২৪শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
শুক্রবার | রাত ১০:১৯
পদ্মার ভাঙনে ঝুঁকিতে ২০০ বছরের পুরোনো দিঘিরপাড় বাজার
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১২ জুলাই ২০২৪, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার ২০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী দিঘিরপাড় বাজারসহ পদ্মা নদী তীরবর্তী উপজেলার অন্তত ৩ টি এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাজারের সাতটি দোকানের সম্পূর্ণ এবং ছয়টি দোকানের আংশিক বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে নদী তীরবর্তী শতাধিক ঘর-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ভোর সকাল থেকে আকস্মিক ভাঙন শুরু হলে দোকানঘর সরিয়ে নিয়েছেন দিঘীরপাড় বাজারের পূর্ব ও দক্ষিণ পাশের একাধিক ব্যবসায়ী। এদিকে, এলাকাটি পদ্মার বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হলেও কাজের ধীরগতি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। আপদকালীন জিওব্যাগ ফেলার কথা জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, পানি কমলে পুরোদমে কাজ শুরুর কথা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পদ্মা নদী তীরবর্তী দিঘিরপাড় ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী বাজারটি ছাড়াও মূলচর, সরিষাবন ও কান্দারবাড়ী এলাকার শতাধিক স্থাপনা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। স্রোতের তোরে বৃহস্পতিবার সকালে ভেঙে গেছে বাজারের দক্ষিণপাশের কামারপট্টির গৌতম মন্ডল, অনিল মন্ডল, দিলীপ মন্ডল, কালু মন্ডল, সুনীল মন্ডল ও আলমেস বেপারির দোকানঘর। বর্তমানে ওই ব্যবসায়ীরা বেকার হয়ে পড়েছেন। অতি ঝুঁকিতে রয়েছে পাশাপাশি থাকা আরও ৬ টি কামারঘরসহ ২০ টি দোকানঘর।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা জানান, ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে টঙ্গিবাড়ীর দিঘিরপাড় ইউনিয়নে ভাঙন চলছে। ভাঙনে দক্ষিণ মূলচর, মিতারা, হাইয়ারপারের কয়েক শ বাড়িঘর, মসজিদ, আবাদি জমি বিলীন হয়েছে। দীঘিরপাড় বাজারটিরও অন্তত ২০০ মিটার বিলীন হয়েছে। তিন বছর আগে ভাঙন তীব্র ছিল। সে সময় বাজারের পাশ দিয়ে জিও ব্যাগও ফেলা হয়। এরপর ভাঙন বন্ধ করতে ব্লক দিয়ে স্থায়ী বেড়িবাঁধের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। চলতি বছর কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো দৃশ্যমান কোন কাজ শুরুই হয়নি।

বিকাল ৫ টার দিকে বাজার থেকে নিজের দুইটি দোকানঘর সরিয়ে নিচ্ছিলেন আলমেস বেপারি। এসময় তিনি বলেন, ‘১০-১২ বছর আগে দোকানঘর দুইটি তুলেছিলাম। পাট-মরিচের ব্যবসা করে বছরে আমার ১০-১২ লাখ টাকা আয় হয়। দোকানের আয় দিয়েই সংসার চলে। দোকানগুলো বন্ধ হয়ে গেলে পথে বসে যাবো৷ আশায় ছিলাম স্থায়ী বেরি বাঁধ হলে দোকান বেঁচে যাবে। কিন্তু তারা কাজই করছে না।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, দীর্ঘ বছর ধরে ভাঙন প্রবণ এই এলাকাটিসহ লৌহজং-টংগিবাড়ী উপজেলার সর্বমোট ৯ দশমিক ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ২০২২ সালের মে মাসে ৪৪৬ কোটি টাকা ব্যায়ে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পৃথক এলাকায় কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এর মধ্যে টংগিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড় অংশের কাজ করছে সিগমা ইঞ্জিনিয়ারিং।

এ বছরের সেপ্টেম্বরে এই অংশের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও চলতি জুলাই পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি মাত্র ৪০ শতাংশ। ইতিমধ্যে কাজের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

স্থানীয় বাসিন্দা এনিল সৈয়াল বলেন, ‘নদীপাড়ের কয়েকটি দোকান ভাঙার পর এখন জিওব্যাগ ফেলতে আসবে তারা। বর্ষা শুরুর আগেই তাদের জানানো হয়েছিলো। তখন ব্যবস্থা নিলে প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা পেত।’

দীর্ঘদিনেও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে দিঘিরপাড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও টংগিবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম হালদার বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারনে কাজের ধীরগতি। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে ২০০ বছরের পুরোনো দিঘিরপাড় বাজারের শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান৷ শুধু জিওব্যাগ ফেলে কাজ শেষ করলে হবে না। দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিগমার ব্যবস্থাপক মোশাওয়ার হোসেন বলেন, ‘স্থায়ী বাঁধ প্রকল্পের ব্লক নির্মাণের জন্য জমি না পাওয়ায় বিলম্ব হয়েছে৷ বর্তমানে জমি ভাড়া নিয়ে ব্লক নির্মাণের কাজ চলছে। তবে নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ হবে না। এজন্য মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড মুন্সিগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, ‘স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের ব্লক তৈরি শেষ না হওয়ায় কাজ এগোচ্ছে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগাদা দেয়া হচ্ছে, তারা সময় বাড়ানোর জন্য লিখিত আবেদন জমা দিয়েছে। প্রয়োজনবোধে সময় বাড়ানো হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘দিঘিরপাড়ে যে কয়টি এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে সেখানে কাল থেকেই জরুরি ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলা হবে। পানি কমলে পুরোদমে ব্লক ফেলা হবে।’

error: দুঃখিত!