১৩ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শুক্রবার | ভোর ৫:০৩
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
নদীর সাথে লড়াই থামছেনা, পদ্মার ভাঙন রোধে ৫৮৬ কোটি টাকার প্রকল্প আসছে
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ ২৭ অক্টোবর, ২০১৯, জসীম উদ্দীন দেওয়ান (আমার বিক্রমপুর)

পদ্মায় থাবায় ২৯ বছর ধরে ভেঙ্গে চলছে মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার হাজার হাজার ঘরবাড়ি, একরের পর একর ফসলী জমি, স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, হাট-বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। 

বেহিসেবি এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হারিয়ে অনেকেই এখন দিশেহারা।

পদ্মার টানে বদলে দিয়েছে মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার দিঘীরপাড় থেকে পাঁচগাঁও পর্যন্ত চারটি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের জীবন।

সম্পদশালী অনেকেই আজ সম্পদহীন হয়ে নি:শ্ব। আশ্রয়হীন অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীর পাড়ে ঝোপটি ঘরে কাটাচ্ছে নির্ঘুম রাত।

টংগিবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জগলুল হালদার ভুতু বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে এই উপজেলা ভাঙ্গতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে এই উপজেলার দিঘীরপাড়, কামারখাড়া, হাসাইল ও পাঁচগাঁও এই চারটি ইউনিয়নের আংশিক ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে বলে জানান জগলুল হালদার।

রাক্ষুসী পদ্মার ভয়াল থাবায় মাইলের পর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে পাল্টে দিয়েছে এই উপজেলার মানচিত্র। প্রতি বছরের মতো বর্ষায় এবারও ভেঙ্গেছে এসব ইউনিয়নের তীরবর্তী এলাকা। ত

বে ফারাক্কার স্লুইচ গেট খুলে দেওয়ায় কারণে, বর্ষা শেষে শরৎ কালে আকস্মিক নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় এবং নদীতে প্রবল স্রোতের গতি থাকায় চলতি মাসে প্রথম দিক থেকে ভাঙ্গন শুরু হয়ে এখনো ভাঙ্গছে দিঘীরপাড় ও কামারখাড়া এলাকা।

নানা এলাকার মতো দিঘীরপাড় ইউনিয়নের হাইয়ারপাড় গ্রামের, নদীর পাড় গিয়ে দেখা মিলে ৬৫ বছরের বৃদ্ধ ইউসুফ খাঁনের সাথে।

পদ্মা ও তাঁর জীবনের গল্প বলতে যেয়ে তিনি জানান, তাঁর জীবন দশায় ১২বার ভাঙ্গনের কবলে পড়তে হয়েছে তাঁকে। ঘর ভেঙ্গেছে, সে ঘর তোলা হয়েছে। ফের ঘর ভাঙ্গলে, সে ঘর তুলতে কতোটা খরকুটা পোড়াতে হয়েছে, তা কেবল তারাই জানে। যাদের এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে। তবুও বার বার নদীর সাথে লড়াই করে বাঁচতে হয়েছে তাঁকে। একই গ্রামের ৩৫ বছরের কৃষক বিল্লাল। দুই বার পদ্মার কাছে পরাস্ত হয়ে বাড়ি ঘর হারিয়েছে। হারিয়েছে নিজের বাপ দাদার রেখে যাওয়া সামান্য জমি। যে জমির উপর ভর করে জীবিকা নির্বাহ হতো তাঁর। সে সব আজ সর্বনাশী পদ্মার তলে হারিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে এতাটুকু সুখে থাকার স্বপ্নটাও।

বিল্লাল বলেন, কৃষি কাম কইরা জীবন চালাইতাম। এহন জমি পামু কই ? সব খাইছে এই রাক্ষুসী পদ্মায়। এহনো ওর পেট ভরে নাই , ও আরো খাইবো। খাইতে খাইতে বেবাক শেষ কইরা, তয় শান্ত হইবো। কোন হানে থাকবার জাগা পাই নাই , দেহেন পাড়ে ঐ ঘর তুলছি। এহন আর কিছু বাকি নাই, কেবল নিজের আর পরিবারের জীবন, এইটাও কোন দিন ঘুমের তালে লইয়া যাইবো।

দেখা মিলে দিন মজুরে হাফিজুরের স্ত্রী ফাতেমা বেগম এবং দেলোয়ার শেখের স্ত্রী পিয়ারা বেগমের সাথে। তাদের জীবনের গল্পের ধরনও প্রায় একই রকমের। সব হারিয়ে নদীর পাড়ে অন্যের জায়গায় বসবাস করছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। নিজের জায়গা জমি না থাকলেও, এখানেই থাকতে চায় তাঁরা। এখানেই জড়িয়ে আছে তাদের জীবনের অনেক স্মৃতি। তাই সরকারের কাছে জোড় দাবি তাদের। সরকার যাতে এই অঞ্চলের বাকি সম্পদ রক্ষায় স্থায়ী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

টংগিবাড়ীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকা রক্ষায় সরকার কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে কি না জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো: মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, এই এলাকার ভাঙ্গন রোধে কোথাও কোথাও তারা জিও ব্যাগ ফেলে কিছুটা ভাঙ্গন প্রতিরোধ করতে পারলেও এবার স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করতে যাচ্ছেন সরকার। আর খুব শীঘ্রই কাজ হাতে নিতে ৫৮৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়ে যাবে বলেও জানান ডিসি।

error: দুঃখিত!