্দুল হাকিমের মেয়ে পপি বেগম (৩০)।
এদিকে দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসন ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত গঠন করেছে। গতকাল তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক আবুজাফর রিপন জানান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট শারমিন আরাকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, লৌহজংয়ের ইউএনও, বিআইডব্লিউটিএ ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধিকে সদস্য করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পদ্মা নদীর মাওয়া পয়েন্ট থেকে ছেড়ে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের তালতলা অভিমুখে আসার পথে লৌহজংয়ের রসকাটি এলাকায় পাশাপাশি চলতে থাকা একটি খালি বাল্কহেডের সাথে ধাক্কা লাগে পিকনিকের যাত্রীবাহী ট্রলারটির। মুহুর্তেই সেটি পানির নিচে তলিয়ে যায়। এসময় চিল্লাচিল্লির শব্দ শুনে পাশ্ববর্তী রসকাটি জামে মসজিদের মাইকে ট্রলারডুবির ঘোষণা দেয়া হলে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে এসে অন্তত ৩৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করে। এসময় ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করেন তারা। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল পৌঁছে আরও ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করে। রোববার দ্বিতীয় দিনের মত উদ্ধার অভিযান চললেও নিখোঁজ কারও মরদেহ পাওয়া যায়নি। তৃতীয় দিন সোমবার সকালে নিখোঁজ ৩ শিশুর মধ্যে পাওয়া গেছে একজনের মরদেহ। এখনো নিখোঁজ রয়েছে দুইজন। তাদের উদ্ধারে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।