ফেনীর ছাগলনাইয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর নেতাকর্মীদের গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল। প্রকাশ্য সভায় তিনি ওই বক্তব্য দেওয়ায় নির্বাচনী এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তার বক্তব্যের অডিও রেকর্ড কয়েকজন প্রার্থী প্রশাসনের কাছে অভিযোগ আকারে দাখিল করেছেন। তবে এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার জন্য বারবার তার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। আগামী ৭ মে ওই উপজেলার ৫ ইউনিয়নে নির্বাচন হবে।
জানা গেছে, উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়নের মুহুরীগঞ্জ বন্ধন ক্লাবে আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী আজিজুল হক মানিকের (৩৬) পক্ষে গত বৃহস্পতিবার এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল বলেন, ‘ঘোপাল ইউনিয়নে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী থাকতে পারবে না। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ বা ছাত্রলীগের কোনো কর্মী বিদ্রোহীদের পক্ষে গেলে তাদের চামড়া থাকবে না। গুলি করে বিদ্রোহীদের ফেলে দেওয়া হবে। এসব ঘটনায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনা হলে কিংবা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশের নিকট অভিযোগ করা হলে পিঠের চামড়া তুলে নেওয়া হবে।’ তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘৭ তারিখের পরও আওয়ামী লীগ সরকার থাকবে, ফেনী-২ আসনের এমপি নিজাম হাজারী থাকবেন। কেউ তখন আর পার পাবে না।’ সভায় শত শত দলীয় কর্মী হাততালি দিয়ে তার বক্তব্য সমর্থন করেন।
উপজেলা চেয়ারম্যানের ওই বক্তব্যের পর ছাগলনাইয়ায় নির্বাচনের পরিবেশ ভীতিকর হয়ে পড়েছে বলে ঘোপাল ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আজিজুল হক (৫৫) মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন সভায় আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের পর এলাকায় এখন আর নির্বাচনী পরিবেশ নেই। তাকে ও তার সমর্থকদের পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। সাধারণ ভোটারের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে যে উৎসাহ বিরাজ করার কথা তা চুপসে গেছে। বিভিন্ন স্থানে তাদের কর্মীরা হামলার শিকার হচ্ছেন।
স্থানীয় লোকজন জানায়, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে সমিতির বাজার নামক স্থানে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মমিনুলের সমর্থক মিজানুর রহমান গুরুতর আহত হন। ঘটনার সময় ২ ঘণ্টাব্যাপী সমিতি বাজারে বোমা ও গুলিবর্ষণ করে তাণ্ডব চালায় সরকার সমর্থকরা। আহত মিজানুর রহমানকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপর ঘটনায় শুক্রবার নিজকুঞ্জরা স্কুলের পাশে সাকিব নামের এক স্কুলছাত্রকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে সরকার সমর্থকরা। এ দিকে প্রায় ৩০-৪০টি মোটরসাইকেল নিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে এলাকায় মহড়া দিয়ে চলেছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মী বাহিনী। এতে এলাকায় ভীতির সঞ্চার হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে হাট-বাজার ও দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ওই ইউনিয়নে মোট পাঁচজন চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন।
এ ব্যাপারে ছাগলনাইয়ার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিল্পী রানীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের বক্তব্যের অডিও রেকর্ড শুনেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছাগলনাইয়ায় ইউপি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মাইনুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেও অডিওতে রেকর্ড করা বক্তব্য শুনেছেন বলে জানান।
সূত্রঃ সমকাল