২০২০ সালের মধ্যে ওই লক্ষ্য পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নিয়েছিল দলগুলো। লক্ষ্য পূরণে তাদের হাতে আছে আর চার বছর।
প্রতিশ্রুতি সময়ের বেশিরভাগ পেরিয়ে যাওয়ায় ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য নিশ্চিত করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দলের নির্বাচিত কমিটিতে নারী সদস্য অন্তর্ভুক্তির অগ্রগতি জানতে চাইছে ইসি।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের আগে সোমবার ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দলগুলোর অগ্রগতি কী- তা জানতে আমরা চিঠি দেব। কমিশনের বিবেচনার জন্য এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন হলেই দ্রুত সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের কাছে এ চিঠি যাবে।”
২০০৮ সালে নিবন্ধন চালুর পর দলগুলো গঠনতন্ত্রে সংশোধনী এনে নারী সদস্যদের এক-তৃতীয়াংশ পদে রাখার শর্ত ২০২০ সালের মধ্যে পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
এর মধ্যে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ দুইবার, বিএনপি একবার কাউন্সিল করলেও কমিটিতে নারী সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি প্রতিশ্রুতির কাছাকাছি পৌঁছেনি এখনও। অন্য দলগুলোর অবস্থাও একই।
কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন না হলেও দলগুলোর ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে বলে ইসি সচিব মনে করেন।
নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে গবেষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক ইমরান হোসেন ভুইয়া।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় পর্যায়ের উল্লেখযোগ্য কমিটিতে বড় তিন দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির গড়ে এখনও ১১ শতাংশ পদে নারী সদস্য নেই।
“২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয় রয়েছে। দলগুলোর কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কিছু নারী নেতৃত্ব থাকলেও তৃণমূলে এ দৃশ্য খুবই হতাশাজনক। আমরা চাই, তারা ইসির কাছে অঙ্গীকারাবদ্ধ থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাবে।”
কমিটিতে নারীর অবস্থান
ইমরান ভুঁইয়া বলেন, ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর ১২ জন সদস্যের মধ্যে নারী সদস্য রয়েছেন চারজন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির ১৩১ সদস্যর মধ্যে নারী সদস্য সাতজন এবং উপদেষ্টা পরিষদের ৩৪ জনের মধ্যে নারী সদস্য দুইজন।
শতকরা হিসাবে কমিটিতে নারী সদস্য ৭ দশমিক ৩৪। ক্ষমতাসীন দলের প্রেসিডিয়াস সদস্য পদে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য পূরণ হলেও অন্যান্য স্তরে তাদের হার লক্ষ্যমাত্রার অনেক কম।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বিভাগীয় উপ-সম্পাদকদের বাদ দিলে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৩।
কমিটিতে নারী সদস্যদের বিচারে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির কোনো স্তরেই ক্ষমতাসীন দলের মতো অবস্থান নেই।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে ৩৩ সদস্যর মধ্যে কোনো নারী নেই। জাতীয় স্থায়ী কমিটির ১৬ সদস্যের মধ্যে নারী দুজন এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ৩৮০ সদস্যর মধ্যে নারী ৪৬ জন। এই হিসাবে নারী সদস্য ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ।
জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর ৪১ সদস্যের মধ্যে চারজন এবং নির্বাহী কমিটির ৯৯ সদস্যর মধ্যে ছয়জন নারী। নারী সদস্যের হার ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
অগ্রগতির আশায় আ. লীগ-বিএনপি
৮ মার্চ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস সামনে রেখে সোমবার দলে নারীর ক্ষমতায়নের অগ্রগতি নিয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাফর উল্যাহর সঙ্গে।
তিনি বলেন, দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রা পূরণের দিকে এগোচ্ছে তারা।
“আমরা এগোচ্ছি; সব কমিটিতে নারী সদস্য রাখায় সবাই সচেতন। নীতিগতভাবে ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ টার্গেট পূরণ হবে আশা করি। সামনে কাউন্সিল রয়েছে, আরও কাউন্সিল হবে। সব পর্যায়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ইতিবাচক আমরা।”
নারীর ক্ষমতায়নের ধারা অব্যাহত রাখতে জাতীয় সংসদের মতো স্থানীয় নির্বাচনে নারী প্রার্থী দেওয়ার কথাও এসময় উল্লেখ করেন তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির মাহবুবুর রহমান বলেন, “এখনও অনেক সময় রয়েছে। আমরাও দলের সব কমিটিতে নারী অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আগের তুলনায় অনেক ইম্প্রুভ হয়েছে। সামনের কমিটিতে আরও দৃশ্যমান হবে আশা করি।”
দলগুলোর ইতিবাচক মনোভাবের কথা তুলে ধরে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন, যাদের কমিশনেই নিবন্ধন পদ্ধতি চালু হয়েছিল।
তিনি বলেন, “আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল নারীর ক্ষমতায়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। দলগুলো তাতে সাড়া দিচ্ছে, গঠনতন্ত্রে সংশোধনী এনে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছে।
“এখন ২০২০ সালে পূরণ করতে পারবে কি না তা-ই দেখার বিষয়। নেতৃত্বে ও ব্যক্তি হিসেবে রাজনীতিতে নারীরা এগিয়ে থাকলেও কমিটিতে তাদের সংখ্যা বাড়াতে হবে।”
ছহুল হোসাইন জানান, নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্যপূরণ করতে না পারলে নিবন্ধন বাতিলের মতো কোনো নির্দেশনাও আইনে বলা হয়নি। তবে আরপিও সংশোধন করে আবার সময় বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনার সুযোগ রয়েছে।
তার কথায় সমর্থন করেন ইসির আইন শাখার যুগ্ম সচিব মো. শাহজাহানও।
নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে দলগুলোর সদিচ্ছা থাকায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশা এ নির্বাচন কর্মকর্তার।