২৪শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বৃহস্পতিবার | রাত ১১:৩৫
মুক্তিযুদ্ধের কালজয়ী গানের স্রষ্টা বিক্রমপুরের নয়ীম গহর
খবরটি শেয়ার করুন:

মুক্তিযুদ্ধে দেশাত্মবোধক গান খুবই
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। মূলত এ
গান রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের, দেশের পক্ষে যুদ্ধ করতে সাহস ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল ।‘জন্ম আমার ধন্য হলো’, ‘পূবের আকাশে ঐ সূর্য্য উঠেছে, ‘নোঙ্গর তোলো তোলো’,‘জয় জয় জয় জয় বাংলা’এর মতো প্রাণে ঝড় তোলা দেশাত্মবোধক গানের গীতিকবি নয়ীম গহর । তিনি ১৯৩৬সালের ১৪ আগস্ট মুন্সীগঞ্জ সদরের সিপাহি পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আওলাদ হোসেন । আর মাতা কাজী শাহজাদি । মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন তার মুন্সিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় এবং হরগঙ্গা কলেজে কাটে। জগন্নাথ কলেজে ডিগ্রি পরীক্ষায় তিনি ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৫৫-৫৬ শিক্ষাবর্ষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে) পড়ার জন্য ভর্তি হন। কিন্তু পিতার মৃত্যুতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বাদ দিয়ে এ্যালবার্ড ডেভিড কোম্পানিতে কর্মকর্তা পদে যোগ দেন। বিজ্ঞানে ডিগ্রিধারীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে তিনিই একমাত্র কলা বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারী যিনি এই কোম্পানিতে কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পান। পরবর্তীকালে তিনি চট্টগ্রামের এমআর সিদ্দিকীর সঙ্গে যৌথভাবে থ্যারাপিউটিকস পাকিস্তান লিমিটেড নামক একটি ওষুধ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭১সালের ২৫মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর লিখিত চিঠি নিয়ে তিনি চট্টগ্রামে এমআর সিদ্দিকীর সঙ্গে দেখা করে বঙ্গবন্ধুর চিঠি হস্তান্তর করেন।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বঙ্গবন্ধু
ও এমআর সিদ্দিকীর সঙ্গে নয়ীম গহরের
পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত
আত্মজীবনীতে বর্ণিত মুন্সিগঞ্জের কাজী কসবা গ্রামের মীর আশরাফ উদ্দিন ওরফে মাখন ছিলেন নয়ীম গহরের নিকটাত্মীয়।

প্রচারবিমুখ নয়ীম গহর এসব কথা কখনো কারো কাছে ‘ঢাক ডোল পিটিয়ে’ প্রচার করতেন না। বাঙালি জাতীয়তাবাদের পক্ষে নয়ীম গহর লেখালেখি করতেন ছাত্রজীবন থেকেই। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত মুন্সিগঞ্জের কালজয়ী গানগুলো তিনি রচনা করেন মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই। স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত তিনি বিবিসির বাংলা বিভাগে সংবাদ পাঠক ও ভাষ্যকার হিসেবে দায়িত্বপালন করেন।১৯৮২ সালে দেশে ফিরে তিনি ‘ইন্টারট্রেড’ নামক ইনটেনডিং ফার্মের ব্যবসা শুরু করেন।এ সময়ে তিনি বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন গঠনে অবদান রাখেন এবং প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

ব্যবসায় তিনি প্রচুর আয় করতেন। আবার দু’হাতে তা শিল্প, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে দান করতেন। গীতিকার ছাড়াও তিনি ছিলেন নাট্যকার, অভিনেতা
ও লেখক। ইংরেজি ও বাংলা ভাষার ওপর ছিল তার প্রচুর জ্ঞান।তার লিখিত গ্রন্থের মধ্যে কাব্যগ্রন্থ শব ও সবক্তি, উপন্যাস রাহুগ্রাস ও নিষিদ্ধ বিছানা অন্যতম। তার স্ত্রী রিজিয়া গহর একজন গৃহিণী। চার কন্যা, অজন্তা, ইলোরা, মিথিলা ও অবন্তি। একমাত্র ছেলে জয়ন্ত। শেষ জীবনে এসে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার খোঁজখবর
নিতেন। ২০০০ সালে নয়ীম গহরের ওপেন হাট সার্জারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহযোগিতা করেন। মৃত্যুর ৬ মাস পূর্বে স্ট্রোকে তার স্মৃতিশক্তি লোপ পায়।৭ অক্টোবর ২০১৫ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসারত অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত এই বীর সন্তান ।

লেখক: শেখ রাসেল ফখরুদ্দীন

error: দুঃখিত!