প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার ১১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাংলা পরীক্ষা স্থগিত করেছে জেলা প্রশাসন।
আজ মঙ্গলবার এই পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।
সকাল ৯টার দিকে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার সব স্কুলের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
পরীক্ষার নতুন তারিখ এখনো ঘোষণা হয়নি।
জানা যায়, পরীক্ষার একদিন আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বাংলা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক পরীক্ষা স্থগিতের এই নির্দেশ দেন।
ইদ্রাকপুর ১ নম্বর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘আমরা আগে জানতাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতো।
এখন প্রাথমিক শিক্ষার প্রশ্নফাঁস হয়েছে, যা ন্যক্কারজনক ঘটনা। এর দায় সব প্রাইমারি শিক্ষকদের ওপর পড়ে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা জরুরি মনে করি।’
বকচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন লিটন বলেন, ‘এটা নিন্দনীয় কাজ। যারা করেছে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা জরুরি। যদি কোনো শিক্ষকও জড়িত থাকে তাহলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা উচিত।’
পাঁচঘরিয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. কামাল হোসেন বলেন, সকালে সন্তান পরীক্ষা দিতে গেলে, পরীক্ষা না দিয়ে বাসায় ফিরে আসে। পরে জানতে পারি প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। যারা ছোট শিক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন।
তৃতীয় ও দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী অনন্যা, বৃথিকা, নবীন, সাইদুল পরীক্ষা না দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সাংবাদিকদের জানায়, প্রথম দিনের বাংলা পরীক্ষা হবে না। এই পরীক্ষা কবে হবে জানি না। ম্যাডাম আজ বাড়িতে চলে যেতে বলছে।
জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা জানান, প্রশ্ন ফাঁস হওয়ায় আজকের পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা গ্রহণের জন্য ‘রিশিডিউল’ করা হয়েছে। আর কে বা কারা প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত তা খতিয়ে দেখা হবে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নিয়ে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পঞ্চানন বালা জানান, কেউ ফাঁস করা প্রশ্ন জেলা প্রশাসকের ই-মেইলে পাঠিয়ে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করেন। তাই জেলা প্রশাসকের নির্দেশে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপারে নিজের দায় নেই দাবি করে পঞ্চানন বালা বলেন, ‘সদর উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তারা প্রশ্নপত্র প্রণয়নের কমিটিতে ছিলেন। বিষয়টি তাঁরাই দেখেন, আমরা দেখি না।‘
অন্যদিকে, সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাসলিমা বেগমও নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘আমি শতভাগ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি এ ব্যাপারে আমার দায় নেই।’
এদিকে, প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি তদন্তের জন্য সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল মতিন, আসাদুজ্জামান ও সানজিদা আক্তারকে নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি করে দিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাসলিমা বেগম।
প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটিতে যাঁরা ছিলেন প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে তাঁদের দিয়েই কমিটি গঠন করে তাঁদের দায়মুক্তির ব্যবস্থা করা হলো কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তাসলিমা বেগম বলেন, এ ছাড়া আর কিছু করার নেই।