ট্রফি হাতে নিয়ে হাসি হাসি মুখ করে দাঁড়াবেন দুই অধিনায়ক। তারপর দুজন হাত মেলাবেন, এই হলো কোনো সিরিজের ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানের রীতি। কিন্তু কাল সোনারগাঁও হোটেলের অনুষ্ঠানে হাত মেলানোর কথাটা যেন ভুলে গেলেন এলটন চিগুম্বুরা! ট্রফিটাকে টেবিলে রেখে ক্যামেরার দিকেই মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকলেন। সংবিৎ ফেরালেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। হাতটা টেনে নিলেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়কের। ছবি উঠতে থাকল ক্লিক, ক্লিক।
চিগুম্বুরার সংবিৎ ফেরানোর সম্ভবত মাশরাফির ওটাই একমাত্র সুযোগ ছিল। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ থেকে শুরু সিরিজে যদি চিগুম্বুরা একবারও সংবিৎ হারান, মাশরাফি কোনোভাবেই চাইবেন না সেটা তিনি ফিরে পান। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়টা যখন অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে, তখন তাদের বিপক্ষে নতুন একটা সিরিজ মানে সেই অভ্যাসটাকেই টেনে নিয়ে যাওয়া। বাংলাদেশ তা নষ্ট করতে চাইবে না।
প্রকাশ্যে মাশরাফি যতই বলুন, ‘ব্যবধান নয়, আমার কাছে জয়ই শেষ কথা’, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নতুন কিছু করতে সেই জয়টা তাদের দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েই পেতে চাইবে বাংলাদেশ।
সমস্যা হলো গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে বাংলাদেশ দল যা করে রেখেছে, এর বেশি কিছু করাও কঠিন। টেস্ট সিরিজে ৩-০ এবং ওয়ানডে সিরিজে ৫-০। ৮-০-র সেই গৌরব বাংলাদেশের ক্রিকেটকেই নিয়ে গেছে নতুন বাঁকে।
অথচ বাংলাদেশের ক্রিকেটে ২০১৪ সালটা এসেছিল যেন মূর্তিমান এক অভিশাপের মতো। একের পর এক ব্যর্থতার তিরে বিদ্ধ দলটা ছটফট করছিল জয়ের তৃষ্ণায়। ‘হতাশা’, ‘আক্ষেপ’ শব্দগুলোই যেন হয়ে দাঁড়াচ্ছিল ক্রিকেটের প্রতিশব্দ। অক্টোবরে জিম্বাবুয়ে দল বাংলাদেশে আসার আগ পর্যন্ত এক ডজন ওয়ানডে খেলে সবগুলোতেই হার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাফল্য বলতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফগানিস্তান, নেপালকে হারানো আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি টেস্ট ড্র করা।
কে জানত সাফল্যখরার ওই বছরেরই শেষ দৃশ্যে অপেক্ষা করছিল বড় চমক! মাত্র এক বছরের মধ্যে সেটা ভুলে যাওয়ার কথা নয় কারও। আরেকটা ছবির কথাও নিশ্চয়ই মনে আছে। মুশফিক আর মাশরাফির হাতে দুটি ট্রফি। মাঝখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁদের উচ্ছ্বাসের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ল সারা দেশে। ২০১৫-এর নতুন ক্যালেন্ডারের পাতায় পাতায় সেই ছবি অঙ্কিত হতে থাকল নব নব রূপে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা; ঘরের মাঠে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ—বছরজুড়েই সাফল্যের ফোয়ারা ছুটেছে সব জায়গায়।
২০১৫ শেষ হতে আর মাস দুয়েক বাকি এবং ঘুরেফিরে আবারও সামনে জিম্বাবুয়ে। একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে জয় পাওয়ায় অবশ্য এবার কিছুটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে সিরিজ শুরু করতে পারছে চিগুম্বুরার দল। কাল সংবাদ সম্মেলনে সর্বশেষ সিরিজে আফগানিস্তানের কাছে হারের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার পরও অধিনায়কের মনোবল অটুট লাগল। বাংলাদেশের মতো জিম্বাবুয়ে জয়ের জন্য ক্ষুধার্ত বলে বরং প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজই পাচ্ছেন চিগুম্বুরা। কণ্ঠে ঝরল বাংলাদেশের চেয়ে ভালো খেলার প্রতিজ্ঞাও।
জিম্বাবুয়ের জন্য এটা হতে পারে প্রতিশোধের সিরিজ। আর বাংলাদেশের জন্য নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার সেতু। তবে সেটি শুধুই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজেদের পারফরম্যান্সে। আপাতত ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে নিজেদের আর ওপরে তুলতে পারছে না মাশরাফির দল, জিম্বাবুয়েকে ধবলধোলাই করলেও নয়। ৯৬ পয়েন্ট নিয়ে র্যাঙ্কিংয়ের সাত নম্বরে থাকা বাংলাদেশ ৩-০-তে সিরিজ জিতলেও সাতেই থাকবে, শুধু যোগ হবে ১ পয়েন্ট। ২-১-এ জিতলে উল্টো কমে যাবে ২ পয়েন্ট। অন্যদিকে ৪৬ পয়েন্ট নিয়ে বর্তমানে দশ নম্বরে থাকা জিম্বাবুয়ে ৩-০-তে সিরিজ জিতলে বাংলাদেশকে হারাতে হবে ৮ পয়েন্ট এবং ২-১-এ জিতলে ৫ পয়েন্ট। আর যদি সিরিজটা কোনোভাবে ১-১-এ ড্র হয়ে যায়, তাহলেও বাংলাদেশের পয়েন্ট কমে হবে ৯৩।
তার মানে অঙ্কের হিসাবে এই সিরিজে বাংলাদেশ দলের পাওয়ার তেমন কিছু নেই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়টাও তো এখন আর প্রাপ্তি নয়! তারপরও এবার চ্যালেঞ্জ আরও ভালো কিছু করার। সেই ভালোটা কী, আপাতত সাধারণ্যে তা নিয়ে শুধু আলোচনাই হতে পারে। ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি মিলে পাঁচ ম্যাচের এক সিরিজে ৮-০-এর চেয়ে ভালো কী হতে পারে, সেটা জানেন মাশরাফি-সাকিবরাই।