মুন্সিগঞ্জ, ৪ আগস্ট ২০২৪, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জ শহরের সুপারমার্কেট চত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে আন্দোলনকারী ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের দফায় দফায় হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ যাওয়া ৩ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে, নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। এসময় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন উভয়পক্ষের অন্তত ৯৫ জন। এর মধ্যে ২৫ জনের অবস্থা গুরুতর।
রোববার সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রায় ৮ ঘন্টা ধরে চলে এই অবস্থা। এসময় পুরোপুরি বন্ধ থাকে শহরের যান চলাচল। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় শহরের সুপারমার্কেট চত্বর।
আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ৫ টি মোটর বাইক। এছাড়া সড়কের উপর থাকা ১ টি কাভার্ডভ্যান ও ১ টি পিকআপ ভ্যানেও আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা। বিকালে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ভাঙচুর করে জেলা বিএনপির কার্যালয়সহ অর্ধশত দোকানপাট। এসময় তারা বিএনপি কার্যালয় থেকে বিভিন্ন সরঞ্জাম বের করে সড়কে আগুন ধরিয়ে দেয়।
সকালে আন্দোলনকারীদের উপর আওয়ামী লীগের হামলার ঘটনার ভিডিও ধারণ করার সময় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের বাঁধার মুখে পড়েন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। এসময় স্ট্যাম্প ও কাঠের ডাসা দিয়ে পিটুনির শিকার হন দুই সাংবাদিক।
অপরদিকে আন্দোলনে এসে আহত হওয়া বেশ কয়েকজনকে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার সময় শহরের অদুরে পেট্টোলপাম্প এলাকায় অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর ও আহতদের নামিয়ে পিটায় আওয়ামী লীগ- ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতরা হলেন- রিয়াজুল ফরাজী (৩৫), মো. সজল (৩০) ও ডিপজল (১৯)। নিহতদের মধ্যে রিয়াজুল মৃত কাজী মতিনের ছেলে, সজল আলী আকবরের ছেলে ও ডিপজল সিরাজ সরদারের ছেলে। এরা সকলেই শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা।
মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল ও সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
আহত সাংবাদিকরা হলেন, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির জেলা প্রতিনিধি মইনউদ্দিন সুমন ও দৈনিক সবুজ নিশান পত্রিকার মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি মো. ফরহাদ হোসেন। এর মধ্যে ফরহাদের হাত ভেঙে গেছে।
মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল রিয়াজুল ও ডিপজলের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘এদের শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে।’ অপর নিহত সজলের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার একেএম তাইফুল হক বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ সজলকে মৃত অবস্থায় এখানে আনা হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।’
জানা গেছে, সকাল ১০ টার দিকে শহরের সুপারমার্কেট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে আন্দোলনকারীরা জড়ো হলে সেখানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হামলা করে। এসময় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বেধম মারধর করে তারা। এতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। খবর পেয়ে শহরের আশপাশের এলাকা থেকে আন্দোলনকারীরা পুনরায় সুপার মার্কেট এলাকায় জড়ো হলে তাদের লক্ষ্য করে শতাধিক গুলি-ককটেল নিক্ষেপ করে আওয়ামী লীগ- ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে আন্দোলনকারীরা শহরের সুপার মার্কেট, পিটিআই মোড়, কৃষি ব্যাংক মোড় ও মানিকপুর সড়কে অবস্থান নেয়। এসময় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো শহর। প্রায় ৮ ঘন্টাব্যাপী থেমে থেমে চলতে থাকে আন্দোলনকারী ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে কয়েক দফায় কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ।
মুন্সিগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. আসলাম খান বলেন, ‘হতাহতের বিষয়ে আমাদের কাছে এখনো তথ্য নেই। পুলিশ দুই পক্ষকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’