কাল বেলা দুইটায় পি সারা ওভালে দলের অনুশীলন শেষেও নিশ্চিত খবর, মাহমুদউল্লাহ দেশে ফিরে যাচ্ছেন। ফিরে যাচ্ছেন, কারণ বাংলাদেশের শততম টেস্টের দলে তিনি নেই। সুতরাং এখানে বসে থেকে কী করবেন?
খবরটা লিখতে বসেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চোখ বুলিয়ে ধন্দে পড়ে যেতে হলো। অনেকেই স্ট্যাটাস দিয়েছেন, মাহমুদউল্লাহ ফিরছেন না, দলের সঙ্গে শ্রীলঙ্কাতেই থাকছেন! আবারও খালেদ মাহমুদের শরণ নিতে হলো। বাংলাদেশ দলের ম্যানেজারই যে সকালবেলায় নিশ্চিত করেছিলেন মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের খবরটি। খালেদ মাহমুদ তো বেশ অবাক, ‘কোত্থেকে যে উল্টোপাল্টা খবর হয়!’
শেষ পর্যন্ত ঢাকায় ফোন করে কলম্বো টু ঢাকা নাটকের এই অত্যাশ্চর্য পর্বের মর্মোদ্ধার কিছুটা সম্ভব হলো। বিষয়টি নিয়ে পরিষ্কার হতে সাংবাদিকেরা শেষ পর্যন্ত ছুটে যান বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসানের কাছে। তিনি একটু বিস্মিত, সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট, যেটি বাংলাদেশের শততম, তাতে মাহমুদউল্লাহ নেই ঠিকই, কিন্তু তাঁকে তো কলম্বো থেকে ফিরে আসতে বলা হয়নি! পাশ থেকেই বিসিবির অন্যতম পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিক তখন নাজমুল হাসানকে ভুলটা ধরিয়ে দেন, ‘না, কাল (আজ) ফিরে আসছেন মাহমুদউল্লাহ, তবে আবার ওয়ানডে সিরিজ খেলতে মাশরাফিদের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা ফিরবে ১৮ তারিখে।’ বিসিবি সভাপতির ধারণা, বাংলাদেশের মিডল অর্ডার এই ব্যাটসম্যান হয়তো দেশে ফিরছেন স্বেচ্ছায়!
স্বেচ্ছায় যদি ফিরবেন, তাহলে অনুশীলনের মাঝখানে সাংবাদিকদের অমন আড়াল করে স্টেডিয়ামের প্রবেশদুয়ারে অপেক্ষমাণ গাড়িতে উঠবেন কেন? একজন ফটোসাংবাদিক ছবি তুলতে গেলেন, তিনি ‘না না’ করে গাড়ির দরজা বন্ধ করে দিলেন সশব্দে। ব্যক্তিগত একটি দুঃখের মুহূর্তে কেউ ক্যামেরাবন্দী হতে চায় না। তবে এখন হয়তো ক্যামেরা দেখে অমন বিমুখ না-ও হতে পারেন মাহমুদউল্লাহ। তিনি শ্রীলঙ্কা থেকে আজই উড়াল দিচ্ছেন না। নাজমুল হাসানের সংবাদ সম্মেলনের তিন ঘণ্টা পর বিসিবির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মাহমুদউল্লাহ কলম্বোতেই থেকে যাচ্ছেন আপাতত। শততম টেস্ট উপলক্ষে বিসিবি সভাপতি বেশ কয়েকজন পরিচালককে নিয়ে আসছেন কলম্বোয়। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে কথা বলে বিসিবি সভাপতি সেখানেই সিদ্ধান্ত নেবেন।
কাল মাঠে পা ফেলতেই চিনে নেওয়া গিয়েছিল বিষণ্ন মাহমুদউল্লাহকে। সবাই যখন মাঝমাঠে ফিল্ডিং অনুশীলনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন কিংবা নেটে ব্যাটিংয়ের, মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে মাঠের একেবারে উত্তর প্রান্তে খালেদ মাহমুদ।
