বাংলাদেশে গরু পাচারের প্রতিবাদে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ের কয়েকশো কসাই এখন হরতাল করছেন। কসাইদের সংগঠন অভিযোগ করছে, বাংলাদেশে গরু পাচার বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের অত্যধিক দাম দিয়ে গরু কিনতে হচ্ছে।
রাজ্য পুলিশ আর বি এস এফও স্বীকার করছে যে সম্প্রতি পাচারের পরিমান বেড়ে অনেকটাই বেড়ে গেছে। বি এস এফ দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত দিয়ে গরু পাচার প্রায় বন্ধ করে দেওয়ার পরে মেঘালয়ের নতুন রুটে গরু পাচার করছে চোরাচালানকারীরা।
রাজধানী শিলং সহ মেঘালয়ের প্রায় দেড়শো কসাই এই সপ্তাহ থেকে তাঁদের দোকানে গরুর মাংস বিক্রী বন্ধ করে দিয়েছেন। বাংলাদেশে গরু পাচার বন্ধের দাবীতে ৩রা ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত চলবে তাঁদের এই হরতাল।
রাজ্যের কসাইদের সংগঠন, খাসি-জয়ন্তিয়া বুচার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন অভিযোগ করছে বছর খানেক ধরে তাঁদের অত্যধিক বেশী দামে গরু কিনতে হচ্ছে।
মেঘালয়ে মূলত গরু আনা হয় আসামের রাজধানী গুয়াহাটির কাছে খানাপাড়া গরু বাজার থেকে। সেখানকার ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন, কারণ বাংলাদেশে চোরাচালানের জন্য পাচারকারীরা অনেক বেশী দামে গরু কিনে নিচ্ছে আর স্থানীয় কসাইদের কাছ থেকেও একই দাম নিচ্ছে গরু বাজারের ব্যবসায়ীরা।
কসাইদের সংগঠনের মুখপাত্র ওয়াংকেরলাং লামারে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, “গত একবছর ধরে বাংলাদেশে গরু পাচার খুব বেড়ে গেছে – তার জন্য গরুর দামও খুব বেশী হয়ে গেছে। দামের দিক দিয়ে পাচারকারীদের সঙ্গে আমরা পেরে উঠছি না। সরকারকে বার বার জানানো স্বত্ত্বেও কোনও দায়িত্ব নিচ্ছে না তারা। বাধ্য হয়েই আমাদের গরুর মাংস বিক্রী বন্ধ করে হরতালের পথে যেতে হয়েছে।“
মেঘালয়ের প্রায় ৭০% মানুষ ক্রীশ্চান এবং এখানে গরু আর শুয়োরের মাংস খাওয়ার চল খুবই বেশী।
রাজ্যের কসাইরা বলছেন, আগে আসাম-মেঘালয়ের সীমান্ত এলাকা খানাপাড়ার যে বাজার থেকে গরু কিনতেন তাঁরা, সেখানে এক জোড়া গরুর দাম ছিল গড়ে চল্লিশ হাজার টাকা, কিন্তু এখন সেটাই কিনতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৫৭ থেকে ৫৮ হাজার টাকা।
“এর ওপরে পরিবহন মালিকরাও পাচারকারীদের কাছ থেকে যে বাড়তি টাকা নিচ্ছেন, সেই একই ভাড়া চাওয়া হচ্ছে স্থানীয় কসাইদের কাছ থেকেও,” বলছিলেন মি. লেমারে।
বি এস এফের মেঘালয় সীমান্ত অঞ্চলের আধিকারিকরা বলছেন গরু পাচারের যে পুরনো রুট ছিল দক্ষিণ বঙ্গ সীমান্তে সেখানে খুবই কড়াকড়ি করা হচ্ছে সম্প্রতি। ওই পথে গরু পাচার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
তাই পাচারকারীরা বছরখানেক ধরে মেঘালয় বা আসামের ধুবড়ির রুট দিয়ে চালান পাঠাচ্ছে বাংলাদেশে। এই রুটগুলো একেবারে নতুন না, বহু আগে এই রুটে গরু পাচার হতো। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গ বন্ধ হওয়ার পরে আবার সেই পুরণো রুট চালু করেছে পাচারকারীরা।
এক বছরে কতটা বেড়েছে বাংলাদেশে গরু পাচার?
মি. ওয়াংকেরলাং লামারে বলছিলেন কথায়, “একবছর আগে হয়তো দিনে এক বা দুই ট্রাক গরু বাংলাদেশে পাচার হত। তবে এখন সেটাই বেড়ে দাঁড়িয়েছে দিনে ১০ থেকে ২০ ট্রাক। একেকটা ট্রাকে গোটা কুড়ি গরু ধরে। এর থেকেই বোঝা যাবে যে এই সীমান্ত দিয়ে গরু পাচার একবছরেই কতটা বেড়ে গেছে।“
পুলিশ অতি সম্প্রতি কিছু গরু বোঝাই ট্রাক আর কয়েকজন পাচারকারীকে আটক করেছে। কিন্তু এই ব্যবস্থা যথেষ্ট না। বাংলাদেশে পাচার পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে – এটাই দাবী কসাইদের।
মেঘালয় পুলিশের মহানির্দেশক রাজীব মেহতা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, “সীমান্তের কাছাকাছি যাতে পাচারের উদ্দেশ্যে কেউ গরু না নিয়ে যেতে পারে, তার জন্য বেশ কিছু ব্যবস্থা আমরা নিতে শুরু করেছি। কোথায় কী উদ্দেশে গরু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সন্দেহ হলেই আটক করা হচ্ছে।“
তবে মি. মেহতা বলছিলেন যে গরু পরিবহনের ব্যাপারে একটা জটিলতা আছে, কারণ ভারতের অভ্যন্তরে গরু পরিবহন বেআইনী নয়। তাই একেবারে সীমান্তের কাছে গরুর চালান পৌঁছলে তবেই তা আটকানো সম্ভব। আবার সেটাও রাজ্য পুলিশ করতে পারে না, সেটার দায়িত্ব বি এস এফের।
গরু পাচার বন্ধ করার জন্য রাজ্য পুলিশ কর্তারা বি এস এফের সঙ্গে কয়েকদিন আগেই আলোচনা করেছেন যে কীভাবে সীমান্তে পাচারের উদ্দেশে গরু নিয়ে যাওয়া ঠেকানো যায়।