মুন্সিগঞ্জ, ১৪ মার্চ ২০২৫, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
বইয়ের নাম- মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর প্রাচীন বাংলার এক সমৃদ্ধ জনপদ
লেখক- রমজান মাহমুদ
প্রথম প্রকাশ- অমর একুশে বইমেলা ২০২৫
পৃষ্টা- ১৬৪
ধরণ- ইতিহাস
প্রকাশক- ঘাসফুল নদী প্রকাশনা
ইতিহাস পাঠে আগ্রহী, বিশেষ করে প্রাচীন বিক্রমপুর পরগণা সম্বন্ধে একেবারে সংক্ষেপে ধারণা নিতে আগ্রহী যে কেউ বইটি সংগ্রহে রাখতে পারেন। ৩০ মিনিট সময় নিয়ে প্রতিদিন ৪০ পৃষ্ঠা করে পরলে বইটি শেষ করতে ৩-৪ দিনের বেশি সময় লাগবে না।
পাঠ প্রতিক্রিয়া:
লেখক রমজান মাহমুদ মুন্সিগঞ্জ অঞ্চলে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে বেশ কয়েকবছর ধরে কাজ করছেন। পাশাপাশি তার পেশা ‘শিক্ষকতা’। বইটিতে ইতিহাসকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন তিনি। বিক্রমপুর নামটি শুনলেই যে খ্যাতি-সুনাম, যশ, প্রতিপত্তি, ব্যক্তিত্ব, অঞ্চল, স্থাপনা, ইতিহাস ও নদ-নদীর দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে তারই একটি চিন্তাশীল দলিলপত্র ‘মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর প্রাচীন বাংলার এক সমৃদ্ধ জনপদ’ বইটি।
বইয়ের একদম শুরুতেই ‘বিক্রমপুর: জীবনানন্দ দাশ ও দাশ পরিবার’ শিরোনামে রচনাটি চমকপ্রদ। লেখক এখানে লৌহজংয়ের ‘গাউপাড়া’ গ্রাম নিয়ে নির্মল বর্ণনা দিয়ে বইটি প্রারম্ভ করেছেন। গ্রামের প্রাচীন জনসংখ্যা, আদমশুমারীর তথ্য, ‘গাউপাড়া’ খাল, পাটের জন্য বিখ্যাত এখানকার হাট, স্টিমার ঘাট, খেজুর গাছ, উন্নত গুড়, নীল চাষ, মসলিল কাপড় উৎপাদন, লটাঘাস, কলরানীর পুকুর আর এসবের সাথে কবি জীবনানন্দ দাশের সংযোগ উঠে এসেছে রচনাটিতে। শেষে ফুটে উঠেছে জীবনানন্দের প্রতি লেখকের ভাবাবেশ ও আক্ষেপের ব্যকুলতা।
প্রাচীন বিক্রমপুরে এক সময় যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিলো নৌ পথ। ‘ঐতিহাসিক গৌরগঞ্জের খাল’ লেখাটিতে লেখক সেসব ইতিহাস তুলে ধরেছেন। গৌরগঞ্জের খাল দিয়ে একসময় ৪০টি লঞ্চ যাতায়াত করতো। খালটিকে বিক্রমপুরের সুইচগেইট বলা হতো। ৭টি খেয়াঘাট ছিলো। ১০টি সংযোগ খাল ছিলো। ১৯২৫ সালে ভারতের স্থপতি মহাত্মা গান্ধি এই খাল হয়ে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের মালখানগর খেলার মাঠে জনসভায় বক্তৃতা করেন। লেখক এসব ইতিহাস বর্ণনার পাশাপাশি সতর্কতা ও সাফল্যের সাথে প্রতিটি নদ-নদীর আর এস দাগ নাম্বার উল্লেখ করে গেছেন। আজ থেকে ১০০ বছর পরেও খালের চিহ্ন নির্দিষ্ট করতে এই তথ্য কাজে আসবে।
আড়িয়ল বিল, এশিয়ার প্রথম ইংলিশ চ্যানেল বিজয়ী সাতারু ব্রজেন দাস, প্রাচীন বিক্রমপুর বা মুন্সিগঞ্জ মহকুমায় শিক্ষা প্রসারে অগ্রগতি, সিনেমা হল, ডাকব্যবস্থা, গণিকাবৃত্তি, মুক্তিযুদ্ধে মুন্সিগঞ্জের ভূমিকা সুচারুভাবে বইটিতে লিপিবদ্ধ করেছেন লেখক রমজান মাহমুদ।
ভাষা বিশ্লেষণ:
পুরো বইটিতে লেখক সাবলীল ভাষা প্রয়োগ করেছেন। যে কোন বয়সী বা যে কোন শ্রেণীর পাঠকের কাছে যা পড়তে সহজ হবে। তবে বেশ কয়েকটি জায়গায় প্রাচীন শব্দের প্রয়োগও রয়েছে। ‘মালখানগরের বুদ্ধদেব বসু ও বসু পরিবার’ শিরোনামের রচনাটিতে লেখক মালখানগরের ইতিহাস তুলে ধরতে গিয়ে এর প্রতিষ্ঠাতা দেবীদাস বসুর মুমূর্ষু অবস্থাকে ‘গতায়ু’ শব্দ দ্বারা উপস্থাপন করেছেন। দুই-একটি প্রাচীন শব্দের প্রয়োগ ছাড়া পুরো বইটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এগিয়ে গেছে ট্রেনের গতিতে। বইটি পড়তে গিয়ে আবেগ আর দেশপ্রেমে ভেসে যাবেন পাঠক। কবি জয় গোস্বামির ভাষায় বলতে হয় ‘… করো আয়োজন, আনন্দ করে পড়ো।’
লেখক পরিচিতি:
লেখক, শিক্ষক ও ইতিহাস গবেষক রমজান মাহমুদ মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বয়রাগাদি এলাকার সন্তান। জন্ম ১৯৮৮ সালের ১৬ নভেম্বর। সুদীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বিক্রমপুরের বিভিন্ন স্থানে ইতিহাসের উপর গবেষণা চালিয়ে বইটি রচনা করেছেন। ১৯৯৯ সালে ইরানি দূতাবাস হতে প্রকাশিত কিশোর নিউজ লেটার ম্যাগাজিনে প্রথম ছড়া প্রকাশিত হয় তার। লিখেছেন ছোট গল্পও, সেসব গল্প ছাপা হয়েছে দেশের প্রথম সারির সব পত্রিকায়। প্রায় দুই দশক ধরে লিখছেন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায়। সাংবাদিকতাও করেছেন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে, বর্তমান পুরাদস্তর শিক্ষক। ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্বের খোঁজে দুই বাংলার ৮৭টি জেলার মধ্যে ঘুরেছেন ৮২ জেলায়।
মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর লেখক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক তিনি। দায়িত্ব পালন করছেন ২০১৪ থেকে অদ্যাবধি। মুন্সিগঞ্জ থেকে প্রকাশিত ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিষয়ক ত্রৈমাসিক পত্রিকা আজকের বিক্রমপুরের নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
১৬৪ পৃষ্ঠার ‘মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর প্রাচীন বাংলার এক সমৃদ্ধ জনপদ’ বইটির দাম রাখা হয়েছে ৪০০ টাকা। তবে বর্তমানে রকমারিতে ২৫% ডিসকাউন্ট দিয়ে বইটি পাওয়া যাচ্ছে ৩০০ টাকায়। রকমারি লিংক: ‘মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর প্রাচীন বাংলার এক সমৃদ্ধ জনপদ’