দুজনের মধ্যে কথা চলল অনেকক্ষণ। মাহমুদ হয়তো দেশে ফিরে যাওয়ার কথাই বলছিলেন মাহমুদউল্লাহকে। তিনি তো শুধু বাংলাদেশ দলের ম্যানেজারই নন, নন বিসিবির পরিচালক; একজন ক্রিকেট কোচও বটে। কোচ হিসেবে মাহমুদউল্লাহর ওপর বিরাট প্রভাব আছে তাঁর। ক্রিকেটযাত্রায় মাহমুদউল্লাহর সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছাতে অনেকটা পথও দেখিয়েছেন। তিনি নিজেই বললেন, ‘আমি তো ওর মেন্টরও। ওকে এ কথাটা বলতে গিয়ে আমার খুব খারাপ লেগেছে। কিন্তু যেখানে দলীয় স্বার্থ, সেখানে আবেগের কোনো জায়গা নেই।’
হ্যাঁ, কারও জন্যই একাদশে জায়গা পাওয়াটা নিশ্চিত নয়। বাদ কেউ পড়তেই পারে। তাই বলে মাহমুদউল্লাহকে দেশেই ফিরে যেতে হবে? বেনজির এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে মাহমুদ বলেছেন, ‘টেস্টে যেহেতু নেই, সুতরাং এখানে থেকে কী লাভ? ওয়ানডে সিরিজও তো অনেক পরে’, কিন্তু বাদ পড়ার পেছনে অন্য কিছু নেই তো? মাহমুদ এখানে দ্বিধাহীন, ‘অবশ্যই সে পারফরম্যান্সের কারণে বাদ পড়েছে। ওর কাছ থেকে দল ব্যাটিংয়ে যা চায়, তা অনেক দিন ধরেই দিতে পারছে না।’ হয়তো বাজে শট খেলে আউট হচ্ছেন, তবে ফর্ম যে মাহমুদউল্লাহর একেবারেই খারাপ, তা নয়। গল টেস্টে করেছেন ৮ ও ০। তবে হায়দরাবাদে এর আগের টেস্ট ইনিংসটিতেই করেছেন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৪ রান।
আর নিউজিল্যান্ডে যদি ২২ জন খেলোয়াড়কে বয়ে নিয়ে বেড়ানো যায়, এখানে শ্রীলঙ্কায় দ্বিতীয় টেস্ট পর্যন্ত ১৭ জনকে কেন নয়, সেটা একটা প্রশ্ন। তা ছাড়া টেস্ট সিরিজের পর কয়েকজনকে তো ফিরতেই হতো!
মাহমুদই দলের বিষণ্নতার হদিস দিলেন, ‘সবার মন একটু খারাপ। খারাপ তো হবেই, এত দিন ধরে সে দলের নিয়মিত সদস্য। ব্যাটিংয়ের অন্যতম ভরসা।’
মন খারাপ বলেই হয়তো দলের কাউকেই ওপরে ড্রেসিংরুমে যেতে দেখা যায়নি। অন্যরা মাঠে অনুশীলন করছেন, আর মাহমুদউল্লাহ সেখানে বসে আছেন একা! সাংবাদিকেরা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাইলেন, মাহমুদের যৌক্তিক প্রত্যাখ্যান, ‘ও কথা বলবে না। বোঝেনই তো মনটা স্বাভাবিকভাবেই খারাপ।’
মাহমুদ জানালেন, আগের সন্ধ্যায় টিম ম্যানেজমেন্টের নেওয়া সিদ্ধান্ত মাহমুদউল্লাহকে জানিয়ে দেওয়া হয় রাতে। দলের সিনিয়র দু-তিনজন ছাড়া বাকিরা বিষয়টি জেনেছেন মাঠে এসে।
আগামীকাল শততম টেস্টে নীল ডোরাকাটা ব্লেজার গায়ে উঠবে বাংলাদেশ টেস্ট স্কোয়াডের সদস্যদের গায়ে। শেষ পর্যন্ত থেকে যাওয়ায় মাহমুদউল্লাহর গায়েও তা উঠতে পারে। তবে উঠলেও খুশ