২৬শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
শনিবার | সকাল ৬:২৮
মিরকাদিমে রাজাকারের নাতিকে মনোনয়ন দেয়ায় মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগে ক্ষোভ-হতাশা
খবরটি শেয়ার করুন:

ক্ষোভে-ফুঁসছে মুন্সীগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা। মেয়র পদে মনোনয়নে একচ্ছত্র সিদ্ধান্তে শহিদুল ইসলাম শাহীন নামে মুন্সীগঞ্জের তালিকাভুক্ত এক রাজাকারের নাতিকে মিরকাদিম পৌরসভায় মনোনীত করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ মাস আগে আওয়ামী লীগে যোগদান করেই বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এ মনোনয়ন পাওয়ায় তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে মুন্সীগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামীলীগ ঘরানার রাজনীতিকদের মধ্যে। এ ঘটনায় শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় বায়রার মহাসচিব, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক মেয়র প্রার্থী মনছুর আহামেদ কালাম দরগাহ বাড়িতে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি গতবার সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। এরআগে শনিবার রাত ৭টায় মুন্সীগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে মেয়র শাহীনকে মিরকাদিম পৌরসভায় মেয়র নির্বাচিত করেন স্থানীয় মনোনয়ন বোর্ড।

৭১’র যুদ্ধকালীন মুন্সীগঞ্জের ৬ উপজেলার বিএলএফ’র কমান্ডার, বর্তমানে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংদদের কমা-ার আনিসুজ্জামান আনিস বলেন, মেয়র পদে মনোনীত করা শহিদুল ইসলাম শাহীন মুন্সীগঞ্জের চিহ্নিত রাজাকারের নাতি। তার মামারাও রাজাকার। মিরকাদিমের কুলুপাড়ায় যুদ্ধের কয়েক দিন পর শাহীনের নানা আবু বক্কর মৃধা ও ২ মামা তোফাজ্জল, মোফাজ্জল শহরের কোর্টগাঁওয়ে মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে এবং আরও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে রগ কেটে ও পিটিয়ে আহত করে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুরকে হরগঙ্গা কলেজের মাঠে দাফন করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ শহরেরর কেন্দ্রীয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্বম্ভের তালিকায় মুজিবুরের নাম এক নম্বর রয়েছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আশা জানান, আবু বকর মৃধা মুন্সীগঞ্জের চিহ্নিত রাজাকার। আমাদের জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে দেয়ার খবর পেয়ে তৎকালীন রিকাবীবাজার বর্তমানে মিরকাদিম পৌরসভার কুলুপাড়ায় (বর্তমান নাম পূর্বপাড়া-পশ্চিমপাড়া­) গিয়ে তাকে ধরে আনতে গেলে মসজিদের মাইকে এলাকায় ডাকাত পড়েছে সংবাদ প্রচার করে এলাকাবাসীকে জড়ো করে ফেলে। আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মুজিবুরকে কুপিয়ে হত্যা করে। কালিন্দিপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা হারাধনের পায়ের রগ কেটে দেয়। আমাকেসহ মো. আলী, অলিকে জবাই করার চেষ্ঠা চালিয়ে আহত করে। খবর পেয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকালীন ৬ উপজেলার কমা-ার আনিসুজ্জামান আনিস শহর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সেখানে গিয়ে আমাদের উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে আমরা কুলুপাড়া গ্রামটি জ্বালিয়ে দিতে বাধ্য হই।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র এডভোকেট মুজিবুর রহমান বলেন, ওই রাজাকাররা আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা ও পিটিয়ে-কুপিয়ে আহত করেন।

শনিবার রাতে মতবিনিময় সভায় সাবেক সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মনছুর আহামেদ কালাম বলেন, শহিদুল ইসলাম শাহীন একজন চিহ্নিত রাজাকারের নাতি, রাজাকারের ভাগিনা। নানা বাড়িতে বড় হওয়া শাহীন বিএনপি ও পরে এলডিপির রাজনীতি করতো। গত ১৩ ই আগস্ট জনৈক নেতার হস্তক্ষেপে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। অথচ আমি ৪০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। জনৈক নেতাকে টাকা-পয়সা দিয়ে একজন রাজাকারের নাতিতে নির্বাচিত করায় আমি হতাশ ও বিস্মিত হয়েছি। শাহীনের দাদা আবু বকর মৃধা তৎকালীন রিকাবীবাজার (বর্তমান মিরকাদিম পৌরসভা) ইউনিয়ন বিএনপির প্রথম সভাপতি ছিলো।

এদিকে, শনিবার সকালে মুন্সীগঞ্জ পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় আবেদন জমা দিতে যাওয়ার পথে বাঁধা এবং দলীয় মনোনয়ন জমা না নেয়ার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের দুই মেয়র প্রার্থী সংবাদ সম্মেলন করেছেন। শনিবার রাতে শহরের একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টের শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সাবেক ছাত্রনেতা এসএম মাহতাবউদ্দিন কল্লোল ও শনিবার দুপুর আড়াইটায় মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবে আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান-মুন্সীগঞ্জ জেলার সভাপতি ও মুন্সীগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের উপদেষ্ঠা মন্ড্লীর সদস্য রেজাউল ইসলাম সংগ্রাম সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

error: দুঃখিত!