১৭ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
শুক্রবার | রাত ৩:০৭
মুন্সিগঞ্জে এমপি সমর্থক প্রার্থীর উপর হামলা, কৃষক লীগের সম্মেলন পন্ড
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ৬ জুন ২০২৩, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)

দীর্ঘ ১২ বছর পর সম্মেলনের আয়োজন করেও তা সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারেনি মুন্সিগঞ্জ জেলা কৃষক লীগ। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহানা তাহমিনা সম্মেলনের কাউন্সিলর তালিকা নিয়ে ‘অযাচিত হস্তক্ষেপ’ করলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়ে সম্মেলন পন্ড হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন খোদ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সমীর চন্দ্র। এসময় স্থানীয় সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস সমর্থিত এক সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর উপর হামলার ঘটনাও ঘটে।

কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সমীর চন্দ্র বলেন, ‘সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়। কাউন্সিলরদের নিয়ে দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু করার সময় হঠাৎ করে সন্ত্রাসী বাহিনী ঢুকে কাউন্সিলরদেরকে মারধর করে। কৃষক লীগের সম্মেলন পণ্ড করে দেয়। আমরা যারা কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সেখানে ছিলাম আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। পরবর্তীতে সম্মেলন স্থগিত ঘোষণা করে ঢাকায় চলে আসি।’

তিনি বলেন,  ‘মুন্সিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহানা তাহমিনা আমাদের হুমকি দিচ্ছিলেন যে কৃষক লীগের কাউন্সিলররা কমিটি করবেন না। কাউন্সিল কমিটি তিনি করবেন। উনি যে নেতা নির্বাচন করে দিবেন সেটাই আমাদের ঘোষণা করতে হবে। এই নিয়ে উনি আমাদের উপর চাপ দিচ্ছিলেন।’

তিনি বলেন, কাউন্সিলরদের তালিকা নিয়ে হঠাৎ করে তারা প্রশ্ন তুলে সম্মেলন বন্ধ করতে বলেন। কিন্তু কাউন্সিলরদের তালিকা প্রতিটি উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষর করে জেলায় পাঠিয়েছেন। জেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষর করে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন। এরপর কেন্দ্র থেকে আমরা কাউন্সিলর লিষ্ট অনুমোদন দিয়ে আমরা প্রত্যেক প্রার্থীর কাছে বিতরণ করেছি। প্রথম অধিবেশনেও তারা কাউন্সিলর লিস্ট নিয়ে আপত্তি করেননি।

তিনি আরও জানান, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির ভিডিও ধারণ করার সময় কৃষক লীগের প্রচার সেলের কর্মী আব্দুস সালামের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়া হয়।

কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কোন লোক এমন অসদাচরণ করতে পারেন না। কৃষক লীগের সম্মেলন হবে কৃষক লীগের গঠনতন্ত্র মোতাবেক। এখানে কারো অনৈতিক হস্তক্ষেপ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।

এদিকে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে ভোট কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে কাউন্সিলর তালিকা নিয়ে হট্টগোল সৃষ্টি হলে একপর্যায়ে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত শামিম হোসাইন সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শেখ মনিরুজ্জামান রিপনের উপর হামলা করেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। আহত রিপন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রিপন মুন্সিগঞ্জ ৩ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাসের অনুসারী।

তবে অভিযুক্ত শামিম হোসাইন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘সম্মেলনে কাউন্সিলর তালিকা নিয়ে চারিদিকে বিস্তর অভিযোগ উঠে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগের নেতাদেরও কৃষকলীগের সম্মেলনে কাউন্সিলর করা হয়। এ নিয়ে দ্বিতীয় অধিবেশনে তুমুল হট্টগোল হয়। আমি ঘটনা শুনে ভেতরে গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করি। এমন সময় মিরকাদিম এলাকার বহিরাগত কিছু লোকজন মনিরুজ্জামান রিপনের উপর হামলা করে। পরে আমি তাকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে আসি।’

গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সদর উপজেলা দরগাহবাড়ি এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে মুুন্সিগঞ্জ জেলা কৃষকলীগের সম্মেলনে এসব ঘটনা ঘটে। পরে নতুন কোন কমিটি ঘোষণা ছাড়াই সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেন অতিথিরা।

এ ঘটনার পর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন কৃষক লীগ মুন্সিগঞ্জের সভাপতি মহসিন মাখন। এসময় তার সাথে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহানা তাহমিনা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে আওয়ামী লীগ সভাপতিও ঘটনার ব্যাখা দেন।

মহসিন মাখন সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, সম্মেলনে যাদেরকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বানানোর জন্য চেষ্টা করা হচ্ছিলো তারা কৃষকলীগের কমিটির কেউই না। ভূয়া কাউন্সিল করা হয়েছিলো, কমিটি ঘোষনার আগেই ফেসবুকে দেওয়া হয়েছিলো। দীর্ঘদিন সংগঠনের জন্য কাজ করেছি, আমাকে না জানিয়ে অবৈধভাবে কমিটি ঘোষনা করা হচ্ছিলো। এই বিষয়টি আমি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন কে জানালে তিনি প্রতিবাদ করতে অধিবেশন স্থলে প্রবেশ করে। তখন হট্টগোল হলে দ্বিতীয় অধিবেশন মুলতবি ঘোষনা করা হয়।

মুন্সিগঞ্জ জেলা কৃষক লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি পদে দুইজন ও সাধারণ সম্পাদক পদে দুইজন প্রতিদ্বন্দীতা করেন। সম্মেলনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার কথা ছিলো জেলার ৬টি উপজেলার ১৩৯জন কাউন্সিলরের।

সভাপতি প্রার্থীরা হলেন- বর্তমান কমিটির সভাপতি মুন্সিগঞ্জ সদরের মিরকাদিমের বাসিন্দা মহসিন মাখন ও একই এলাকার সাবেক ছাত্রনেতা ও জেলা কৃষকলীগের সদস্য ম. মনিরুজ্জামান শরিফ।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা হলেন- মুন্সিগঞ্জ সদরের রামপাল ইউনিয়নের বাসিন্দা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি শেখ মনিরুজ্জামান রিপন ও শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর ইউনিয়নের বাসিন্দা শামছুল আলম।

মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তারিকুজ্জামান বলেন, সম্মেলনস্থলের বাইরে আমাদের ফোর্স ছিলো। হট্টগোল কিংবা মারামারির বিষয়ে কোন পক্ষ এখনো লিখিত অভিযোগ করেনি।

error: দুঃখিত!