১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
বৃহস্পতিবার | রাত ৪:১৪
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
তবুও উচ্ছ্বাস, বাড়ি ফেরার আনন্দ
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ৩০ এপ্রিল, ২০২২, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)

গতকাল শুক্রবার সেহরির পরপর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামি লক্ষাধিক মানুষ রাজধানীর চিরচেনা কর্মব্যস্ততা ছেড়ে ভিড় করেন মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাটে। উদ্দেশ্যে- ঈদে গ্রামের বাড়ি যাবেন।

নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত যে যেভাবে পারেন এসেছেন ঘাট এলাকায়। কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে, কেউ মোটরসাইকেল নিয়ে, আবার অনেকে এসেছেন গণপরিবহনে।

ঈদের দীর্ঘ ছুটি আর করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধ না থাকায় অনেকটা বাধাহীনভাবে মানুষ ছুটেছে বাড়ির পথে। পদ্মা পারাপারে ঘাটে খানিকটা অপেক্ষা আর তীব্র গরম থাকলেও তা ছিলো ঈদের পরিবেশ অনুযায়ী স্বাভাবিক।

দীর্ঘক্ষণ ফেরির অপেক্ষায় থাকার পর ফেরিতে উঠতেই মানুষের চোখেমুখে ছিলো উচ্ছাস আর সীমাহীন আনন্দ।

রাজধানীর কাকরাইল এর বাসিন্দা ইউসুফ হাসান পরিবার নিয়ে সকাল ৯টা’র দিকে ব্যক্তিগত গাড়িতে অপেক্ষা করছিলেন শিমুলিয়া ৩ নং ফেরিঘাটের সামনে। যাবেন যশোরে গ্রামের বাড়িতে। এসময় কথা হয় তার সঙ্গে।

তিনি বলছিলেন, ‘ঈদের সময় ঘাটে বাড়তি চাপ থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। চাপ পরবে জেনেই সকালে ফেরি পার হতে এসেছি। ৩ ঘন্টা ধরে ফেরিতে উঠার জন্য অপেক্ষা করছি। রোদে সাথে থাকা শিশুর কষ্ট হচ্ছে। তারপরেও পরিবারের সাথে ঈদ করতে যাচ্ছি সেটা ভেবে এই সামান্য কষ্ট কিছুই মনে হচ্ছে না।

শিমুলিয়া ২ নং ফেরিঘাট এলাকায় কথা হয় ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ সরকারের সাথে। মোটরসাইকেল নিয়ে তিনি যাচ্ছেন গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে।

আসিফ উচ্ছাস করেই বলছিলেন, ‘৭ মাস পরে ঈদে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি। এই ঘাটটা পার হলেই বাড়িতে চলে যাবো। সামান্য অপেক্ষা কোন ব্যাপারই না।’

গতকাল সারাদিন শিমুলিয়া লঞ্চঘাট ও স্পিডবোট ঘাট এলাকায় ঘুরেও দেখা গেছে হাজার হাজার মানুষের ঘরে ফেরার চিত্র। লঞ্চগুলো নিয়মিতভাবে ছেড়ে যাওয়ায় সেখানে কোন দুর্ভোগের চিত্র চোখে পড়েনি। প্রতিটি লঞ্চেই যাত্রী ছিলো কানায় কানায় পরিপূর্ণ। যাত্রীদের অভিযোগ ছিলো ভাড়া বেশি আদায়ের। অন্যদিকে স্পিডবোট ঘাটে সারাদিনই ছিলো যাত্রীদের চাপ। এসময় যাত্রী উঠানামায় অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খল পরিবেশ থাকায় কিছুটা হিমশিম খেতে হয়েছে যাত্রী ও স্পিডবোট চালকদের। এ কারণে যাত্রীদের কিছু সময় ঘাটে অপেক্ষা করতে হয়েছে। বেশ কয়েকটি স্পিডবোট ছেড়ে গেছে যাত্রীদের লাইফজ্যাকেট নিশ্চিত না করেই।

গতকাল ভোর থেকেই শিমুলিয়া ১, ২ ও ৩ নং ফেরিঘাট এলাকায় পাঁচ সহস্রাধিক মোটরসাইকেল সহ ব্যক্তিগত গাড়ি, পিকআপভ্যান ও অ্যাম্বুলেন্স সহ সহস্রাধিক যানবাহন ভিড় করে। ঘাটের পার্কিং ইয়ার্ড অপেক্ষমাণ গাড়ির সারিতে ভরে যায়। অন্যান্যদিন ঘাট পারাপারে ব্যক্তিগত গাড়ির পক্ষ থেকে সিরিয়ালে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলেও গতকাল এই অভিযোগ ছিলো কম। সকালের দিকে ঘাট এলাকার আশেপাশে অন্তত ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোর থেকে অপেক্ষমাণ এসব যানবাহন সকাল ১১ টা’র মধ্যে ফেরিতে পার করা হয়। এসময় ঘাট অভিমুখে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের ফলে ও ঘাট এলাকায় শৃঙ্খলা না থাকায় ফেরি আনলোডিংয়ে সময়ক্ষেপণ হয়।

দুপুরের দিকে ঘাট এলাকা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনি। এরপর ঘাট অভিমুখ থেকে সকল যানবাহন সরিয়ে দেয়া হয়। এসময় ঘাটের দৃশ্যপট পুরোপুরি পাল্টে যায়। দুপুরের দিকে মোটরসাইকেলের চাপ কিছুটা কমলেও দুপুরের পর আবারও মোটরসাইকেল আরোহীদের ভিড় করতে দেখা যায় শিমুলিয়া ঘাটে। একইসাথে ব্যক্তিগত গাড়ির চাপও পরে ঘাটে।

ঘাট এলাকায় বিশৃঙ্খলা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শিমুলিয়াঘাটমুখি গণপরিবহনগুলো ঘাটের অদূরে মাওয়া ভাঙ্গা এলাকায় আটকে দেয়। ফলে যাত্রীদের পায়ে হেটে ঘাটে আসতে হয়েছে। দুপুর ১ টা’র মধ্যেই ঘাটে অপেক্ষমাণ থাকা অন্তত পাঁচ সহস্রাধিক মোটরসাইকেল ঘাট পার হয়। চাপ কমে যায় ব্যক্তিগত গাড়িরও। বিকালে লঞ্চ ও স্পিডবোট ঘাটে যাত্রীদের চাপ দেখা যায়। সন্ধ্যা ও রাতে ঘাটের পরিস্থিতি ছিলো স্বাভাবিক।

বিআইডব্লিউটিএর শিমুলিয়া নদী বন্দরের নৌ নিরাপত্তা বিভাগের সহকারি পরিচালক শাহাদাত হোসেন জানান, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া-মাঝিকান্দি রুটে আরও পাঁচটি লঞ্চ ও তিনটি স্পিডবোট বেড়েছে। দুই রুটে ৮৫ টি লঞ্চ ও ১৫৫ স্পিডবোট সচল রয়েছে।

বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) এস এস আশিকুজ্জামান জানান, গতকাল ১০টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হয়েছে। রাতে ৭টি ফেরি চলাচল করছে। ঘাটে বাড়তি চাপ পরলেও আমার তা সুশৃঙ্খলভাবে সামাল দিয়েছি।

error: দুঃখিত!