চার দশক আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আল বদর নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও একাত্তরের ‘চট্টগ্রামের ত্রাস’ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
যুদ্ধকালে চট্টগ্রাম অঞ্চলে নজিরবিহীন নিষ্ঠুরতার জন্য ‘সাকা কোনো উদারতা পাওয়ার যোগ্য নয়’ বলে মন্তব্য করেছিল উচ্চ আদালত। আগামী মার্চে এই যুদ্ধাপরাধীর বয়স ৬৭ বছর হওয়ার কথা ছিল।
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের অন্যতম হোতা ৬৮ বছর বয়সী মুজাহিদ সম্পর্কে আপিল বিভাগ বলেছিল, এ ধরনের নিষ্ঠুরতার প্রমাণ পাওয়ার পর অপরাধী সর্বোচ্চ দণ্ড না পেলে তা হবে ন্যায়বিচারের পরিহাস।
একাত্তরে নির্বিচারে অসংখ্য মানুষের প্রাণ সংহার করলেও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মরিয়া হয়ে প্রাণ বাঁচাতে চেয়েছিলেন তারা দুইজন। সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর রোববার প্রথম প্রহরে তাদের ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো হয়।
পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে দুই যুদ্ধাপরাধীকে ফাঁসিতে ঝোলানোর কথা জানান।
এরপর জ্যেষ্ঠ জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের বলেন, “রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে একসঙ্গে দুইজনের ফাঁসি কার্যকরে প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে।”
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পুরো প্রক্রিয়া রাত ১টার মধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান।
আর এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তৃতীয় ও চতুর্থ ব্যক্তির ফাঁসি কার্যকর হয়।
সাকা, মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন গত বুধবার সর্বোচ্চ আদালতে খারিজ হয়; পরদিন রায় যায় কারাগারে। এরপর ফাঁসিকাষ্ঠ এড়াতে তাদের সামনে খোলা ছিল শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়া।
তারা যে সেই আবেদন করেছেন তা শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানান।
তবে পরিবারের সদস্যরা এরপরও ক্ষমা প্রার্থনা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। দুই পরিবারের পক্ষ থেকেই বলা হয়, বন্দিদের সঙ্গে কথা বলার আগে তারা বিষয়টি বিশ্বাস করতে পারছেন না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদেরের পরিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিচারকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ আখ্যায়িত করে। এর প্রতিবিধান চেয়ে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন নিয়ে গেলেও তা গ্রহণ করা হয়নি।
অন্যদিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদের পরিবার ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার বিচারের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর স্থগিত রাখার আবেদন জানায়।
বিচারের সব প্রক্রিয়া শেষে এমন আবেদন ‘অযৌক্তিক’ বলে উড়িয়ে দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
যুদ্ধাপরাধী সাবেক এই দুই মন্ত্রী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করার পর বিকাল থেকে কারাগার এলাকার নিরাপত্তা কয়েক গুণ বাড়ানো হয়।
রাত ৮টার কিছুক্ষণ আগে কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল ফজলুল কবির ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢোকার পরই তৎপরতা বেড়ে যায়।
এরপর কারা কর্তৃপক্ষ সালাউদ্দিন কাদের ও মুজাহিদের পরিবারকে দেখা করতে ডেকে পাঠালে কারা অভ্যন্তরের দৃশ্যপট পাল্টে যায়।