মুন্সিগঞ্জ, ৫ আগস্ট ২০২৪, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
রোববার (৪ আগস্ট) গুলিবিদ্ধ গুরুতর আহত কয়েকজনকে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসক। আহতদের নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সেটি থামিয়ে আহতদের নামিয়ে লাঠিসোটা দিয়ে পেটাতে শুরু করেন কয়েকজন। এরই মধ্যে ছিনিয়ে নেয়া হয় সাথে থাকা মোবাইল ফোন, টাকা।
এমনই হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা যায় শহর থেকে বের হওয়ার পথ পঞ্চসার ইউনিয়নের পেট্টোলপাম্প এলাকায়। দূর থেকে ধারণ করা এসব দৃশ্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া গেছে।
রোববার দিনভর মুন্সিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে আন্দোলনকারীদের কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের দফায় দফায় হামলা- পাল্টা হামলা, সংঘর্ষ-গুলিতে প্রাণ যাওয়া ৩ জনের নাম-পরিচয় মিলেছে এখন পর্যন্ত। অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে, নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।
সরকারি হিসাব মতে- গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন ১১৫ জন। এর মধ্যে উভয়পক্ষের ২৫ জনের অবস্থা গুরুতর। তবে, এই হিসাবের বাইরেও বড় একটি সংখ্যা রয়েছে। যারা আক্রমণের ভয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাননি।
রোববার সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শহরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সড়কে আন্দোলনকারীদের অবস্থানে ৮ ঘন্টা ধরে অচল ছিলো মুন্সিগঞ্জ শহর। পুরোপুরি বন্ধ ছিলো যান চলাচল। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় শহরের সুপারমার্কেট চত্বর।
এসময় আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় ৫ টি মোটর বাইক। এছাড়া সড়কের উপর থাকা ১ টি কাভার্ডভ্যান ও ১ টি পিকআপ ভ্যানেও আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা। বিকালে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ভাঙচুর করে জেলা বিএনপির কার্যালয়সহ অর্ধশত দোকানপাট। এসময় তারা বিএনপি কার্যালয় থেকে বিভিন্ন সরঞ্জাম বের করে সড়কে রেখে আগুন ধরিয়ে দেয়।
সকালে আন্দোলনকারীদের উপর আওয়ামী লীগের হামলার ঘটনার ভিডিও ধারণ করার সময় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের বাঁধার মুখে পড়েন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। এসময় স্ট্যাম্প ও কাঠের ডাসা দিয়ে পিটুনির শিকার হন দুই সাংবাদিক। আহত সাংবাদিকরা হলেন, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির জেলা প্রতিনিধি মইনউদ্দিন সুমন ও দৈনিক সবুজ নিশান পত্রিকার মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি মো. ফরহাদ হোসেন। এর মধ্যে ফরহাদের হাত ভেঙে গেছে।
আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতরা হলেন- রিয়াজুল ফরাজী (৩৫), মো. সজল (৩০) ও ডিপজল (১৯)। নিহতদের মধ্যে রিয়াজুল মৃত কাজী মতিনের ছেলে, সজল আলী আকবরের ছেলে ও ডিপজল সিরাজ সরদারের ছেলে। এরা সকলেই শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা।
মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল রিয়াজুল ও ডিপজলের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘এদের শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে।’ অপর নিহত সজলের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার একেএম তাইফুল হক বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ সজলকে মৃত অবস্থায় এখানে আনা হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।’