২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রবিবার | রাত ২:২৮
মিরকাদিমে শাহিনের হলফনামায় তথ্য গোপনের ঘটনায় তোলপাড়!
খবরটি শেয়ার করুন:

সদ্য যোগ দেয়া মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিমে আওয়ামী লীগের বিতর্কিত মেয়র শহিদুল ইসলাম শাহীনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও মিরকাদিমের রিটার্নিং অফিসারের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ বলে বিরোধীপক্ষের প্রার্থীদের অভিযোগ। মেয়র পদে জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক, সাবেক সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মনছুর আহামেদ কালাম ও মনোনয়ন বাতিল হওয়া বিএনপির মেয়র প্রার্থী শামসুর রহমান ক্ষুব্ধ। তারা বলেন, শনিবার মনোনয়ন যাচাই-বাছাইকালে নির্বাচন কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শাহীনের মনোনয়নের হলফনামা কোনো রকম যাচাই-বাছাই করেননি। পক্ষান্তরে বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিলের জন্য নানারকম প্রশ্ন ও নানাভাবে হয়রানি করে। পরে ৮৪নং হোল্ডিংয়ের একটি বাড়ির ৩৪০০ টাকা ট্যাক্স বকেয়া দেখিয়ে বিএনপির প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করেন।

অথচ শাহীনের বিরুদ্ধে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় মামলা রয়েছে। মামলা নং ২৪, তাং-৬/১১/২০১৩, ধারা ১৪৭/১৪৮/ ১৪৯/৪৪৭/৪৪৮/৩২৩/৩২৫/৩৫৪/৩৮০/৪২৭/৪৩৬/১০৯/১১৪/৫০৬ দণ্ডবিধি।

বিএনপির প্রার্থী শামসুর রহমানের
আইনজীবী হালিম হোসেন বলেন, দরখাস্ত দিয়ে মেয়র প্রার্থী শাহীনের হলফনামার কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে।কিন্তু নির্বাচন অফিস গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তার সার্টিফাই কপি আমাদের দেননি। বলেছেন, প্রকাশ্যে হলফনামা দেখানো হবে। কিন্তু তাও দেখানো হয়নি।

স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী, বায়রার মহাসচিব
আওয়ামী লীগ নেতা মনছুর আহামেদ কালাম বলেছেন, শাহীনের বিরুদ্ধে মুন্সীগঞ্জ থানায় মামলা রয়েছে। কিন্তু হলফনামায় তা গোপন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে আজ সোমবার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে আবেদন করে শাহীনের হলফনামার সার্টিফাই কপি চাওয়া হবে। এরপর জেলা প্রশাসকের কাছে তথ্য গোপনের জন্য অভিযোগ দেয়া হবে, তার মনোনয়ন বাতিলের জন্য।

এ ব্যাপারে সহকারী রিটার্র্নিং অফিসার রেজাউল ইসলাম বলেন, ছোটখাটো বিষয়গুলো রিটার্নিং অফিসারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে তিনি কি সিদ্ধান্ত দেবেন। কেউ তথ্য গোপন করে থাকলে আপিল করতে পারবেন।

এদিকে গতকাল রবিবার মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার প্রার্থীদের যাচাই-বাছাইকালে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী রেজাউল ইসলাম সংগ্রাম ও জালালউদ্দিন রুমি রাজন মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে ৪ জনের মনোনয়র বহাল রয়েছে।

এছাড়া মহিলা কাউন্সিলর পদে ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় নার্গিস আক্তার বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

অপর ২টি সংরক্ষিত আসনে ৮ জনই টিকেছেন। ৯টি কাউন্সিলর পদে শক্তিশালী প্রার্থী মধ্যে ১ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর বিএনপি নেতা তারিক কাশেম খান মুকুল, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ নেতা মকবুল হোসেনের মনোনয়ন বাতিলসহ মোট ৯ জনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ আগামী ৩ দিনের মধ্যে আপিল করবেন। তবে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ২ জনেরই মনোনয়ন বাতিল হয়ে গেছে। পরবর্তীতে এ ওয়ার্ডের পুনঃতফসিল ঘোষণা হতে পারে। সব মিলিয়ে এখন মনোনয়ন বৈধ রয়েছে ৩৭ জনের। এরমধ্যে আপিলে গ্রহণযোগ্য না হলে ৮ নম্বর ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থীরাও বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় জয়ের পথে রয়েছেন।

সূত্র মতে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী মেয়র শাহীন গত ৩ মাস আগে আওয়ামী লীগে যোগদান করে দলীয় মেয়র পদে মনোনীত হন। মিরকাদিমের কুখ্যাত রাজাকার হিসেবে পরিচিত আবু বকর মৃধার নাতি মেয়র শাহীন। তার নানা আবু বকর মৃধা মিরকাদিমের কুলুপাড়ায় (বর্তমান নাম পূর্বপাড়া-পশ্চিমপাড়া) যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযোদ্ধা মজিবুর রহমানকে হত্যাসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে রগ কেটে পিটিয়ে আহত করে। পরে মুন্সীগঞ্জ শহর থেকে ৭১র যুদ্ধকালীন মুন্সীগঞ্জের ৬ উপজেলার বিএলএফের কমান্ডার, বর্তমানে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংদদের কমান্ডার ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আনিসুজ্জামান আনিসের নেতৃত্বে কুলুপাড়া গ্রামে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্ধার করেন। পরে মুক্তিযোদ্ধারা কুলুপাড়া গ্রাম জ্বালিয়ে দিতে বাধ্য হন। এ তথ্য জানিয়েছেন বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আনিসুজ্জামান আনিস ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আশা।

এছাড়াও শাহীনের বিরুদ্ধে মিরকাদিমে বর্তমান বিএনপির মেয়র প্রার্থী শামসুর রহমানের বিরোধপূর্ণ বাড়ি দখল, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে রিকাবীবাজার কালভার্টসংলগ্ন গোপপাড়া খাল-জলাশয় ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ, মাদক-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ নানা ধরনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে।

error: দুঃখিত!