মুন্সিগঞ্জ, ১৭ জুলাই, ২০২০, গজারিয়া প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
একদিকে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের ভয় অপরদিকে নদী ভাঙ্গণে আতঙ্ক। এভাবেই দিন পার করছেন মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার মেঘনা নদীর তীরে বসবাসরত নয়ানগর গ্রামের হাজারো মানুষ।
নদী ভাঙ্গণ কবলিত মানুষের চোখে মুখে এখন শুধুই হতাশা আর আর্তনাদের ছাপ। মেঘনা নদী প্রতিনিয়ত ভাঙ্গণের ফলে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন মেঘনার তীরবর্তী নয়ানগর গ্রামের প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গজারিয়া ইউনিয়নের নয়ানগর গ্রামের মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকার প্রায় ৫শ মিটার এলাকা জুড়ে শুরু হয়েছে ভাঙ্গণ। এরই মধ্যে নয়ানগর পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দা আব্দুল মিয়ার ও গাজীর বাড়ির অধিকাংশ স্থান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গণ থেকে বাঁচতে বসত ঘরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহ সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন নদী তীরবর্তী মানুষগুলো। একই অবস্থা আশপাশের বাসিন্দাদের।
ভাঙ্গণ কবলিত এলাকাবাসী জানান, পানির উচ্চতা কম থাকলেও প্রবল বাতাসের সঙ্গে বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে। এতে ভেঙে যাচ্ছে নদীর তীরবর্তী এলাকাসহ স্থাপনা। গত কয়েক দিনের ক্রমাগত ঢেউ আতংক সৃষ্টি করেছে মেঘনা তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের মনে। যে কোনও সময় ভয়াল রূপ ধারণ করে তীরবর্তী এলাকায় ভাঙ্গণে প্রবল আকার ধারণ করতে পারে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতি বছর ভাঙ্গণের সময় আশ্বস্ত করা হলেও কার্যত দীর্ঘদিনের এ দাবি পূরণ হয়নি মেঘনা পাড়ের ভাঙ্গণ কবলিত মানুষের। নদীর অনবরত ভাঙ্গণের শিকার হওয়া পরিবারের লোকজনের মধ্যে চলছে শুধু কান্না আর কান্না। বসত ভিটাটিও শেষ পর্যন্ত নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় কাঁদতে কাঁদতে অনেকে হয়েছেন বাকরুদ্ধ। তাদের প্রিয় জন্মভূমি নয়ানগর গ্রামকে বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতে সরকারের উচ্চ মহলের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন স্থানীয়রা।
গজারিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবুতালেব ভূঁইয়া জানান, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। প্রতি বছরই কিছু না কিছু অংশে ভাঙ্গণের সৃষ্টি হয়ে নদীগর্ভে চলে যায় অনেক বাড়িঘর। তবে এবার পানি বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীতে প্রবল স্রোত ও ঢেউ বেশি থাকায় পুরো এলাকা জুড়ে ভাঙ্গণ দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গণ রোধে পাড় বাঁধাইয়ের জন্য অর্থ সহায়তা চেয়ে উপজেলা প্রশাসন বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, নদী ভাঙ্গণের বিষয়টি অবগত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে থেকে নদী ভাঙ্গণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।